বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে ভর্তুকি চায় টেলিটক

ভর্তুকির টাকায় বকেয়া পড়ে থাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক অর্থাৎ রাজস্ব পরিশোধ করতে চায় সরকার মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড।
কিছুদিন আগে এই ভর্তুকি চেয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে টেলিটক।
এ ছাড়া সিমকার্ড বিক্রির বিপরীতে মূসক ও সম্পূরক শুল্কের বকেয়া নিয়ে টেলিটক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে মতবিরোধ চলছে।
এনবিআরের দাবি অনুযায়ী, বকেয়া মূসক ও সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ প্রায় ৬১ কোটি টাকা। আর টেলিটকের হিসাব অনুযায়ী এর পরিমাণ ৪৬ কোটি টাকা।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) মূসক শাখায় টেলিটক নিবন্ধিত। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা চিঠি দিয়ে বকেয়া পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছে এলটিইউ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টেলিটকের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বকেয়া রাজস্ব আদায়ে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫৬ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এলটিইউয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
প্রত্যুত্তরে ১৪ মার্চ টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান এক পত্রে এলটিইউ কমিশনারকে বকেয়া মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আদায় স্থগিত করার পাশাপাশি অন্যান্য আইনগত কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য আবেদন জানান।
চিঠিতে জানানো হয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে যেন সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটককে টিকিয়ে রাখার জন্য ভর্তুকি প্রদান করা হয়। ভর্তুকি প্রদানের ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সমুদয় অর্থ আদায়ের কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
দেশীয় মোবাইল কোম্পানি টেলিটককে টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশ রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই মোবাইল অপারেটরদের জন্য একটি সুসম প্রতিযোগিতার পরিবেশ। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটককে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে উদ্যোগ নিতে হবে। টেলিটকের বকেয়া রাজস্ব যাতে পুরোপুরি পরিশোধ করা সম্ভব হয় সে জন্য আমরা ভর্তুকি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।’ তিনি অবশ্য এও বলেন যে ভর্তুকি পাওয়া বেশ কঠিন।
টেলিটকের এমডি আরও বলেন, ‘এনবিআর একবার বলেছিল সিমকার্ডের ওপর মূসক দিতে হবে, আরেকবার বলেছিল দিতে হবে না। এসব কারণে সিমকার্ডের ওপর মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বকেয়া পড়ে গেছে। আমরা কিস্তিতে কিস্তিতে সব বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করতে চাই। এ জন্য আমাদের সময় দিতে হবে।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রদেয় রাজস্বের পরিমাণ ৭১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০১০ সালের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত টেলিটক পরিশোধ করেছে মাত্র ১০ কোটি টাকা। মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ বকেয়া পড়েছে প্রায় ৬১ কোটি টাকা।
কিন্তু টেলিটক এই হিসাব মানতে নারাজ। তারা এনবিআরের হিসাব সংশোধন করার অনুরোধ করেছে। টেলিটকের দাবি, এনবিআর তাদের কাছে মূসক বাবদ পাওনা রয়েছে ৬০ কোটি ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৮০০ টাকা। আর টেলিটক ৩ মার্চ পর্যন্ত পরিশোধ করেছে ১৪ কোটি ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে টেলিটকের বকেয়ার পরিমাণ ৪৬ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার ৮০০ টাকা। টেলিটকের পক্ষ থেকে নতুন এই হিসাব সমন্বয় করার অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আয়কর বিবরণী দাখিলের মাধ্যমে সিমকার্ডের ওপর মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ প্রতিমাসে গড়ে দেড় কোটি টাকা পরিশোধ করে থাকে টেলিটক। সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়।
এলটিইউয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নিয়মিত না হলেও বিলম্বিত পরিশোধের (ডেফার্ড পেমেন্ট) মাধ্যমে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকেই রাজস্ব দিতে হয়। সেই হিসেবে টেলিটককেও বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে।
২০০৪ সালে সিমকার্ডের ওপর করারোপ করে এনবিআর। প্রথমে প্রতিটি সিমকার্ড বিক্রির ওপর এক হাজার ৩০০ টাকা মূসক নির্ধারণ করা হয়। পরে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে ৮০০ টাকায় আনা হয়।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত টেলিটকের সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা ১২ লাখ ১৬ হাজার। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড একমাত্র শতভাগ দেশীয় মালিকানার মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

No comments

Powered by Blogger.