শুরুতেই মেসি-জাদু

এই যে, আমিই সেই মেসি’! প্যানাথিনাইকসের বিপক্ষে
গোল করার পর মেসির এই উদ্যাপন-ভঙ্গি একেবারেই নতুন।
কিন্তু মাঠে সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুরোনো মেসিই। যাঁর দাপটে প্রতিপক্ষ বলই খুঁজে পায় না!
ইদানীং প্রায়ই লেখা হচ্ছে ‘মেসি-ম্যাজিক’। শব্দবন্ধটি একটা ঝংকারও তোলে বৈকি। লিওনেল মেসি কি সত্যিই জাদুকর? নয়তো কী! পরশু ন্যু ক্যাম্পে মেসির সম্মোহনী শক্তি প্যানাথিনাইকসকে নিশ্চল দাঁড় করিয়ে দেখাল তাদের অনিন্দ্যসুন্দর ফুটবল। আর চ্যাম্পিয়নস লিগের উদ্বোধনী দিনে ৫-১ গোলে গ্রিসের দলটিকে উড়িয়ে দিয়ে বার্সেলোনাও তাদের ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাঠিয়ে দিল বার্তা—হুঁশিয়ার!
গত দুই আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি এবারও খাতা খুললেন জোড়া গোল করে। দুটি গোল করিয়েছেনও। ইউরোপ-শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিকটি পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবী যেমন দুহাত ভরে তাঁকে দেয়, তেমনই বঞ্চনার হতাশায়ও পোড়ায়। দুবার তাঁকে গোলবঞ্চিত করেছে গোলপোস্ট। মেসিও মিস করেছেন পেনাল্টি। অবশ্য দলের বিশাল জয়ের আনন্দ ঘুচিয়ে দিয়েছে সেই হতাশা। সব প্রতিযোগিতা মিলে ৫ ম্যাচে ৬ গোল করে মৌসুমের শুরুতেই মেসি আভাস দিয়ে রাখলেন গত মৌসুমের (৫৩ ম্যাচে ৪৭ গোল) ফর্মটাকে ধরে রাখার।
মাত্রই তিন দিন আগে এই ন্যু ক্যাম্পেই নবাগত হারকিউলিসের কাছে লিগে হেরে গিয়েছিল বার্সেলোনা। হারকিউলিস গ্রিক দেবতা। তারই প্রতিশোধ নিতেই বুঝি গ্রিসের দলটার ওপর অমন নির্দয় চড়াও হয়েছিল মেসির দল! পুরো ম্যাচে আক্ষরিক অর্থেই স্রেফ দর্শক হয়ে ছিল। বার্সেলোনার বল দখল ছিল ৮৬ শতাংশ! বার্সেলোনা শট নিয়েছে ২৮টি, এর ১২টি ছিল গোলমুখে। অন্যদিকে বার্সার গোলমুখে প্যানাথিনাইকসের আক্রমণ ছিল মাত্র একটি।
গ্রিসের দলটি নিজেরা হয়তো ভুলেই গেছে, পরশু প্রথম গোলটি কিন্তু করেছিল তারাই। পুয়োল-পিকেদের ভুলের মাশুল তুলে ২০ মিনিটে ন্যু ক্যাম্পের গর্জন থামিয়ে দিয়েছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার সিডনি গোভু। তবে গ্যালারির উল্লাস ফিরিয়ে দিতে মেসি সময় নিয়েছেন এক মিনিটের একটু বেশি। ইদানীং প্রায়ই চিপ করে গোল করায় যেন মজা পেয়ে গেছেন। ২২ মিনিটে মেসির গোলটিও তা-ই। ৩৩ মিনিটে চ্যাম্পিয়নস লিগেই নিজের প্রথম গোলটি করেন ভিয়া। জাভির কর্নার থেকে হেডার পাস, ভিয়াকে অরক্ষিত রাখার খেসারত দিয়ে পিছিয়ে যায় প্যানাথিনাইকস।
প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার আগমুহূর্তে সেই সম্মোহনী গোল। প্যানাথিনাইকসের ডি-বক্সে জনা পাঁচেক ডিফেন্ডারের জটলায় ছোট্ট পরিসরে মেসির সঙ্গে ইনিয়েস্তা-পেদ্রোর ওয়ান-টু। কীভাবে যেন সেই ফাঁক থেকেই গোল করে ৩-১ ব্যবধান করে ফেললেন মেসি!
বার্সার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বশেষ হ্যাটট্রিকটি তাঁরই। গত লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে চারটি গোলই করেছিলেন মেসি। এবারের লিগের শুরুতেই হ্যাটট্রিকের সুযোগ দিতে তাই তাঁকেই ঠেলে দেওয়া হয় পেনাল্টি কিক নিতে। কিন্তু পেনাল্টি-অনভ্যস্ততার কারণেই কি না বাঁ পায়ের দুর্বল শট প্রায় বিনা পরিশ্রমে ঠেকিয়ে দেন প্যানাথিনাইকস গোলরক্ষক। হতাশা ভুলে মেসি চেষ্টা চালিয়ে যান। ৭৭ মিনিটে বাঁ প্রান্তে প্রায় শূন্য ডিগ্রি কোণ থেকে, বিশ্বকাপে মাইকনের গোলটির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো একটা শট নিয়েছিলেন। গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল গলিয়ে দিলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় পোস্ট। ফিরতি বলে আলতো টোকায় গোল করেন পেদ্রো।
শেষ পর্যন্ত হ্যাটট্রিক না পেলেও এই ম্যাচেই দারুণ এক রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন মেসি। বার্সার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোল এখন তাঁরই (মেসির ২৭, রিভালদোর ২৫)। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আলভেজের গোলটিও তাঁরই বানিয়ে দেওয়া। পুরো ম্যাচে এভাবেই আলো ছড়ালেন মেসি। ম্যাচ শেষেও তাঁকে প্রশংসার বৃষ্টিতে ভেজালেন কোচ। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এত কিছু, মেসি সত্যিই জাদুকর!

No comments

Powered by Blogger.