বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি by বিশ্বজিৎ ঘোষ

নাতন ভাবনা আর প্রচল সংস্কৃতির ঘেরাটোপে বন্দি আমরা। যা চলছে, যেভাবে চলছে, তা মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে থাকে সাধারণ মানুষ। মধ্যস্তরের মানুষও মূলত প্রচল সংস্কৃতির উপাসক। ব্যতিক্রম যে নেই, তা বলা যাবে না। তবে সাধারণ অর্থে উপযুক্ত ভাষ্যই সহজাত প্রবণতা। কিন্তু সনাতন ভাবনা আর প্রচল সংস্কৃতি থেকে কি নতুন ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতির
কথা আমরা ভাববো না? বন্দি থাকবো কি একই ভাবনায়, অবিচল নিষ্ঠায় কি আঁকড়ে থাকবো গতানুগতিক সংস্কৃতিকে? প্রগতির ধারায় নিজেদের সংযুক্ত করতে চাইলে আজ প্রয়োজন নতুন ভাবনা, নতুন সংস্কৃতির। একালে সংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি নগরবাসী উচ্চবিত্ত মানুষের বিনোদনের নানামাত্রিক উপাচারকে। সেসব উপাচার কখনো পাওয়া যায় আর্মি স্টেডিয়ামে, কখনো চারকোনা রঙিন বাক্সে। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, এই সংস্কৃতির ধারক-বাহক এবং লালনকর্তা হচ্ছে উচ্চবিত্ত কোনো গোষ্ঠী কিংবা কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রের মানুষ আর তার সংস্কৃতি বিলাসই সেখানে প্রাধান্য পায়_প্রান্ত থাকে উপেক্ষিত। বৃহৎ প্রান্তকে বর্জন বা উপেক্ষা করে করে যে জগাখিচুড়ি সংস্কৃতি আমরা তৈরি করেছি, তা আমাদের ভুলতে শেখায় নিজের মৃত্তিকাকে, নিজের ঐতিহ্যকে, আপন অস্তিত্বকে। সেই ১৮৩৫ সালে লর্ড মেকলে যে উদ্দেশ্যে এদেশের শিক্ষিতজনকে গড়তে চেয়েছিলেন, প্রকৃত প্রস্তাবে আমরা এখনো সেখানেই পড়ে আছি।
শৈশব থেকেই আমাদের সনাতন ভাবনার পথে থাকতে উপদেশ দেয়া হয়, যা প্রচল তা মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। সনাতনের সবকিছু বদলাতে হবে, তা নয়; তবু নতুন ভাবনা নতুন মূল্যচেতনা ছাড়া আমরা সামনের দিকে যাব কিভাবে? পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, আমাদের অবশ্যই নব প্রতিনব ভাবনায় জাগ্রত হতে হবে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে সৃষ্ট নতুন নতুন জ্ঞানকে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, গ্রহণ করতে হবে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারকে। বদ্ধ কুয়োয় দিনযাপন মানে নিজেকে পিছিয়ে রাখা। তাই আমাদের পৃথিবীটাকে বড় করতে হবে, অনেক বড়। ঘরকে পৃথিবী করবো - পৃথিবীকে ঘর। এই অঙ্গীকার ছাড়া একালে সামনের দিকে যাবো কী ভাবে?
প্রগতির পথে সামিল হতে হলে নতুন শিক্ষায় আমাদের জাগ্রত হতেই হবে। শিক্ষা যে ক্রমে পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে, এ প্রবণতা বন্ধ করা ছাড়া আমাদের বিকাশের কোনো উপায় নেই। শিক্ষাকে প্রযুক্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ বান্ধব জ্ঞান আহরণের জন্য শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষাথর্ীদের বানানো ইতিহাস নয়, মানুষের অগ্রযাত্রার প্রকৃত ইতিহাস শিখাতে হবে।
আমাদের ভাবনায় প্রান্তিক নিম্নবর্গের মানুষের মতো আদি নৃগোষ্ঠীর মানুষদেরও আমরা অবহেলা বা উপেক্ষা করে চলেছি। 'উপজাতি' আখ্যা দিয়ে তাদের অপমানিত করেছি। বিশেষ দিনে তাদের প্রতি ভালোবাসার ঢল দেখা গেলেও, পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায়। আদি নৃগোষ্ঠী মানুষদের নিয়ে একদল গবেষক তো ভালো একটা বাণিজ্যেরও খাত আবিষ্কার করে নিয়েছে। কিন্তু প্রগতির ধারা কি আদৌ সূচিত হয়েছে?
আমাদের সাহিত্যের প্রধান জায়গা দখল করে আছে মধ্যবিত্ত জীবন। মধ্যবিত্তের নানামাত্রিক প্রেমবিলাসই আমাদের গল্প-উপন্যাস-নাটকের প্রধান শিল্প-উপাদান। খেটে-খাওয়া নিম্নবর্গের মানুষ সেখানে অনুপস্থিত বললেই চলে। আমাদের চলচ্চিত্র কিংবা টিভি নাটকেও দেখা যায় ওই মধ্যবিত্ত জীবনেরই নানামাত্রিক বিলাস আর অসঙ্গতির ছবি। তলেরও তলে (নড়ঃড়স ড়ভ ঃযব নড়ঃড়স) আছে যে মানুষ, তাদের কথা আমাদের শিল্পমাধ্যমগুলো ধারণ করতে বড়ই কৃপণ।
সামূহিক এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আর পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি। বিচ্ছেদ ও বিচ্ছিন্নতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের সন্ধান করতে হবে সংযোগের সংস্কৃতি - একলা আমির বন্ধন ছিঁড়ে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে বহু আমির প্রাঙ্গণে। সেজন্য চাই সাহস, চাই আত্মশক্তি, চাই ইতিবাচক জীবনদৃষ্টি, চাই ভুবনজয়ী বিশ্ববীক্ষা। প্রান্তিক মানুষ আমাদের ভাবনায় জাগ্রত হোক, নিম্নবর্গের মানুষদের জন্য আমাদের সংস্কৃতি কাজ করুক - এই হোক আমাদের আজকের অঙ্গীকার।
================================
অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর  স্বাধীনতাযুদ্ধের 'বিস্মৃত' কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধারা  আতঙ্কে শেয়ারবাজার বন্ধঃ বিক্ষোভ  আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম হয়েছে  মানবকল্যাণ আমাদের মন্ত্র  ট্রানজিট নিয়ে সবে গবেষণা শুরু  ভারতের একতরফা সেচ প্রকল্পঃ বাংলাদেশের আপত্তিতে বিশ্বব্যাংকের সাড়া  আমলাদের যাচ্ছেতাই বিদেশ সফর  সরকারের ব্যর্থতায় হতাশাঃ বিরোধী দলের ব্যর্থতায় বিকল্পের অনুপস্থিতি  ক্ষমতা ও গণতন্ত্র  পানি সংকট পানি বাণিজ্য  ২০১০ সালের অর্থনীতি কেমন গেল  গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে বাধা অনেক  কপাটে তালা দিয়ে কেন এই মৃতু্যর আয়োজন  বিজয়ের অর্থনীতি ও সম্ভাবনা  মুক্তিযুদ্ধের বিজয়লক্ষ্মীর মুখোমুখি  একেই কি বলে আমলাতন্ত্র?  আত্মসমর্পণের সেই বিকেল  আমরা তাঁদের ভুলতে পারি না  সংবিধানের অনেক বক্তব্য পারস্পরিক সংঘাতমূলক  পরাশক্তির বিরুদ্ধে এক ‘ভবঘুরের’ স্পর্ধা  আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণ দেওয়া হলো না  শুভ নববর্ষ ২০১১- দিনে দিনে বর্ষ হলো গত  এরশাদের বিচারে দুই দলেরই আগ্রহ কম  কিশোরদের সাদামাটা ফল




দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ
অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.