শুধু জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব লাভ ঠেকাতে চায় রক্ষণশীলরা

যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসী ও ভ্রমণকারীদের সন্তানদের ওপর রক্ষণশীলদের নজর পড়েছে। অবৈধ অভিবাসন নিয়ে চলমান বিতর্কে এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে অবৈধ অভিবাসী এবং বেড়াতে আসা লোকজনের জন্ম নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব ঠেকানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে। প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংশোধনী আনার ঘোষণা দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের আইন-প্রণেতারা।
সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিনওসি গ্রাহাম বলেছেন, আমেরিকাকে এখন নতুন এক সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অবৈধ অভিবাসীদের আগমন ঘটছে। নাগরিকত্ব লাভের জন্য কেবল সন্তান জন্ম দিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটকেরও আগমন ঘটছে। এ অব্যবস্থা ঠেকাতে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রভাবশালী এ আইন-প্রণেতা। সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন সংবিধানের সংশ্লিষ্ট সংশোধনী নিয়ে কংগ্রেসে শুনানির আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সীমানায় জন্ম নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ (১৪তম) সংশোধনীর মাধ্যমে এ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এখানে জন্ম নেওয়া কোনো সন্তানের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য পিতামাতার অভিবাসন বৈধতা যাচাই করা হয় না। পাশাপাশি ভ্রমণে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জন্ম নেওয়া সন্তান এখানকার নাগরিক। আইনের এ সুযোগ গ্রহণ করে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা পথে যুক্তরাষ্ট্রে লোকজনের অনুপ্রবেশ ঘটে। অনেককেই ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেখা যায় কেবল সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য। প্রসূতি পর্যটন নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত এ প্রক্রিয়া চলে আসছে বছরের পর বছর। প্রসূতি পর্যটনের চাপ সামাল দিতে হয় হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে। রক্ষণশীল আইন-প্রণেতারা মনে করছেন, এ প্রক্রিয়া পুরো অভিবাসন-ব্যবস্থাকে জটিল করে তুলেছে। বহু অবৈধ অভিবাসীর সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও মা-বাবাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বৈধতার অভাবে। অভিবাসন আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ এবং ধরপাকড় শুরু হলে ক্ষেত্রবিশেষে মানবিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। নাগরিক সন্তানদের সঙ্গে পিতামাতার বিচ্ছিন্নতার অবস্থা সৃষ্টি হয়।
সিনেটর লিনওসি গ্রাহাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী বহির্বিশ্বের লোকজনকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকার-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রোজমেরি জেনকস বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি না করে আইন-প্রণেতাদের আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনা বা সংশোধনী বাতিল করা খুব জটিল প্রক্রিয়া। রক্ষণশীল আইন-প্রণেতারা তাই এখন বিকল্প খুঁজছেন। রক্ষণশীল সংগঠক রোজমেরি জেনকস বলেন, দেশব্যাপী ভেঙে পড়া অভিবাসন-ব্যবস্থার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে ‘প্রসূতি ভ্রমণ’ অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার মাধ্যমেই অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব প্রাপ্তি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

No comments

Powered by Blogger.