মাইকনই এবার কাফু

শুধু নাক গুঁজে নিজের রক্ষণভাগ সামলে রাখা নয়, ব্রাজিল বরাবরই এমন সব ডিফেন্ডারের জন্ম দিয়েছে, রক্ষণ সামলে প্রায়ই যাঁরা উঠে যান আক্রমণভাগে। ত্রাস ছড়ান প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গে। সত্তরের দশকের কাফুরিঙ্গা থেকে শুরু করে ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু ছিলেন যেমন। ছিলেন রবার্তো কার্লোস। ব্রাজিলের সেই অভিজাত ডিফেন্ডারদের তালিকায় নাম লেখাতে প্রস্তুত মাইকন।
কাফু এবং কার্লোস অধ্যায় শেষ হয়ে গেলে ব্রাজিলজুড়ে একটা প্রশ্ন উঠেছিল, এই দুজনের শূন্যস্থান পূরণ করবেন কে? প্রশ্নটা বেশিক্ষণ বাতাসে ভাসতে দেননি, মাইকন দ্রুতই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রস্তুত। অন্তত মাঠের ডান প্রান্তে নতুন একজন কাফুকে পেয়ে গেছে ব্রাজিল।
কাফু ছিলেন বলেই জাতীয় দলের প্রথম একাদশে জায়গা পাকা করতে সময় লেগেছে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা থিতু হয়েছে দুঙ্গা কোচ হওয়ার পর। ২০০৭ কোপা আমেরিকা আর গত বছর ফিফা কনফেডারেশনস কাপজয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই ২৮ বছর বয়সী।
২০০৩ সালে অভিষেক হলেও গত বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি ২৩ জনের দলে। এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। খেলতে যাচ্ছেন ইন্টার মিলানের হয়ে ‘ট্রেবল’ সাফল্যের টাটকা স্মৃতি সঙ্গে নিয়েই। আধুনিক ফুটবলে তাঁকে যে সেরা রাইটব্যাক ভাবা হচ্ছে, সেটি প্রমাণের সুযোগ এসেছে ডগলাস মাইকন সিসেনান্দোর সামনে।
রাইট উইং ধরে বিরামহীন ছুটতে পারেন বলেই ইন্টার মিলান এবং ব্রাজিল দুই দলই মাইকনের এই সামর্থ্যকে মাথায় রেখেই রণকৌশল সাজায়। তাঁকে দেওয়া হয় ইচ্ছেমতো স্বাধীনতা। মাইকন এতটাই দুর্দান্ত খেলছেন, একই সময়ের আরেক সেরা রাইটব্যাক দানি আলভেজকে শেষ পর্যন্ত হয়তো বেঞ্চে বসেই দেখতে হবে বিশ্বকাপ। অথচ এই আলভেজও বার্সেলোনার গত দুটো মৌসুমের দুর্দান্ত সাফল্যের অন্যতম কারিগর।
মার্কিন অভিনেতা মাইকেল ডগলাসের নামে নাম রাখা হয় মাইকনের। কিন্তু অভিনেতা নয়, ফুটবলারই হতে হয়েছে তাঁকে। না হয়ে উপায়ও ছিল না। মাইকনের ফুটবলার বাবা সদ্যোজাত যমজ সন্তানের নাড়ি নিয়ে গিয়ে পুঁতে এসেছিলেন তাঁর ক্লাব নোভো হামবার্গোতে।
ক্রুজিরো, মোনাকো হয়ে এখন খেলেন ইন্টারে। ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়েই এবার পূর্ণ করেছেন শিরোপাত্রয়ী। সাফল্যবিধৌত মৌসুমটি পূর্ণতা পাবে তখনই, যদি শেষান্তে এসে আজন্ম-আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফিটাও ছুঁতে পারেন। আর সেই স্বপ্নপূরণের জন্য মাইকন উন্মুখ।

No comments

Powered by Blogger.