অনেক নাটকের পর সেই সাকিব

সিরিজের সময় এমন ম্যাড়মেড়ে দিন কমই আসে। জিম্বাবুয়ের অনুশীলন নিয়ে আগ্রহ থাকার কোনো কারণ নেই। আর বাংলাদেশ দলের তো কাল অনুশীলনই ছিল না। কিন্তু কে জানত, এমন ম্যাড়মেড়ে দিনটাই রূপ বদলে চরম নাটকীয় হয়ে উঠবে সন্ধ্যা নাগাদ!
দুপুরে গৎবাঁধা সংবাদ সম্মেলন করে এলটন চিগুম্বুরার দল হোটেলে ফেরার পর থেকেই নাটকীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আবহ। দল ঘোষণা নিয়ে গুঞ্জন ছিল, তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুটুকু দখল করে নেয় অন্য দুটি প্রশ্ন—কে হচ্ছেন অধিনায়ক? শুধু কি জিম্বাবুয়ে সিরিজ, নাকি বিশ্বকাপ পর্যন্তই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কাউকে?
শীতের সন্ধ্যায় এই নাটক আর রোমাঞ্চের শেষ দৃশ্যটা মঞ্চস্থ হলো বোর্ড সভাপতির কক্ষে। মিলল সেই দুটি প্রশ্নের উত্তরও। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের নাম সাকিব আল হাসান। তবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত নয়, আপাতত শুধু জিম্বাবুয়ে সিরিজ। সহ-অধিনায়ক নেই দলে। বিশেষ প্রয়োজনে মাঠ ছাড়তে হলে সাকিবই কাউকে দায়িত্ব দিয়ে আসবেন।
সন্ধ্যায় বোর্ড সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের এই ঘোষণার আগে নাটকের একটার পর একটা পর্ব চলেছে বিসিবি কার্যালয়ে। প্রথমে দুই নির্বাচক রফিকুল আলম ও আকরাম খান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহমেদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতির দীর্ঘ আলোচনা। বিকেলে সাংবাদিকদের বোর্ড সভাপতি জানালেন, দল ও অধিনায়কের নাম সন্ধ্যার মধ্যেই জানা যাবে। সম্ভাব্য অধিনায়কদের বোর্ড অফিসে জরুরি তলব করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার পরই আসবে চূড়ান্ত ঘোষণা।
এর মধ্যেই কে একজন খবর দিয়ে গেলেন, ‘মাশরাফি এসেছে।’ সভাপতির সঙ্গে মিনিট বিশেক আলোচনার পর হাসিমুখে বেরোলেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তখন কোনো কথা বলতে রাজি হননি মাশরাফি।
সভাপতি অবশ্য মাশরাফির বিদায়ের পরপরই সাংবাদিকদের ডেকে সব কৌতূহল মেটালেন, ‘আমরা আপাতত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য অধিনায়ক দিচ্ছি। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়ক মনোনীত করা হবে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে অধিনায়কত্ব করবে সাকিব।’
অধিনায়ক যে সাকিব বা মাশরাফির মধ্যেই কেউ হচ্ছেন, সেটা জানা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাকিবকেই বেছে নেওয়ার কারণ কী? মাশরাফির নেতৃত্ব সাকিবের হাতে গেছে তো মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ায়! ইনজুরি কাটিয়ে আবার তিনি দলে ফেরার পরও কেন সাকিবই অধিনায়ক? সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘মাশরাফির ইনজুরিটাই আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাকে আমরা পুরোপুরি পাইনি। এর মধ্যে সে কোথাও খেলেওনি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাই আর ঝুঁকি নিলাম না আমরা। মাশরাফি যদি ফিট হয়, তারপর দেখা যাবে। তা ছাড়া সাকিবের অধিনায়কত্ব প্রমাণিত। তার ওপরই আমাদের আস্থা বেশি।’ সঙ্গে তিনি এটাও জানালেন, মাশরাফি তাঁদের সিদ্ধান্ত হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন।
বোর্ড সভাপতি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন, কিন্তু নাটকের ক্লাইম্যাক্স তখনো বাকি। নিউজিল্যান্ড সিরিজের সময়ই যে সাকিব বলে রেখেছিলেন এরপর অধিনায়কত্ব করলে সেটি বিশ্বকাপের পরই করতে চান। তিনি কি সিদ্ধান্ত বদলাবেন?
জরুরি তলব পেয়ে ততক্ষণে সাকিবও হাজির সভাপতির কক্ষে। সভাপতি তাঁর হাতে খেলোয়াড় তালিকা ধরিয়ে দিয়ে রসিকতা করলেন, ‘এটা তোমার দল। দেখো, ওদের চেনো কি না।’ পরিস্থিতি বুঝে সাকিব বললেন, ‘...কিন্তু আপনার সঙ্গে যে আমার কিছু কথা আছে।’
বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সাকিবের দীর্ঘ সেই আলোচনার ফলাফল—সাকিব জিম্বাবুয়ে সিরিজের অধিনায়কত্ব করতে রাজি। কিন্তু মতবদলের কারণ? সাকিবের কথা শুনে মনে হলো অনুরোধেই ঢেঁকি গিলেছেন তিনি, ‘আমি আসলে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না এমন কিছুর জন্য। আমার কাছে মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব না করাটাই আমার ও দলের জন্য ভালো হবে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের সময়ই সেটা বলে দিয়েছিলাম।’ সাকিবের জন্য অবশ্য অভিজ্ঞতাটা নতুন নয়, এর আগেও এভাবে অধিনায়কত্ব চেপেছে তাঁর কাঁধে। আবারও তাঁকে বলতে হলো, ‘অধিনায়কত্ব করতে হবে, এটাই কথা। আমি সেভাবেই প্রস্তুতি নেব।’ রাতে মাশরাফিও অভিনন্দন জানালেন সাকিবকে, ‘অধিনায়কত্ব না পাওয়াটা আমার জন্য কোনো সমস্যা না। আর অধিনায়ক সাকিবেরই হওয়া উচিত। বোর্ড খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাকিবের কোনো সহযোগিতা লাগলে আমি অবশ্যই তা করব।’
যাক, অধিনায়কত্বের ‘লড়াই’য়ের পরও অপ্রীতিকর হচ্ছে না দুজনের সম্পর্ক! কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র আড়াই মাস আগেও কেন কেবল জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্যই অধিনায়ক বেছে নেওয়া হলো, সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব দিলেই যে ভালো, সেটা মেনেও বোর্ড সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল উল্টো পথে হাঁটার যে ব্যাখ্যাটা দিলেন, সেটি একটু অদ্ভুতই, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ১১ জন খেলোয়াড়কে নিয়মিতভাবে আমরা খুব কমই পাচ্ছি। অন্যান্য দলে কিন্তু বোঝা যায়, কোন ১১ জন খেলবে। কোনো কারণে একজন ইনজুরিতে পড়লেই আরেকজন আসে। আমাদের এ রকম নেই।’

No comments

Powered by Blogger.