চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র

গত কয়েক বছরে গোপন ‘তারকা যুদ্ধ’-এর মাধ্যমে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামার অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া গোপন কূটনৈতিক নথির ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা।
গোপন নথি থেকে দেখা গেছে, পরমাণু শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—দুই দেশই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের কৃত্রিম আবহাওয়া উপগ্রহ (ওয়েদার স্যাটেলাইট) ধ্বংস করেছিল।
চীনের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র এতটাই ক্রুদ্ধ হয়েছিল যে চীন যদি ‘তারকা যুদ্ধ’-এর নামে অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে বিরত না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন হুমকিতে বিরত হয়নি চীন। সর্বশেষ গত বছরও তারা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে উপগ্রহ ধ্বংস পরীক্ষা চালায়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আবারও এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
চীন পাল্টা অভিযোগের মাধ্যমে মার্কিন বিরোধিতার জবাব দেয়। চীন অভিযোগ করে, যুক্তরাষ্ট্র লেজার অস্ত্র ব্যবস্থার উন্নতি করছে, যা শত্রু কোনো দেশ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধ্বংস করে ফেলতে পারবে।
তারকা যুদ্ধের অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে। ওই সময় চীন তাদের নিজেদের একটি আবহাওয়া উপগ্রহ ভূমি থেকে ৫৩০ মাইল ওপরে ধ্বংস করে দেয় ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, চীন মহাকাশে মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক উপগ্রহ ধ্বংস করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
ওই ঘটনার এক বছর পর ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষামূলকভাবে মহাশূন্যে তাদের বিগড়ে যাওয়া একটি উপগ্রহ ধ্বংস করে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে। এতে করে চীনের কাছে মনে হয়, মহাকাশে আক্রমণ করার মতো সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রেরও আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ওই সময় দাবি করেছিল, তাদের ওই গোয়েন্দা উপগ্রহটিতে কিছু ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটিকে ধ্বংস করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এর পেছনে কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই।
তবে দুই দেশের ওইসব কর্মকাণ্ডের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানা গেছে ফাঁস হয়ে যাওয়া গোপন নথি থেকে। দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরীক্ষার এক মাস আগে চীনের উপগ্রহ বিধ্বংসী পরীক্ষার সমালোচনা করে বলেছিল, ‘চীন ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে উপগ্রহ ধ্বংস করায় মহাকাশ-ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করে থাকে। মার্কিন মহাকাশ-ব্যবস্থায় উদ্দেশ্যমূলক কোনো হস্তক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের অধিকারের লঙ্ঘন ও সংকট বা সংঘাত বৃদ্ধি বলেই বিবেচনা করবে। জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের এই অধিকার আছে এবং নিজেদের মহাকাশ-ব্যবস্থাকে রক্ষায় কূটনৈতিক থেকে শুরু করে সামরিক সব পদক্ষেপই বিবেচনা করা হবে।’
গোপন নথিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের উপগ্রহ ধ্বংসের পেছনে সামরিক কোনো উদ্দেশ্য নেই বলে প্রকাশ্যে দাবি করলেও মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আসলে তা সামরিকই ছিল। ওই পরীক্ষার পরপরই ওয়াশিংটন থেকে বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসে একটি বার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তায় নিশ্চিত করা হয়, প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ড থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সফল হয়েছে।
ওই পরীক্ষার পর আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা নিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ফাঁস হওয়া কূটনৈতিক নথি থেকে দেখা যায়, জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী রাডার স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন চীন।
এসব বিষয়ে ফাঁস হওয়া সর্বশেষ নথিটি ২০১০ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের দপ্তর থেকে পাঠানো হয় বেইজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসে। এতে দাবি করা হয়, চীন নতুন করে উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।

No comments

Powered by Blogger.