ঝড়-বৃষ্টি আর আলোহীন ফুটবল

বিদ্যুৎ কখন আসে কখন যায়—এমনিতেই কোনো হদিস নেই। এটা জানার পরও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন স্বাধীনতা কাপের দুটি ম্যাচই দিল ফ্লাডলাইটের আলোয়। ফিকশ্চারে একটি ম্যাচ ছিল দিনের আলোয়। কিন্তু দিনের গরমে খেলতে নাকি রাজি হয়নি মুক্তিযোদ্ধা-আরামবাগ! মিহি আলোয় খেলার আবদার মেটাতে বাধ্য হলো বাফুফে। দিনের দুটি ম্যাচই দুই স্টেডিয়ামে কৃত্রিম আলোয়!
কিন্তু কালবৈশাখী ঝড় তো আর অত কিছু বোঝে না। স্বাধীনতা কাপের সপ্তম দিনটাকে একেবারে লন্ডভন্ড করে ছাড়ল। রাত আটটা নাগাদ বঙ্গবন্ধু ও কমলাপুর স্টেডিয়ামে একই সঙ্গে শুরু ঝড়-বৃষ্টি। ঝড়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মিনিট দশেক বিদ্যুৎ ছিল না। কমলাপুর স্টেডিয়াম থাকল অন্ধকারেই। বিদ্যুতের দেখা মিলল না ৪০ মিনিটেও। শেষ পর্যন্ত ঝড়ের কবলে পড়া ওই স্টেডিয়ামের মুক্তিযোদ্ধা-আরামবাগ ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেন রেফারি।
ম্যাচটা আজ বিকেল সাড়ে চারটায় কমলাপুর স্টেডিয়ামেই আবার হবে। ফিকশ্চার মেনে কাল দিনের বেলা ম্যাচটা হয়ে গেলে এই অনাহূত সমস্যাটা এড়ানো যেত। কিন্তু এ দেশের ঘরোয়া ফুটবলে সকাল-বিকেল ফিকশ্চার বদলায়।
৬৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচটায় মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে ছিল ৩-০ গোলে। ঝড়-বৃষ্টির আগে রনি (দুটি) ও কাঞ্চন গোল করেছিলেন। এই জয়টা পেলে মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারত কালই। তবে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই বাংলাদেশ লিগের প্রথম পর্বের শীর্ষ দল মুক্তিযোদ্ধা উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
স্বাধীনতা কাপে আসলে চমক-টমক কিছু নেই। বড় দলগুলোর সবাই খেলছে কোয়ার্টার ফাইনালে। মাঠে দর্শকও নেই। বাফুফের প্রচার-প্রচারণায় মনোযোগী নয়। কোনো রকমে একটা টুর্নামেন্ট করার জন্যই করা!
তা-ও দিনে একটি ম্যাচ থাকলে সেটি রাতের আলোয় কেন দিতে হবে, কারোই বোধগম্য নয়। বাফুফের যুক্তি, রাতে খেলা হলে নাকি দর্শক বেশি আসে। এর কোনো প্রমাণ অবশ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
ওদিকে ঝড়-বৃষ্টিতে ৪২ মিনিট বন্ধ ছিল ঢাকা শেখ রাসেল-ঢাকা মোহামেডান ম্যাচ। তখন পর্যন্ত খেলা হয়েছে ৫৫ মিনিট। গোলশূন্য এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটা পরে একটা গোল দেখল। ব্রাদার্সে খেলে যাওয়া রাশিয়ান স্ট্রাইকার এডওয়ার্ড ৮৩ মিনিটে গোল করে জেতালেন শেখ রাসেলকে। তারুণ্যনির্ভর মোহামেডান যথেষ্ট ভালো ফুটবল খেলেও হার এড়াতে পারেনি।
‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো শেখ রাসেল। রানার্সআপ মোহামেডান। মজার ব্যাপার, এই গ্রুপের তৃতীয় দল চট্টগ্রাম আবাহনী শেষ সময়ে নাম প্রত্যাহার করায় বাকি দুই দলই কোনো ম্যাচ না খেলে উঠে যায় শেষ আটে।
কোয়ার্টার ফাইনাল শুরু আগামীকাল। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি চলতে থাকলে এই টুর্নামেন্টের ভাগ্যে কী আছে, বলা কঠিন। কালকের ঝড়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম লন্ডভন্ড। কদিন আগেই ৩৬ কোটি টাকায় সাজানো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের কাচ আলগা হয়ে গেল! বাফুফের এক কর্মী কাচ অনেকক্ষণ ধরে না রাখলে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ত!
ঝড় শুরু হতেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় স্টেডিয়ামটা হয়ে ওঠে প্রেতপুরি। এর মধ্যেই দুই তাঁবু উড়িয়ে নিয়ে অনেক দূরে আছড়ে ফেলল প্রচণ্ড বাতাস। এগুলো এত হালকাভাবে বসানো যে বাতাসের ধকল সামলানোর শক্তি নেই!

No comments

Powered by Blogger.