পেশাদার লিগ নিয়ে ‘সুপারিশমালা’

চতুর্থ মৌসুমে পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবল লিগ। আগের তিনটি লিগে পেশাদারির চর্চা ছিল ডুমুরের ফুল। এবার বাফুফে কিছু উদ্যোগ নিয়ে চাইছে উঠে দাঁড়াতে। পাশাপাশি ক্লাবগুলোর কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া হয়েছিল বাফুফের পক্ষ থেকে। গত লিগের ১৩টি দলের মধ্যে সুপারিশ দেয়নি ৫টি দলই!
মোহামেডানের মতো বড় দলের সঙ্গে চিঠি এবং ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা মতামত জানায়নি। মতামত দেয়নি ব্রাদার্সও। বাফুফের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া বাকি তিনটি ক্লাব—মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম মোহামেডান ও আরামবাগ।
বাফুফে সূত্রের খবর, আবাহনীর পরামর্শ ছিল ঢাকার বাইরের ভেন্যু ব্যবস্থাপনা যেন কিছুটা হলেও মানসম্মত হয়। গত তিন লিগে ঢাকার বাইরে এই ভেন্যু ব্যবস্থাপনা ছিল যাচ্ছেতাই। মাঠ ছিল ভালো ফুটবলের অনুপযোগী। গত তিনটি পেশাদার লিগের চ্যাম্পিয়নরা লিগ কমিটির সঙ্গে ক্লাবগুলোর সুসম্পর্কও চেয়েছে।
রহমতগঞ্জ বলেছে, পাতানো খেলা বন্ধে মাঠে সংশ্লিষ্ট দুই দলের টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য মুঠোফোন নিষিদ্ধ করা হোক। শেখ রাসেল বিদেশি খেলোয়াড় ৫ জন নিবন্ধনের বিপরীতে তিনজন নয়, চারজনের খেলার সুযোগ চায়। বিয়ানীবাজার সামনে নিয়ে এসেছে একটি আপ্তবাক্য, ‘সবার উচিত ফুটবল ভালোবাসা। মুখে না বলে সেটা যেন প্রমাণ করা হয়।’ ফেনী সকারের চাওয়া—ভালো রেফারিং।
অবনমিত নারায়ণগঞ্জ শুকতারা চেয়েছিল বাংলাদেশ লিগ কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে। তাদের পর্যবেক্ষণ, ‘বড় বড় দল ফুটবল উন্নয়নের কথা বললেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়।’ ফরাশগঞ্জের দাবি, ক্লাবগুলোর জন্য বাফুফের অনুদান বাড়ানো হোক। দলটি চায়, অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ক্লাবের পরিবর্তে বাফুফেই যেন নেয়। চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রত্যাশা, ‘লিগ ঠিক সময় শুরু এবং শেষ হওয়া। লিগে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।’
হারুনুর রশিদ, আনোয়ারুল হক, বাদল রায় ও ফজলুর রহমানকে (বাবুল) নিয়ে গঠিত বাফুফের বিশেষ কমিটিও কিছু সুপারিশ করেছে। তারা লিগের সুপারিশমালা তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে—ক্লাবের জন্য, খেলোয়াড় ও কোচের জন্য এবং লিগ কমিটির জন্য পালনীয়।
এই কমিটির সুপারিশ, প্রতি ক্লাবকেই বেতনভুক্ত একজন পেশাদার কর্মী (কো-অর্ডিনেটর) নিয়োগ দিতে হবে, যিনি বাফুফের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সমন্বয় করবেন। কোচ আর ক্লাবের মধ্যে চুক্তিপত্রের অনুলিপি বাফুফের কাছে জমা দিতে হবে। ক্লাবগুলো যেসব খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করাচ্ছে, তাঁদের সবার এই লিগে খেলার সামর্থ্য আছে কি না, কিংবা সবার ফিটনেস আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করার জন্য বাফুফের উদ্যোগে ফিটনেস পরীক্ষা হতে পারে, যেটিকে বলে ‘ব্লিপ টেস্ট’।
ব্লিপ টেস্টে উত্তীর্ণ না হলে কোনো বিদেশি নিবন্ধিত হতে পারবেন না। প্রতি দলের কমপক্ষে ১০-১২ জন স্থানীয় খেলোয়াড়কে ব্লিপ টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। মাঠে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করা, পাতানো খেলা বন্ধে উচ্চপর্যায়ের গোয়েন্দা সহযোগিতা নেওয়া ইত্যাদি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ক্লাব কোচিং স্টাফের কমপক্ষে একজনের ‘বি’ লাইসেন্স থাকতেই হবে। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের নিয়ে কর্মশালা করারও পরামর্শ দিয়েছে ওই কমিটি।
সুপারিশ তো হলো, এগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, সেটিই প্রশ্ন। জানা গেছে, লিগ কমিটির গত সভায় এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আগামী সভায় এগুলো বাইলজে ঢোকানো হবে।
যত যা-ই করা হোক, পেশাদার লিগকে সফল করে তুলতে ক্লাবগুলোকেই নিতে হবে বড় ভূমিকা। কিন্তু বাফুফে সুপারিশ চাইলেও সব দলের সাড়া না দেওয়ায় বোঝাই যাচ্ছে, এসব নিয়ে ভাবছেই না অনেক ক্লাব। মৌসুম শেষে ক্লাবের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েছিল বাফুফে, ফরাশগঞ্জ ছাড়া সেই হিসাব আর কেউ দেয়নি। টিকিট বিক্রির যে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বাফুফেকে, সেটিও দেয়নি কোনো ক্লাবই!
এবার ক্লাবগুলোর জন্য সেরা অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার পুরস্কারের ব্যবস্থা করছে বাফুফে—এতে যদি ছবিটা একটু বদলায়!

No comments

Powered by Blogger.