আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ডের অনায়াস জয়

জঘন্য বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে টিকিট পাওয়ার পর দল নির্বাচনে বিতর্ক। চাপের মধ্যে ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আপাতত ম্যারাডোনার সব চাপ বিরতিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ম্যাক্সিমিলানো রদ্রিগেজরা।
লিভারপুল উইঙ্গার রদ্রিগেজের জোড়া গোল আর কার্লোস তেভেজ, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ও সার্জিও আগুয়েরোর একটি করে গোলে কানাডাকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। দেশটির স্বাধীনতার দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বুয়েনস এইরেসের এই প্রীতি ম্যাচে মাঠেই নামেননি আর্জেন্টিনার মহাভরসা লিওনেল মেসি।
দারুণ এক জয় পেয়েছে ইংল্যান্ডও। ওয়েম্বলির প্রস্তুতি ম্যাচে গ্লেন জনসন, লেডলি কিং ও পিটার ক্রাউচের গোলে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে তারা শক্তিশালী মেক্সিকোকে।
প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ২-১ গোলে অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানকে ২-০ গোলে হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু বুলগেরিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেও বিশ্বকাপ আয়োজক স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছে পর্তুগাল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দল গোলশূন্য ড্র করেছে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ১১৭ নম্বর দল কেপ ভার্দের সঙ্গে।
কানাডার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মেসিকে বিশ্রাম দিয়ে তেভেজ ও হিগুয়েইনের সঙ্গে তৃতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে হাভিয়ের পাস্তোরেকে নামিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। পাস্তোরে কিছু করতে না পারলেও ১৬ ও ৩২ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিয়েছেন রদ্রিগেজ। ৩৭ মিনিটে ৩-০ করেছেন ডি মারিয়া। খেলা শেষ হওয়ার ১৯ মিনিট আগে কানাডার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছেন ম্যারাডোনার ‘জামাতা’ আগুয়েরো।
শুধু ‘জামাতা’র পারফরম্যান্স নয়, মেসিবিহীন দলের এই পারফরম্যান্সে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ম্যারাডোনা। বেশি উচ্ছ্বসিত তিনি বুয়েনস এইরেসে খেলা দেখতে আসা আর্জেন্টাইনদের আনন্দ দেখে। এবার সমর্থকদের নিশ্চিন্ত থাকার আহ্বান জানাতে পারছেন এ বছর এই নিয়ে টানা পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতা কোচ, ‘ওরা প্রমাণ করেছে, আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেওয়ার পর আর কোনো ম্যাচই প্রীতি ম্যাচ থাকে না। আমি উত্সাহিত বোধ করছি, কারণ মানুষ খুশি হয়েছে। এখন আর্জেন্টাইন লোকজন একটু শান্ত হয়ে থাকতে পারে। কারণ আমাদের দলে অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় আছে।’
খুশি ফ্যাবিও ক্যাপেলোও। মেক্সিকো ম্যাচটিকে দেখছিলেন খেলোয়াড়দের সর্বশেষ অবস্থা যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে। সুযোগটা খেলোয়াড়েরা ভালোই কাজে লাগিয়েছেন বলে বিশ্বাস ইংল্যান্ড কোচের, ‘আমি খুশি। একটা লম্বা মৌসুম কাটানোর পর খেলোয়াড়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে এখন কেমন আছে, সেটা জানা বেশ জরুরি ছিল।’
তার পরও একটু খচখচানি রয়ে গেছে ক্যাপেলোর মনে। ১৭ মিনিটে কিং, ৩৪ মিনিটে ক্রাউচ ও ৪৭ মিনিটে জনসন গোল করেছেন ইংল্যান্ডের পক্ষে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান কমিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কো। ম্যাচে ইংল্যান্ড মূলত পাল্টা-আক্রমণনির্ভর ফুটবল খেলেছে। ক্যাপেলো দলের কাছ থেকে ভালো আক্রমণও চাইছেন।
ওদিকে যাঁর অতৃপ্ত থাকার কথা সেই দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা বলছেন, তিনি খুবই খুশি। বিশ্বকাপে আসতে না পারা বুলগেরিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে খুশি, কারণ বুলগেরিয়া নাকি খুব ভালো খেলেছে, ‘আমি দলের পারফরম্যান্সে খুশি। কারণ বিশ্বকাপে আমরা যে ধরনের খেলার মুখোমুখি হব, বুলগেরিয়া সেই ধরনের ফুটবল খেলেছে।’
ম্যাচে যদিও ২০ মিনিটেই সাংওয়ানির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আফ্রিকানরা। কিন্তু ১১ মিনিট পরই সমতা নিয়ে আসেন বোজিনভ।
কেপ ভার্দের সঙ্গে ড্র করা এই ম্যাচে পর্তুগাল খারাপ খেলেছে এমন কথা বলার সুযোগ নেই। আসলে ম্যাচজুড়ে গোল মিসের মহড়া দিয়েছেন লিডসন, নানিরা। প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো প্রবল পরাক্রমে ম্যাচে ফিরলেও তাঁকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন ভার্দের গোলরক্ষক। ১৭ ও ২৬ মিনিটে দুটি মিস করেছেন লিয়েডসন, ডেকোর ব্যাকহিল থেকে পাওয়া সুযোগ মিস করেছেন নানি।
৬১, ৮১ ও ৯২ মিনিটে রোনালদোর শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন গোলরক্ষক। ভালো খেলা যতই হোক, জয় না পাওয়াটা অবশ্যই হতাশার। তার পরও রোনালদো আশাবাদী, বিশ্বকাপে দল ভালো করবে, ‘অবশ্যই আমরা জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র শুরু করলাম আমরা। এটা স্রেফ আমাদের নিজেদের ফিরে পাওয়ার একটা ম্যাচ ছিল। অবশ্যই বিশ্বকাপে আমরা এর চেয়ে অনেক ভালো করব।’

No comments

Powered by Blogger.