বহু বর্ণের ভিড়ে..

‘আমরা গেমসের শুরু ঘোষণা করছি’—রোববারের টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রধান শিরোনাম।
ভেতরের পাতায় বেশ কয়েকটি ছবির একটি আলাদা করে দৃষ্টি কাড়ল—দুই অস্ট্রেলিয়ান অ্যাথলেট ভারতীয় রীতির অনুকরণে হাত জোর করে নমস্কার করছেন। এরই পাশে বিশাল এক বিজ্ঞাপন। ভারতের বিভিন্ন খেলার তারকাদের ছবির নিচে লেখা: ‘উই দ্য পিপল অব ইন্ডিয়া’।
এগুলো খণ্ডছবি। ১৯তম কমনওয়েলথ গেমসের উদ্বোধনী দিনে স্থানীয় পত্রিকাগুলো তাদের দলকে উজ্জীবিত করতে আরও অনেক বিজ্ঞাপনই ছেপেছে। আছে নানা প্রতিবেদন। একটিতে সানডে টাইমস-এর আশাবাদ, ‘গেমসে ভারত ১০০টি পদক জিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করুক।’
সানডে পাইওনিয়ার ভারতের সম্ভাব্য সোনাজয়ী ৩২ খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ছাপিয়ে লিখেছে, ‘এবার রেকর্ডসংখ্যক ৬১৯ ভারতীয় অ্যাথলেটের এই গেমস ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসবে।’
‘এটা আমাদের ক্রীড়ার অহংকার’—সানডেরই আরেক প্রতিবেদনে গর্ব করা হলো এই আয়োজন নিয়ে। হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রধান শিরোনাম, ‘দিল্লি কাম আউট অ্যান্ড প্লে’। পাশে জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কর্মরত কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের উচ্ছ্বাসমাখা ছবি। শেষ মুহূর্তে ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া গেমস-পল্লির যেসব ছবি ছাপা হচ্ছে, তার একটি এমন, ভারতীয় দলের কুস্তিগীর নির্মলা দেবীকে শাড়ি পরতে সাহায্য করছেন ওই দলেরই এক সদস্য। কুস্তিগীর সুশীল কুমারকে নিয়ে সতীর্থদের ভি-চিহ্ন দেখিয়ে ছবির জন্য পোজ দেওয়া... স্ত্রী-ছেলের সঙ্গে গেমস ভিলেজে শ্যুটার মনশের সিংয়ের ছবি...আরও কত কী।
দক্ষিণ আফ্রিকার চার মহিলা অ্যাথলেট পানির পাইপ নিয়ে জলকেলিতে ব্যস্ত। কেনিয়ার অ্যাথলেটদের আড্ডার ছবির ক্যাপশন, ‘প্রতিযোগিতার মঞ্চে এরা আর এমন খোশমেজাজে থাকবে না।’ হাসিমাখা ছবি নিয়ে পত্রিকায় হাজির ভারতীয় মহিলা হকি দল, কোচ-বিতর্ক (সাবেক কোচের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ) পেছনে ফেলে এসেছে বলেই মনে হলো ছবিটা দেখে। ভি-চিহ্ন দেখিয়ে তোলা ছবিটা নজর কাড়ে আলাদাভাবে।
অ্যাথলেটদের কারও হাতে মিকি মাউস, কেউ ভুভুজেলা বাজানোয় মগ্ন। কাল দুপুরে প্রধান মিডিয়া সেন্টারের বাইরে স্থানীয় এক টিভি সাংবাদিক ভুভুজেলা হাতে নিয়ে বলছিলেন, ‘ভুভুজেলা বাজান, খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিন। ভারতীয়দের ভালো ফল করার জন্য এটা একটা মহৌষধ হতে পারে!’
গেমস নিয়ে আগে নাক সিঁটকালেও এখন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডও প্রশংসায় ‘পঞ্চ’ না হোক ‘চতুর্থমুখ’ তো বলাই যায়। অস্ট্রেলিয়ায় ছয়টি চ্যানেলে দেখানো হবে এই গেমসের খেলাগুলো। সেটির আয়োজন নিয়ে মহাব্যস্ত একজন অস্ট্রেলীয় টিভি কর্মীর বলা কথাটা বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘আর বলিস না-রে ভাই। ঝামেলায় আছি। এতগুলো খেলা সরাসরি দেখানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!’
জুডি ইওয়ারিরও হিসাবটা অবশ্য অন্য। তাঁর অ্যাথলেটরা ট্র্যাকে নামবেন আর টপাটপ সোনা কুড়োবেন। নেহেরু স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেই জ্যামাইকার অ্যাথলেটিকস দলের ম্যানেজারের ভোঁ দৌড়, গেমস-পল্লিগামী বাস যে ছেড়ে দিচ্ছে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘বোল্টের (উসাইন বোল্ট) আগামী বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আছে তো, তাই সে আসেনি। তা ছাড়া হালকা একটু ইনজুরিও আছে। পাওয়েলও (আসাফা পাওয়েল) ফিট নয়। ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেই তারা দিল্লি গেমসে আসেনি।’
যত কাজই থাকুক দিল্লি আসতেই হলো প্রিন্স চার্লসকে। পরশু ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গে দেখা করেছেন ব্রিটিশ রাজপুত্র। সেই ছবি জাগরণসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রথম পাতায় শোভা পাচ্ছে। রানি এলিজাবেথের প্রতিনিধি হিসেবে প্রিন্স চার্লসেরই দিল্লি গেমস এককভাবে উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতি তা হতে দেয়নি। প্রিন্স চার্লস এবং প্রতিভা পাতিল দুজনই গেমসের যৌথ উদ্বোধক! যা গেমসের ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি।
বহু বর্ণের ভিড়ে কেনিয়ার তরুণ বার্নার্ডের গায়ের টি-শার্টে লেখা, ‘অ্যান অলিম্পিয়ান ইজ অ্যান অলিম্পিয়ান ফর এভার।’ কেনিয়ার অলিম্পিক কাউন্সিলের হয়ে গেমস কাভার করতে এসেছেন। জানালেন এই টি-শার্ট পরার কারণটা, ‘এটা কমনওয়েলথ গেমস। কিন্তু আমি অলিম্পিকের বাণীটিই এই গেমসে সুউচ্চে তুলে রাখতে চাই। গেমস তো গেমসই, সব গেমসেরই মর্মবাণী এক। সৌভ্রাতৃত্ব আর সহযোগিতা।’

No comments

Powered by Blogger.