চিলির শত্রু ইতিহাস

দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘মধুর’ বললেও ঠিক বোঝা যায় না। সেই উনিশ শতক থেকে ব্রাজিল ও চিলি দুই দেশের গলায় গলায় ভাব। এখনো দক্ষিণ আমেরিকায় নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে হাতে হাত রেখে কাজ করে তারা। একসঙ্গে কাজ করে যুযুধান কোনো গোষ্ঠী বা জাতির মধ্যে শান্তি আনতেও।
অথচ ফুটবল মাঠে নামলেই যেন এই ‘মৈত্রী’র কথা ভুলে যায় ব্রাজিল! ইতিহাসই সাক্ষী দেবে এই কথার। ইতিহাস বেশি দূর খোঁজার দরকারও নেই। গত পাঁচ বছরে দুই দলের সাত সাক্ষাতে সাতবারই হেরেছে চিলি; গোল হজম করেছে ২৬টি!
বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। এ পর্যন্ত দুবার ব্রাজিল-চিলি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছে; দুবারই জিতেছে ব্রাজিল। ১৯৬২ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ৪-২ গোলে এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ৪-১ গোলে।
এসব হিসাব জানার পর চিলির কি আর আজ খেলতে নামার দরকার আছে? আছে। এই চিলি একটু বদলে যাওয়া দল। এটা ঠিক, এবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুই ম্যাচেই ব্রাজিলের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে তারা। কিন্তু ওই বাছাইপর্বেই ব্রাজিলের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট কম নিয়ে তারা দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলে হয়েছে দ্বিতীয়।
সব মিলে গত তিন বছরে চিলি নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করেছে বলা চলে। সেই ‘আবিষ্কার’ করার কৃতিত্বটা মার্সেলো বিয়েলসার। ২০০৭ সালে নড়বড়ে একটা দলের দায়িত্ব নিয়ে তাদের ১২ বছর পর আরেকটা বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছেন।
এবার তো তাহলে ইতিহাস ভুলে সামনে তাকাতে পারে চিলি। না, আর কেউ না, খোদ বিয়েলসাই আপত্তি করছেন এ কথায়। ইতিহাস চিলির এতটাই বিপক্ষে যে এই প্রসঙ্গ উঠলেই তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, ‘অতীতে ব্রাজিল যা করেছে, তাতে এটা নিয়ে কথা না-বলাই ভালো। ওরা সব সময়ই ভীতিকর একটা দল। আর এখনকার দলটায় ঐতিহ্যবাহী সব ফুটবলীয় বৈশিষ্ট্য তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে গতি আর খুনে মানসিকতাও।’
তার পরও ‘অসম্ভব’ চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি অন্তত দিলেন বিয়েলসা, ‘আমরা আমাদের পক্ষে যা সম্ভব না, তাও করার চেষ্টা করব। অন্তত আমাদের শেষটা যাতে এত আগে না হয়ে যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
চেষ্টা তো বিয়েলসাকে করতেই হবে। অভিশাপ তাড়ানোর একটা ব্যাপারও যে আছে তাঁর জন্য! ২০০২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ‘সেরা’ দল নিয়ে গিয়েও প্রথম পর্ব থেকে ফিরতে হয়েছিল। চিলিকে নিয়ে প্রথম পর্ব পার হয়ে খানিকটা কলঙ্কমোচন হয়েছে। ব্রাজিলকে হারিয়ে দিতে পারলে ২০০২ বিশ্বকাপের ‘ভূত’কে পুরোপুরিই কবর দেওয়া যাবে।

No comments

Powered by Blogger.