আবারও ‘দেয়ালের’ আড়ালে ভারত

‘দ্য ওয়াল’ নামটা তাঁর জন্য খুব মানিয়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, রাহুল দ্রাবিড়কে বলা যায় ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ত্রাণকর্তা’। কেন? একটু ফিরে তাকান নিকট অতীতে।
২০০৭ সালের অক্টোবর থেকেই ওয়ানডে দলের বাইরে দ্রাবিড়। এই যুগের ওয়ানডের জন্য ও অচল, প্রতিভাবান সব তরুণও উঠে আসছে—এই ছিল যুক্তি। কিন্তু ইংল্যান্ডে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শর্ট বলে রায়না-রোহিত-পাঠানদের কাঁপাকাঁপি দেখে ‘এসওএস’ পাঠানো হলো দ্রাবিড়কে। কারণ, সামনেই তখন শ্রীলঙ্কার ত্রিদেশীয় সিরিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। শ্রীলঙ্কায় ৩ ইনিংসে ১৪, ৪৭ ও ৩৯; দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭৬ ও ৪ করার পর আবার ছুঁড়ে ফেলা হলো।
এই সিরিজেই চোট আর পেসারদের বাজে বোলিংয়ে বল হাতে নিতে হল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। উইকেটকিপিং করবেন কে? দ্রাবিড় আছেন না!
প্রথম টেস্টে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেলেন ওপেনার গৌতম গম্ভীর। খুব গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু ঝুঁকি এড়াতে খেললেন না দ্বিতীয় টেস্ট। স্কোয়াডে বাড়তি ওপেনারও নেই। ওপেন করবেন কে? কেন, দ্রাবিড়!
ইংল্যান্ডের বাউন্স-সুইংয়ে দিশেহারা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বুক চিতিয়ে লড়েছেন কেবল দ্রাবিড়। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে কী হবে? বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দ্রাবিড়কে লাগেনি, কিন্তু ইংল্যান্ডের পরীক্ষায় দলকে পার করাবে কে? ফেরাও দ্রাবিড়কে!
বরাবরই আদর্শ ‘টিম ম্যান’, ছুড়ে ফেলার লজ্জা-অপমান ভুলে হাসিমুখে দ্রাবিড় জানালেন, ‘আমি প্রস্তুত।’ ‘প্রতিভাবান’ তরুণদের প্রবাহে যাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শোকগাথা লিখে ফেলা হয়েছিল অনেক আগেই, তাঁর গায়েই আবার চাপছে ভারতের রঙিন জার্সি। তবে সম্ভাব্য পরিণতিটাও হয়তো জানেন দ্রাবিড়, ইংল্যান্ড সিরিজের পরই আবার ফুরাবে তাঁর প্রয়োজন। আগেভাগেই তাই জানিয়ে দিয়েছেন, এই সিরিজই শেষ।
যথারীতি বিতর্কও কিছু হচ্ছে, ‘তারুণ্য ভান্ডার’ নিয়ে এত গর্ব ভারতের, হঠাৎ কেন প্রয়োজন পড়ল অচল একজনের? তা ছাড়া তরুণদের রণাঙ্গনে না পাঠালে ওরা যুদ্ধ করতে শিখবে কীভাবে! তবে টেস্ট সিরিজে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স দেখেই এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানোর লোক বেশি। যেমন ওয়াসিম আকরাম। চলতি সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক। তাঁর অভিমত, ‘দ্রাবিড়ের টেকনিক দুর্দান্ত, কঠিন উইকেটে ও বরাবরই কার্যকরী। এই দলে কেবল দ্রাবিড়ই ৫০ ওভার খেলতে পারে, এই মুহূর্তে ভারতের এমন একজনকেই প্রয়োজন। আমার মনে হয়, ভারতের নির্বাচকদের হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’
আকরাম আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘ওয়ানডে সিরিজে ভালো খেললে ওকে ওয়ানডে দলেও স্থায়ী করা উচিত। ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ও থাকবে না। কিন্তু যত দিন পারফর্ম করে, তত দিন খেলানো উচিত।’ নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে প্রধান নির্বাচক কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের যুক্তি, ‘ইংল্যান্ডের কন্ডিশন বিবেচনা করে আমরা দল নির্বাচন করেছি। অনেক ভেবেচিন্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং দল খুব ভালো হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.