স্বপ্নপূরণ হচ্ছে মরগানের

চাইলে একটা নাটক লিখে ফেলা যায় এইউইন মরগানের জীবন নিয়ে, নয়তো সিনেমার চিত্রনাট্য। ছোটবেলায় অসম্ভব যে স্বপ্নটা খেলা করত তাঁর চোখে, আজ সেটা বাস্তবতার পাখা মেলার অপেক্ষায়। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলার স্বপ্নপূরণের আর একটুই বাকি এই আইরিশ ক্রিকেটারের।
লর্ডসে আগামীকাল বাংলাদেশের বিপক্ষেই টেস্ট অভিষেক হয়ে যাবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে গতকাল লর্ডসের প্যাভিলিয়নে ইংল্যান্ডের যে কজন খেলোয়াড়কে গণসাক্ষাত্কারের জন্য হাজির করা হলো, সেখানে মরগানের টেবিলেই হলো সবচেয়ে বেশি ভিড়। আইরিশ থেকে ইংলিশ ক্রিকেটার হয়ে যাওয়া মরগান বলেনও ভালো। ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে ডাক পাওয়াটা যে ঠিক নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, সেটা স্বীকার করায় একটু দ্বিধান্বিত দেখাল না তাঁকে, ‘ফোন পেয়ে অবাকই হয়েছিলাম আমি। খুব খুশিও লাগছিল, কারণ এ রকম একটা ফোন পাওয়ার স্বপ্ন সব শিশুরই থাকে। আর আমি টেস্ট ক্রিকেটই খেলতে চেয়েছি সব সময়, চেয়েছি সেরাদের বিপক্ষে নিজের সামর্থ্যের পরীক্ষা নিতে। টেস্ট খেলাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’
আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২৩টি ওয়ানডে খেললেও এউইন মরগান এখন পুরোদস্তুর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের হয়ে এর মধ্যেই খেলে ফেলেছেন ১৮টি ওয়ানডে আর ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এবার টেস্ট দলে ডাক পেয়ে আসল স্বপ্নপূরণটাও এখন সময়ের ব্যাপার, যে স্বপ্ন দেখার শুরু তাঁর সেই ছোটবেলা থেকেই, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমি...টেলিভিশনে ইংল্যান্ডের টেস্ট দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। সব সময় চেয়েছি আমার স্বপ্নের নায়কদের মতো হতে।’ এই স্বপ্ন থেকেই ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন মরগান। ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলার বাসনায় চলে এলেন আয়ারল্যান্ড থেকে। এসে আরেকবার প্রমাণ করলেন, ভাগ্য সব সময় সাহসীদেরই সঙ্গে থাকে।
টেস্ট ক্রিকেটে মরগান কেমন করবেন, ইংলিশ মিডিয়ার সেটি নিয়ে দারুণ কৌতূহল। একজন তো জিজ্ঞেসই করে বসলেন টানা ছয় ঘণ্টা ব্যাটিং করার মতো ধৈর্য তাঁর আছে কি না। মরগান হেসে উত্তর দেন, ‘আমি তো মনে করি, আছে। কে জানে, প্রথম ম্যাচেই হয়তো চার শ রান করে ফেললাম! খুব খারাপ হয় না তাহলে শুরুটা...।’ না, কথার মতো টেস্ট ক্রিকেটটাকে মোটেই রসিকতা হিসেবে নিচ্ছেন না। বরং ওই রসিকতাটুকু করার আগে বলে নিয়েছেন, শুরুর দিকে ব্যাটিংটা এখনকার মতো সুশৃঙ্খল ছিল না বলেই ওয়ানডে থেকে টেস্টে আসতে এতটা সময় লেগে গেছে।
২০০৯ সালের আগস্টের পর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কোনো ম্যাচই খেলা হয়নি মরগানের। মিডলসেক্সের হয়ে তাঁর আগের মৌসুমটাও ছিল যাচ্ছেতাই, ২০ ইনিংসে করতে পেরেছিলেন মাত্র ৪৫৫ রান। সেই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠায় কৃতিত্ব দিচ্ছেন ইংল্যান্ড কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে, ‘খুব ছোটখাটো বিষয়ও ওর দৃষ্টি এড়ায় না। আমার খেলায় অনেক উন্নতি হয়েছে এতে।’
মরগানের টেস্ট দলে ডাক পাওয়াটা ইংল্যান্ডে যত না বড় খবর, তার চেয়ে বড় খবর আয়ারল্যান্ডে। নিজেই জানালেন, তিনি একাদশে থাকলে লর্ডস টেস্টের প্রচারটাও অন্যরকম হবে সে দেশের মিডিয়ায়। তবে তা দেখতে আয়ারল্যান্ডে বসে থাকছেন না মরগানের বাবা-মা। মরগান খেললে তাঁরা মাঠে বসেই দেখবেন ছেলের টেস্ট অভিষেক।

No comments

Powered by Blogger.