কাশ্মীরে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে

ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গতকাল বুধবার সে দেশের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কাশ্মীর পরিস্থিতি পরিদর্শনে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (এএফএসপিএ) নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে গতকালও কাশ্মীরে পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে যোগ দেন কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, ইউপিএ জোটের সভাপতি গোলাম নবী আজাদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, বিজেপির নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, নীতিন গড়কারি, অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজ, সিপিআইএমের নেতা প্রকাশ কারাত, আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব প্রমুখ। কাশ্মীর থেকে সেখানকার ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আসা পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সভায় যোগ দেয়। তবে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তাতে যোগ দেননি।
বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, পরিস্থিতি পরিদর্শনে শিগগিরই একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল কাশ্মীরে পাঠানো হবে। তারা সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং সে অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের কাশ্মীরে যাওয়ার দিনক্ষণ পরে নির্ধারণ করা হবে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব দলের নেতারা সংবিধান পরিবর্তন এবং আইন পরিমার্জনে একমত হয়েছেন। এএফএসপিএ বিষয়েও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকে এবং কাশ্মীরবাসীর চেতনা ও অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল মনোভাব বজায় রেখেই সবকিছু করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা শিথিল করার ব্যাপারে ওই বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব তোলা হয়। বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এ বিষয়ে বিরোধিতা করার ঘোষণা দিয়েছিল। যথারীতি বৈঠকেও তারা এর বিরোধিতা করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও এ আইন বাতিল বা শিথিল না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী কাশ্মীরে নিরাপত্তাকর্মীদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়াই গুলি চালানোসহ বেশ কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরের বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ করেছে ওই আইনের সুযোগে নিরাপত্তাকর্মীরা সেখানকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন করার বৈধতা পাচ্ছে।
গতকালের সর্বদলীয় বৈঠকে উত্থাপিত বিভিন্ন দলের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সর্বদলীয় বৈঠকে কাশ্মীরের বিক্ষোভকারীদের প্রতি হিংসাত্মক পথ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তিনি ‘মর্মাহত’।
এদিকে, গতকালও কাশ্মীরে পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মেন্ধরে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পৃথক দুই এলাকায় দুটি সরকারি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। হান্দওয়াড়া শহরে গত মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভকারীরা মিউনিসিপ্যাল কমিটির কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। অন্যদিকে সোপোরে শহরে রাজস্ব কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন: পাকিস্তান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি কাশ্মীর-সমস্যা সমাধানে দমন-পীড়ন পরিহার করে কাশ্মীরিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডন-এর সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

No comments

Powered by Blogger.