সাহিত্যালোচনা- গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ by হাসান ফেরদৌস

গীতাঞ্জলির অনুবাদে চার্লস এন্ড্রুজের কোনো ভূমিকা ছিল না, এ কথা সত্যি। তবে এ কথাও ঠিক, শান্তিনিকেতনে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি অনুবাদ সম্পাদনায় তিনি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। কবির অনেক ইংরেজ বন্ধু, যাঁরা এন্ড্রুজের সাহিত্যবোধের ওপর মোটেই আস্থাবান ছিলেন না, তাঁরা এই প্রভাব মোটেই ভালো চোখে দেখেননি। ব্রিটিশ ধর্মযাজক চার্লস এন্ড্রুজ প্রথম ভারতে আসেন ১৯০৪ সালে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের শিক্ষক হিসেবে।
রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচিত হলেও কবির সঙ্গে তাঁর প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় ১৯১২ সালে, কবির ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময়। ৩ জুলাই রটেনস্টাইনের হ্যাম্পস্টেডের বাসায় যে সাহিত্য আসর বসে, যেখানে কবি ইয়েটস রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি থেকে গোটাকয় কবিতা পাঠ করে শোনান; এন্ড্রুজও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেই সাক্ষাতের বিবরণ এন্ড্রুজ নিজেই দিয়েছেন মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে:
‘একজন লম্বা-পাতলা মানুষ আমার দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছেন, তা আমি টের পেয়েছিলাম। ইনি যে রবীন্দ্র বাবু, যার ছবির সঙ্গে আমি আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম, তাঁর কান্তিমান চেহারা দেখেই আমি বুঝেছিলাম। আমি তাঁকে প্রণাম জানাতে যাবার আগেই তিনি আমার হাত দুখানি নিজের হাতে নিয়ে বললেন, “মি. এন্ড্রুজ, আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আমি দীর্ঘদিন থেকে প্রতীক্ষা করছি। আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না, আপনাকে দেখার জন্য আমি কী রকম ব্যাকুল ছিলাম”।’
সেই আসরে ইয়েটসের কণ্ঠে গীতাঞ্জলি থেকে আবৃত্তি শুনে এন্ড্রুজ প্রবল রকম আলোড়িত হয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা বিবৃত করতে গিয়ে তিনি লেখেন:
‘জানালার ধারে আমি বসে ছিলাম। সেই দীর্ঘ গ্রীষ্ম সন্ধ্যার ম্লান আলোয় ইয়েটস রবীন্দ্রনাথের কবিতা একের পর এক পড়ে গেলেন। বাইরে ব্যস্ত-সমস্ত মানুষের ভিড়। আর এ ঘরের ভেতরে আমরা শুনছিলাম (বাঙালি কবির) হূদয়-মথিত একটি সহজিয়া বাণী। গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে উচ্চারিত সেই বাণী ছিল বিপন্ন এই পৃথিবীর জন্য শান্তির প্রলেপ।’
(হিউ টিঙ্কার, দি অরডিল অব লাভ: সি এফ এন্ড্রুজ অ্যান্ড ইন্ডিয়া, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৯, পৃ. ৫৬-৫৭-এ উদ্ধৃত)
আজীবন স্থায়ী এক বন্ধুত্বের সেই শুরু। গীতাঞ্জলির অনুবাদে যে এন্ড্রুজের কোনো ভূমিকা ছিল না, এই ঘটনা থেকে তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত। তবে এ কথাও ঠিক, প্রথম পরিচয়ের সময় থেকেই এন্ড্রুজ রবীন্দ্রনাথের কবিতা অনুবাদের সম্পাদনায় সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। রবীন্দ্রনাথ বরাবর বলে এসেছেন, ভালো ইংরেজ কবির হাত দিয়ে সম্পাদনার কাজ তিনি সারতে চান। এটা কিছুটা বিস্ময়কর যে এন্ড্রুজের কাব্যবিষয়ক কোনো প্রমাণিত জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তিনি এই স্বল্প পরিচিত ইংরেজের ওপর এত সহজে এতটা নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। এর একটা কারণ সম্ভবত এই যে এন্ড্রুজের ভারত-প্রীতি ও তাঁর প্রতি নিঃস্বার্থ মনোভাব বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহ ছিলেন। যে কথা ইয়েটস বা পাউন্ড কারও সম্বন্ধেই বলা যায় না। এন্ড্রুজ যে খ্রিষ্ট ধর্মতত্ত্বে বিশ্বাস করতেন, যা প্রথাগত খ্রিষ্টধর্ম থেকে কিছুটা হলেও আলাদা ছিল, তাও হয়তো কবিগুরুকে আকৃষ্ট করেছিল। এন্ড্রুজ ভারতে এবং আফ্রিকায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের তীব্র বিরোধিতা করেন। এন্ড্রুজ যার সদস্য ছিলেন, ঔপনিবেশিকতার প্রশ্নে সেই অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান অনেক বেশি আপসমূলক থাকায় তিনি পরে এই চার্চ থেকে বেরিয়ে আসেন।
রটেনস্টাইনের বাসায় প্রথম সাক্ষাতের অব্যবহিত পরে রবীন্দ্রনাথের সাউথ কেনসিংটনের ভাড়াটে বাসায় এন্ড্রুজ ইয়েটস সম্পাদিত গীতাঞ্জলি ও তাঁর লেখা এক দীর্ঘ ভূমিকা পড়ার সুযোগ পান। ইন্ডিয়া সোসাইটি গীতাঞ্জলির প্রুফ কপি পাঠিয়েছিলেন কবির কাছে তাঁর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। কবি সেই সময় এন্ড্রুজকে তার প্রুফ পড়ে দেখার অনুরোধ করেন। ইয়েটস সে বইয়ের জন্য যে সুপরিচিত ভূমিকাটি লেখেন, এন্ড্রুজ তার কোনো কোনো বাক্যের বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানান। এ নিয়ে রটেনস্টাইনের কাছে এক পত্রে তিনি এই বলে অনুযোগ করেন, ভূমিকাটি রবীন্দ্রনাথের কবিতার জন্য যথাযোগ্য হয়নি। শেষ পর্যন্ত এন্ড্রুজের দাবি মেনে গীতাঞ্জলির ভূমিকা থেকে আপত্তিকর একটি লাইন বাদ দেওয়া হয়। এন্ড্রুজ গীতাঞ্জলির ৫২ সংখ্যক কবিতার কিছু কিছু শব্দেও আপত্তি তোলেন। রবীন্দ্রনাথ কিছুটা নিরুপায় হয়েই সেই পরিবর্তনে সায় দেন, কিন্তু পরে এ নিয়ে ইয়েটস তাঁর ঘোর আপত্তি জানালে তিনি কার্যত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ম্যাকমিলান সংস্করণে প্রয়োজনমতো পুনঃসংশোধনের জন্য ইয়েটসের কাছে সানুনয় অনুরোধ জানান। ১৯১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ক্রুদ্ধ ইয়েটসের কাছে এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লেখেন:
‘আপনাদের ভাষার গুণাগুণ বিচারে আমি সম্পূর্ণ অক্ষম। মি. এন্ড্রুজ এই পরিবর্তনের জন্য যেভাবে চাপাচাপি করেন তার ফলে স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে আমি তাতে সম্মত হই। আমার আশা, গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণের সময় আপনি কষ্ট করে ফের প্রুফ দেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে যা গ্রহণ-বর্জন করা দরকার, তা নিশ্চিত করবেন।’
(দ্য জার্নাল অব দ্য হিউম্যানিটিজ, ভলিউম ৪, সংখ্যা ৯, পৃ. ২২৮-এ উদ্ধৃত)
সে বছর শেষ না হতেই এন্ড্রুজ শান্তিনিকেতনে যোগ দেন, প্রথমে একজন মান্যবর অতিথি, পরে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে। গোড়া থেকেই তাঁর অনুবাদের চূড়ান্ত সম্পাদনার কাজে এন্ড্রুজের পরামর্শ মেনে চলতেন রবীন্দ্রনাথ। ম্যাকমিলানের সঙ্গে বই প্রকাশনা নিয়ে দেনদরবারের দায়িত্বও অনেকটা বর্তায় এন্ড্রুজের ওপর। তাঁর বাংলা জ্ঞান ছিল নামমাত্র। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাছে তাঁর অনুবাদের সম্পাদনায় এটাই ছিল সর্বোত্তম পথ—ইংরেজি ভাষান্তর করবেন তিনি নিজে আর এন্ড্রুজ সেই ভাষান্তরের গঠনগত কোনো পরিবর্তন না করে শুধু ব্যাকরণ ও ভাষাতাত্ত্বিক শুদ্ধতা নিশ্চিত করবেন। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, সম্পাদক মূল ভাষা (অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে বাংলা) যত কম জানবেন, অনূদিত কবিতা তত বেশি অক্ষত থাকবে। এন্ড্রুজের ওপর তাঁর এই নির্ভরতা নিয়ে পরবর্তীকালে অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মতান্তর ঘটে। তিনি এই পরোপকারী ইংরেজ বন্ধুটির ওপর কতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন, তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে গীতাঞ্জলির ৬৭ সংখ্যক কবিতার পুনঃসম্পাদনা নিয়ে ইংরেজ রাজকবি রবার্ট ব্রিজেসের সঙ্গে বাগিবতণ্ডায়।
শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় এন্ড্রুজের বর্ধিত ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ এই ইংরেজ যাজকের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হারাননি। এন্ড্রুজের রাজনৈতিক অবস্থানও তাঁকে রবীন্দ্রনাথের নিকটবর্তী করে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফিজিতে ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য ছিল। এন্ড্রুজ ভারতের একাধিক বড়লাটের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিলেন এবং কখনো কখনো ভারতীয় রাজনীতিক ও ঔপনিবেশিক অধিকর্তাদের মধ্যে যোগ্যসূত্র হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪০ সালের ৫ এপ্রিল আকস্মিকভাবে দেহ ত্যাগ করেন এন্ড্রুজ। একই দিন শান্তিনিকেতনের মন্দিরে এক প্রার্থনা তথা শোকসভায় রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘খ্রিষ্টধর্মের এমন উজ্জীবন (ট্রায়াম্ফ) আমি অন্য কারো মধ্যে দেখিনি। তাঁর আত্মত্যাগ, নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে সমর্পণের ক্ষমতা, আমাদের মনে চিরজাগরূক হয়ে থাকবে।’
নিজের ৮০তম জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ পুনরায় ফিরে যান তাঁর বন্ধু চার্লি এন্ড্রুজের স্মৃতিতে:
‘এন্ড্রুজের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঋণী। আমার পরিণত বয়সে ইংরেজ জাতির জন্য শ্রদ্ধাবোধ রক্ষায় তিনি আমাকে সাহায্য করেন—যে শ্রদ্ধাবোধ থেকে আমি একসময় তাঁদের সাহিত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, কিন্তু (শেষ বয়সে) তা আমি হারাতে বসেছিলাম। এন্ড্রুজের স্মৃতির মাধ্যমে তাঁর স্বজাতির অন্তর্গত মহত্ত্বের স্মৃতি আমার মনে জাগরূক থাকবে। এন্ড্রুজ এবং তাঁর মতো (গুটিকয়) ইংরেজ শুধু আমার ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতম বন্ধুই ছিলেন না, তাঁরা সমগ্র বিশ্ববাসীরই বন্ধু ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারা আমার জন্য এক গভীর পাথেয়। তাঁরা আমাকে এই বিশ্বাসবোধে উজ্জীবিত করেছেন যে এই রকম ইংরেজ আরও থেকে থাকলে তাঁরাই ইংরেজ জাতিকে তাদের জাহাজডুবি থেকে উদ্ধার করবেন, তাদের সম্মান পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবেন। তাদের সঙ্গে পরিচিত না হলে পশ্চিমাসমূহের জাতির প্রতি আমার গভীর শঙ্কা কোনোভাবেই দূর হতো না।’
==========================
গল্প- তেঁতুল  একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা  গল্প- বট মানে গরুর ভুঁড়ি  গল্প- কিশলয়ের জন্মমৃত্যু  গল্প- মাকড়সা  দুর্নীতি প্রতিরোধে আশার আলো  জাগো যুববন্ধুরা, মুক্তির সংগ্রামে  ঢাকা নগর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন প্রয়োজন  মারিও বার্গাস য়োসার নোবেল ভাষণ- পঠন ও কাহিনীর নান্দীপাঠ  লন্ডন পুলিশ জলকামানও নিল না  রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের দায়বদ্ধতা  পোশাক শিল্পে অস্থিরতার উৎস-সন্ধান সূত্র  বাতাসের শব্দ  গোলাপি গল্প  বজ্র অটুঁনি অথবাঃ  উদ্ভট উটের পিঠে আইভরি কোস্ট  আনল বয়ে কোন বারতা!  ফেলানীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ- নিজ ভূমেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের মানবিক চেহারা  বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে  উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব  বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর  স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা  আতঙ্কে শেয়ারবাজার বন্ধঃ বিক্ষোভ  আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে  মানবকল্যাণ আমাদের মন্ত্র  ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ হাসান ফেরদৌস
(ই জে টমসন, রবীন্দ্রনাথ টেগোর, হিজ লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ক, অ্যাসোসিয়েশন প্রেস, কলকাতা, ১৯২২, পৃ. ২৮১)
[একটি অধ্যায়]


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.