ট্রানজিট বিধিমালা প্রণয়নে চারটি কার্যপরিধি নির্ধারণ

পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট বিধিমালা তৈরি করতে চারটি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো: ট্রানজিট রুটসমূহ চিহ্নিতকরণ, অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও পুনরুদ্ধার, ট্রানজিট মাশুল এবং ট্রানজিটের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ।
এসব কার্যপরিধি নিয়ে কাজ করতে চারটি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে। উপকমিটিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে চলতি মাসের মধ্যে একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হবে।
গতকাল সোমবার ট্যারিফ কমিশনে ট্রানজিট-সংক্রান্ত কোর গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ও কোর গ্রুপের সভাপতি মজিবুর রহমান। এতে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে ট্রানজিট কাঠামো সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, ট্রানজিট-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ বিধিমালা তৈরির সুবিধার্থে একটি সামগ্রিক প্রতিবেদন তৈরির জন্য ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে এই কোর গ্রুপ গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
চলতি মাসের মধ্যে এই কোর গ্রুপকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনের ওপর কর্মশালা ও জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এরপর পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট বিধিমালা তৈরি করা হবে।
গতকালের বৈঠকে কোর গ্রুপের কাজ ভাগ করে চারটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ রহমতউল্লাহকে রুট নির্ধারণ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত উপকমিটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সদস্য (শুল্ক) হুসেইন আহমেদকে ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণসংক্রান্ত উপকমিটি, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানকে বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলের ট্রানজিট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণসংক্রান্ত উপকমিটি এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সাদিক আহমেদকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসংক্রান্ত উপকমিটির প্রধান করা হয়েছে।
এসব কমিটিকে ১৫ ও ২২ ডিসেম্বর বৈঠক করে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপকমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বিশ্লেষণ করে একটি সামগ্রিক প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
বৈঠক শেষে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে পুরো প্রতিবেদনটি তৈরি করতে পারব। তাই উপকমিটিগুলোকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।’
মজিবুর রহমান আরও জানান, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ও ট্রানজিট মাশুল। দেশের জন্য যা লাভ হবে, তা-ই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে।
ট্রানজিট মাশুলসংক্রান্ত উপকমিটি পণ্য পরিবহন, ট্রানজিট ও অন্যান্য মাশুল, নিরাপত্তা, চোরাচালান, দুর্ঘটনা, আইনগত জটিলতা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ট্রানজিট-সংক্রান্ত বিষয়াবলি নিয়ে কাজ করবে।
ট্রানজিট রুট চিহ্নিতকরণ, অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও পুনরুদ্ধারসংক্রান্ত উপকমিটি বিদ্যমান ট্রানজিট রুটসমূহের অবস্থা মূল্যায়ন করবে। এ ছাড়া নতুন রুট নির্ধারণের পাশাপাশি পুরোনো রুটগুলো দিয়ে ব্যাপক মাত্রায় পণ্য পরিবহন উপযোগী করতে কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে, তার হিসাব-নিকাশ করবে এই উপকমিটি।
এ ছাড়া এসব ট্রানজিট রুট রক্ষণাবেক্ষণে মাশুল নির্ধারণ করা হবে। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করে কত দিনে তা উঠে আসবে, তার একটি ধারণা দিতে বলা হয়েছে এই উপকমিটিকে।
এ ছাড়া আরেকটি উপকমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ও অঞ্চলের ট্রানজিট মাশুল, অবকাঠামো, আইনসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের। এই উপকমিটি এসব তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করবে।
এই তিনটি উপকমিটির সুপারিশগুলোকে বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ট্রানজিট কতটা লাভজনক হবে, তার একটি ধারণাপত্র তৈরি করবে সাদিক আহমেদের নেতৃত্বে থাকা উপকমিটি। এই উপকমিটি মূলত সবশেষে কাজ শুরু করবে।
তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া কোর গ্রুপের একজন সদস্য প্রথম আলোকে জানান, এত অল্প সময়ে ট্রানজিটের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিবেদন তৈরি করা বেশ দুরূহ। কয়েক মাস সময় পাওয়া গেলে নিখুঁত প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব হতো।

No comments

Powered by Blogger.