বিশ্বব্যাংক তিন বছরে ৬১০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে

বিশ্বব্যাংক আগামী তিন অর্থবছরে (২০১১-১৪) বাংলাদেশকে ৬১০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দেবে। গতকাল বুধবার ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে এই সহায়তার কৌশলপত্র (ক্যাস) ঘোষণা করা হয়।
নতুন এই কৌশলপত্রে দারিদ্র্য বিমোচনসহ আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে বিশ্বব্যাংক ৬১০ কোটি ডলারের এই বড় সহায়তা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিশ্বব্যাংকের কিছু সুনির্দিষ্ট সমালোচনা ও একই সঙ্গে সংস্থাটির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংককে ছাড়া যাবে না। আমাদের বিশ্বব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।’
একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী সংস্থাটির আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অর্থসহায়তার সঙ্গে খরচের ক্ষেত্রে দেওয়া শর্তের সমালোচনা করেন। পাশাপাশি এও বলেন, এ রকম একটি বড় সংস্থায় আমলাতান্ত্রিকতা থাকতে পারে। আর অর্থ দিলে তার খবরদারিও থাকে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন।
বাংলাদেশের জন্য প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাংকের আইডিএ সহায়তা গত বছর ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। নতুন কৌশলপত্রে এই সহায়তা ২০১০-১১ অর্থবছরে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার ঈঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতুর জন্য ১২০ কোটি ডলারের সহায়তার অর্থ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে নতুন কৌশলপত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এলেন গোল্ডস্টেইন। তিনি জানান, নতুন এই সহায়তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বিশ্বব্যাংক।
গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে দীর্ঘ মেয়াদে, কর্মসূচিভিত্তিতে কাজ করব।’
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে যে সহায়তা দিয়েছে, নতুন কৌশলপত্রের আওতায় তার দ্বিগুণ সহায়তা দেওয়া হবে বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের উন্নয়নে দ্রুত ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় উভয় ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, একসময় দেশের রাজস্ব বাজেটের ১২ ভাগ আসত বিদেশি সহায়তা থেকে। আর এখন তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা গেছে। তিনি প্রায় তিন দশক আগে বিশ্বব্যাংক যে পদ্ধতিতে সহায়তা দিত তার বর্ণনা করেন। বলেন, তখন সহায়তার বিষয়টিতে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হতো। সংস্থার পর্ষদ বৈঠকে গিয়ে দেশের প্রতিনিধি জানতে পারতেন কত সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। খোলামেলা আলোচনা করে এগুলো ঠিক করা হচ্ছে।
কৌশলপত্রের ওপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে ঝুঁকির দিক বর্ণনায় বিশ্বব্যাংক যে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে একত্রে বিবেচনা করছে, তিনি এর সমালোচনা করেন।
জামিলুর রেজা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের সৃষ্টি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিক ঘটনা। দুটোকে এক করা যাবে না।’ অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জামিলুর রেজা চৌধুরীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ মুক্ত আলোচনায় খুলনা এলাকায় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিনিয়োগ আনার কারণ জানতে চান।
এর জবাবে মসিউর রহমান বলেন, এই প্রকল্পগুলোয় ৩০ ভাগ মূলধন আর ৭০ ভাগ ঋণ রয়েছে। দেশের উদ্যোক্তারা ইচ্ছা করলে এই ৭০ ভাগের মধ্যে অংশ নিতে পারেন।
পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অতীতে বিশ্বব্যাংকের পাট খাত, কমিউনিটি হেলথ ও জনসংখ্যাবিষয়ক প্রকল্প পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিশ্বব্যাংকের এই সহায়তার শর্তগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

No comments

Powered by Blogger.