টার্ফে শেওলা, হকিতেও!

মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের সবুজ অ্যাস্ট্রো টার্ফ দেখে চেনার উপায় নেই। টার্ফের ওপর থিকথিকে কাদা। শেওলা ধরেছে কোথাও কোথাও। টার্ফের মতোই যেন শেওলা ধরেছে হকি ফেডারেশনেও।
লিগ নেই, দলবদল নেই। খেলাধুলা বন্ধ। খেলোয়াড়েরা হতাশ। হকিস্টিক তুলে রেখে অনেকেই পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় আছেন অনেকে। জাতীয় দলের স্ট্রাইকার রাসেল মাহমুদ জিমি গার্মেন্টস ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ডিফেন্ডার আসাদুজ্জামান চন্দন। গোলরক্ষক জাহিদ হোসেন কোচিং করাচ্ছেন। গত এপ্রিলে অস্ট্রিয়ায় খেলতে যাওয়া কামরুজ্জামান, মামুনুর রহমান চয়ন, ইমরান হাসানরা আবারও বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চিন্তা মশিউর রহমান বিপ্লব, শেখ মোহাম্মদ নান্নুদের।
১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিভাগ হকি আগে নিয়মিত হলেও এখন আর মাঠে গড়ায় না। সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া প্রিমিয়ার ডিভিশন কখনোই ধারাবাহিক ছিল না। ১৩ বছরে লিগ হয়েছে ৭ বার। সর্বশেষ ২০০৮-এর খেলা হয়েছে ২০১০-এ। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ হচ্ছে না বলে প্রিমিয়ারও শুরু করা যাচ্ছে না। দারুণ এক অজুহাত ফেডারেশনের।
খেলা নেই বলে হতাশা প্রকাশ করলেন রাসেল মাহমুদ, ‘ফেডারেশন থেকে বলছে রোজার জন্য খেলা বন্ধ। কিন্তু রোজার মধ্যে তো অন্যান্য ফেডারেশনে খেলা হচ্ছে। সুপার কাপ ফুটবল হলো, হ্যান্ডবল হলো, ক্রিকেট হচ্ছে। কিন্তু হকিই হচ্ছে না। আমরা খুবই হতাশ। আমরা যদি উদ্যোগ নিয়ে কিছু করতে যাই, তাহলে ফেডারেশন আবারও হয়তো আমাদের নিষিদ্ধ করবে। সবাই আমাদের দুষবে, এতে হকিরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’ জার্মানির ক্লাব ডিএসডিতে খেলার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন ইমরান। জানালেন, ‘সুযোগ পেলেই বিদেশে খেলতে যাব। এখানে তো কোনো খেলা হচ্ছে না। ফেডারেশন আর ক্লাব কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের ভুক্তভোগী আমরা।’ চন্দন বললেন, ‘খেলা নেই, কী করব? হকিস্টিক জাদুঘরে রেখে দেওয়ার কথা চিন্তা করছি।’ মোহামেডানের হকি কমিটির চেয়ারম্যান সাজেদ আদেলের কথা, ‘এ দেশের হকি কোমায় চলে গেছে। তাকে লাইফসাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।’ আবাহনীর হকি কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ দোলন তাকিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রীর দিকে, ‘আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি। এখন যা অবস্থা, তাতে অদূর ভবিষ্যতে বলা হবে, বাংলাদেশে হকি বলে একটা খেলা ছিল। আমাদের শেষ ভরসা ক্রীড়ামন্ত্রী।’
তবে এত কিছুর পরও হকি মাঠেই আছে বলে দাবি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জামিল উদ্দিনের, ‘এই মাসে খেলা নেই কিন্তু আগামী অক্টোবরে যুব হকি হবে। এরপর জাতীয় হকি। সেপ্টেম্বরে হল্যান্ড থেকে আসবেন সাবেক ডাচ খেলোয়াড় বাইড বার্নিং। তাঁকে নিয়ে সারা দেশে কোচেস কোর্স করানো হবে।’ জানালেন, প্রথম বিভাগের দলবদলের তারিখও হয়ে গেছে— ১৩-১৫সেপ্টেম্বর। তাহলে লিগ কেন হচ্ছে না? ক্লাব কর্মকর্তাদের অসহযোগিতাই এর মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি, ‘লিগ চালাতে পারছি না, কারণ ক্লাবগুলো রাজি হচ্ছে না। তারা এখন বলে যে ঈদের পর ছাড়া খেলবে না। একেকবার একেক কথা বললে আমি কী করব? রোজার মধ্যে সব জায়গায় খেলা হচ্ছে, অথচ হকির বেলায় আপত্তি কেন?’

No comments

Powered by Blogger.