প্রকৃতি- কোপেনহেগেন থেকে কানকুনঃ সময় এসেছে মুহূর্তটিকে কাজে লাগানোর by জেমস এফ মরিয়ার্টি

বিশ্বজুড়ে আমরা ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রত্যক্ষ করছি, যার প্রভাবে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি, হিমবাহ গলনাঙ্কের নিচে নামা থেকে শুরু করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়িত খরা মৌসুম উল্লেখযোগ্য। আমাদের এ গ্রহে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আরো ত্বরান্বিত হবে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য জোর তৎপরতা না দেখায়। মেঙ্েিকাতে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন একটি সুযোগ এনে দিচ্ছে এ ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করার, আমাদের অবশ্যই সম্মিলিতভাবে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উচিত। এই বৈশ্বিক পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং আমাদের অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।
গত বছরের কোপেনহেগেনে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছিলাম, এবার আমাদের তা অবশ্যই আরো এগিয়ে নিতে হবে কানকুনে। তখনকার আলোচনার মূল বিষয়গুলোর অসমাপ্ত আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, গৃহীত কর্মসূচির স্ব্বচ্ছতা বজায়, অর্থায়ন, অভিযোজন, প্রযুক্তি ও আমাদের বন সংরক্ষণ। এসব বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ ফলাফল খুঁজতে চেষ্টা করার পাশাপাশি আমাদের কোপেনহেগেনের অর্জনকেও গুরুত্ব দিতে হবে, যেখানে সারা বিশ্বের নেতারা এক হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং একযোগে কাজ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হন। 'কোপেনহেগেন চুক্তি'র সংকল্প থেকে দূরে সরে আসা কিংবা এর মূল বিষয়গুলো নিয়ে আবার দর কষাকষি করতে থাকলে তা আমাদের পৃথিবী, আমাদের জনগণ ও আমাদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে।
'কোপেনহেগেন চুক্তি' অনুযায়ী, যা বাংলাদেশসহ প্রায় ১৪০টি দেশ সমর্থন করেছে, এবারই প্রথম সব প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড বজায় রেখে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে কাজ করার জন্য অঙ্গীকার করেছে। এ চুক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সাহায্য যা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়নে, অভিযোজনে ও বন সংরক্ষণে ব্যয় করা হবে। শর্তানুযায়ী, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও স্বচ্ছতার প্রেক্ষাপটে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উন্নত দেশগুলো ২০১০-১২ এর মধ্যে তিন হাজার কোটি ডলার অর্থায়ন করবে এবং ২০২০ সাল নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এ বছরেই যুক্তরাষ্ট্র এ খাতে অর্থায়নের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৭০ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে, যার মধ্যে ১৩০ কোটি ডলার হলো কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত সহায়তা এবং ৪০ কোটি ডলার হলো উন্নয়ন সহায়তা ও রপ্তানি ঋণ।
যুক্তরাষ্ট্র নিজের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে এবং একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার 'রিকভারি অ্যাক্ট' এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ ও প্রণোদনা প্যাকেজ ও বিনিয়োগের মতো বিভিন্ন উদ্যোগে আট হাজার কোটি ডলারেরও অধিক অর্থ প্রদান করেছে। আমরা এ যাবৎ সর্বাধিক উচ্চাভিলাষী যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি অর্থনীতি ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে 'টেইলপাইপ' মান নির্ধারণ করেছি। আমরা আমাদের সর্বাধিক দূষণের উৎসগুলো থেকে নিঃসরণ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। আর প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘরোয়া জ্বালানি (ডমেস্টিক এনার্জি) ও জলবায়ু আইন পাসের জন্য এখনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জনগণের সঙ্গে যখন আমার বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়, তখন সেই আলাপচারিতায় প্রায়ই তারা পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সম্ভাব্য হুমকি ও এর সমসাময়িক প্রভাবগুলো সম্বন্ধে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে। আমেরিকানরাও এ উদ্বেগের অংশীদার। তবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে_এমন একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসারের জন্য এখানে এবং বিশ্বব্যাপী যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে, তা দেখে আমি উৎসাহিত বোধ করছি। কোনো রাষ্ট্রই যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত নয়, তেমনি কোনো একটি রাষ্ট্র এককভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিগুলো ও তা রোধের প্রচেষ্টা প্রতিটি দেশের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ এবং এ বাধাগুলো আমাদের অতিক্রম করতে হবে। একটি টেকসই, বিশুদ্ধ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রয়াসগুলো মানুষকে দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে তুলে নিয়ে আসবে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সেবা প্রদান করবে এবং আমাদের পরিবেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলো সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে। এ গ্রহকে সবার জন্য একটি বিশুদ্ধতর ও অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে কোপেনহেগেন চুক্তি ও কানকুনে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন বৈঠক এ রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আমাদের সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
============================
আলোচনা- দরিদ্র মানুষের পাঁজরের ওপর দুর্দান্ত পাজেরো  বিএনপির মিছিলে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের পিটুনি  খবর কালের কন্ঠের- হরতালের ধরপাকড় চলছেই  খবর- খুনের মামলা প্রত্যাহার, শীর্ষ সন্ত্রাসীর অব্যাহতি by নজরুল ইসলাম  প্রকৃতি- চট্টগ্রামে ঐতিহ্যের পাহাড় কেটে বহুতল ভবনঃ সুরক্ষার পরিকল্পনা ধ্বংসের অনুমোদন  প্রকৃতি খবর- জলবায়ু সম্মেলন আজ শুরু  রাজনৈতিক আলোচনা- 'পুলিশই কি হরতাল সফল করে দেয়' by আবেদ খান  আইন কানুন- 'বাহাত্তরের সংবিধান ফিরছে না' by আহমেদ দীপু  আইরিন খান বললেন,'নারীর মানবাধিকার রক্ষায় আরও সক্রিয় হতে হবে' সুত্র প্রথম আলো  আইন কানুন- চাই বিরোধের বিকল্প নিষ্পত্তি by রোমেল রহমান  আইন কানুন- ভরণপোষণ একটি আইনি অধিকার by মাসূমা তাসনীম  আইন কানুন- অর্থঋণ আদালত আইনে অনেক গলদ by এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম  আইন কানুন- গাড়ি আটক হলে মালিকের করণীয় by মো. রাশেদ খান  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আমাদের রাজনীতিতে বখাটেপনা' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  স্মরণ- 'আমরা তো কাঁদছিই' by নেয়ামতউল্যাহ  চিত্রকলা- এক পরিবারের বৃক্ষ ও শেকড় সুত্র প্রথম আলো  গল্পসল্প- 'ঢাকা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে' by উম্মে মুসলিমা  কৃষি আলোচনা- 'বরেন্দ্রভূমির কৃষকের বীজবিদ্রোহ' by পাভেল পার্থ


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ জেমস এফ মরিয়ার্টি
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.