সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে থাকসিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

থাইল্যান্ডের একটি আদালত গতকাল মঙ্গলবার সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। রাজধানী ব্যাংককে সাম্প্রতিক সময়ে লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের সহিংস আন্দোলনে ইন্ধন ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে আদালত এ নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশটির বিশেষ তদন্ত বিভাগের উপপ্রধান নারাস সাভেসতানান জানিয়েছেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে থাকসিনের জড়িত থাকার বিষয়ে গতকাল ব্যাংককের একটি ফৌজদারি আদালতে রুদ্ধদ্বার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদালত যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে থাকসিনের বিরদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। শুনানি শেষে সাভেসতানান আদালত কক্ষের বাইরে এসে সাংবাদিকদের আরও বলেন, থাকসিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এ নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব এখন এটর্নি জেনারেলের।
থাকসিনের আইনজীবী পিচিত চিয়্যুনবান বলেছেন, তিনি তাঁর মক্কেলকে আদালতের এ আদেশ সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
থাই সরকারের অভিযোগ, সাম্প্রতিক রক্তক্ষয়ী সহিংসতার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন জড়িত। তাঁর উসকানিতেই লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে।
সরকার পতন ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনে মধ্য মার্চ থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্যাংকক। ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে টানা ছয় সপ্তাহ ধরে অবস্থান করে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। নিরাপত্তাকর্মী ও সরকারের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ৮৮ জন নিহত এবং প্রায় দুই হাজার লোক আহত হয়।
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে গত বুধবার থাই সেনারা সর্বাত্মক অভিযান চালায়। পাশাপাশি ব্যাংককসহ ২৩টি প্রদেশে কারফিউ জারি করা হয়। এদিন সেনা অভিযানে ইতালির এক সাংবাদিকসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন নেতার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সহিংস এ আন্দোলনের অবসান ঘটে।
থাইল্যান্ডের বিশেষ তদন্ত বিভাগের (ডিএসআই) প্রধান থারিথ পেংদিত সোমবার বলেছিলেন, লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে থাকসিনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব তথ্য-প্রমাণ আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে সরকারের এ অভিযোগ থাকসিন অস্বীকার করে বলেছেন, ব্যাংককে সহিংস ঘটনার পেছনে তাঁর কোনো হাত নেই। এমনকি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পেছনেও তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল না।
২০০৬ সালে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাকসিন সিনাওয়াত্রা সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকে তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে আছেন। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি দুবাইয়ে থাকেন। গতকাল তিনি পরিবার নিয়ে বলকান রাষ্ট্র মন্টিনেগ্রোতে যান। আবার গতকালই সে দেশ ত্যাগ করেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সোমবার থাকসিন মন্টিনেগ্রোতে পৌঁছান। এর আগে গত মার্চে তিনি প্রথম মন্টিনেগ্রোতে যান।
এদিকে থাইল্যান্ডকে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ হিসেবে ঘোষণাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সোমবার মার্কিন সিনেটে অনুমোদিত হয়েছে। একই সঙ্গে সিনেটররা ব্যাংককে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন। সিনেটে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পররাষ্ট্রবিষয়ক চেয়ারম্যান জিম ওয়েব এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে ব্যাংককের সহিংস ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
অপর দিকে থাই সরকার ব্যাংকক ও আরও ২৩টি প্রদেশে চলমান রাত্রিকালীন কারফিউর মেয়াদ আরও চার দিন বাড়িয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিব তাউইল প্লেনরি জানান, গতকাল মন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৫ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত রাতের বেলা কারফিউ বলবত্ থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.