অনুন্নয়ন বাজেটে কর্মসূচির নতুন নীতিমালা ঘোষণা by রোজিনা ইসলাম

অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় যেকোনো কর্মসূচির সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ কোটি টাকা এবং তা বাস্তবায়নের সময় তিন বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে সরকার।
একই সঙ্গে অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় কর্মসূচি প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যে নীতিমালা জারি করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে।
গত সোমবার অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ থেকে এ পরিপত্র জারি করা হয়।
নীতিমালা অনুসারে সরকারের কৌশলগত উদ্দেশ্য ও মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তা অর্জনে সহায়ক হবে—এমন কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে।
প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে যেসব এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তার মধ্যে রয়েছে: স্বল্প ব্যয়ে উন্নয়নমূলক কার্যসম্পাদন, দারিদ্র্য বিমোচনমূলক কার্যক্রম, প্রবৃদ্ধি সহায়ক কার্যক্রম এবং মানবসম্পদ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম।
অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: বৈজ্ঞানিক ও উদ্ভাবনী গবেষণা; কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার সংগ্রহ ও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ; নির্মাণ ও পূর্ত কাজ; বিদ্যমান স্থাপনার মেরামত ও সংরক্ষণ এবং বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ।
নীতিমালা অনুযায়ী অনুন্নয়ন বাজেটের যেকোনো কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য নির্ধারিত ‘পিপিএন ছক’ ব্যবহার করতে হবে। কর্মসূচি শনাক্ত করার পর বাস্তবায়নকারী অধিদপ্তর ও সংস্থা নির্দিষ্ট ছকে প্রস্তাব প্রণয়ন করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে।
বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া রাজস্ব বাজেটের আওতায় উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এ কর্মসূচির মেয়াদ তিন বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহীত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
তবে কর্মসূচির প্রকৃতি ও ব্যাপ্তি বিবেচনায় এ মেয়াদ ক্ষেত্রবিশেষে তিন বছরের বেশি হতে পারে।
কর্মসূচি সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য পিপিএনবিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পদের সংস্থান রাখা যাবে। তবে এ ধরনের পদে সরাসরি কোনো জনবল নিয়োগ করা যাবে না। বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থা অথবা অন্য কোনো সরকারি দপ্তর থেকে প্রেষণে নিয়োগের মাধ্যমে এসব পদ পূরণ করতে হবে।
কর্মসূচির আওতায় কোনো প্রকার যানবাহন ক্রয়ের সংস্থান রাখা যাবে না। তবে প্রকৃত প্রয়োজন অনুযায়ী দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিতে যানবাহন ভাড়া নেওয়া যেতে পারে।
কর্মসূচির অঙ্গভিত্তিক ব্যয় হিসেবে ‘মেরামত ও সংরক্ষণ’ খাতে কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা হলে এ বরাদ্দ প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের প্রস্তাব করা যাবে। কর্মসূচির আওতায় সাধারণভাবে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নিরুৎসাহিত করা হবে।
প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির তিন কিস্তির সমপরিমাণ অর্থ এ ক্ষেত্রে ছাড় করতে পারবে এবং সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী শেষ কিস্তিতে অবশিষ্ট অর্থ ছাড় করতে পারবে।
এ কর্মসূচির আওতায় সব ধরনের পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত আর্থিক ও অন্যান্য প্রশাসনিক বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে। মাসিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সমন্বয় সভায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন সমাপ্তির পর একটি সমাপ্তি প্রতিবেদন কর্মসূচির পরিচালক প্রণয়ন করবেন। উল্লেখ্য, প্রতি কর্মসূচির জন্য একজন পরিচালক নিয়োগ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাজেট ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের রাজস্ব বাজেটের আওতায় বাস্তবায়নাধীন কর্মসূচির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরীবিক্ষণ করবে। অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় প্রস্তাবিত কর্মসূচি স্বল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প সময়ে বাস্তবায়িত হবে এ কারণে কর্মসূচি প্রণয়ণের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন অনুমোদনের পরে তা সংশোধনের প্রয়োজন না হয়।
তবে যৌক্তিক কারণে মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন হলে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্মসূচির অঙ্গভিত্তিক ব্যয় ও মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.