নিজের ব্যাটিং করছেন আশরাফুল

এক মুঠ গুড়, তিন আঙুলের এক চিমটি লবণ আর আধা লিটার পানি—এই ফর্মুলায় খাওয়ার স্যালাইন বানানো গেলেও মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিংটা অন্য জিনিস। অঙ্ক কষে আর যা-ই হোক আশরাফুলের মতো শট খেলা যায় না। জেমি সিডন্সের ‘ব্যাক লিফট ফর্মুলা’ বাদ দিয়ে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই আশরাফুল তাই ফিরে গেলেন পুরোনো ব্যাটিংয়ে, যেটাকে তিনি বলছেন, ‘...আমার ব্যাটিং।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুই ম্যাচের পর ইংল্যান্ডে এসে তিনটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন আশরাফুল। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ আর ইংল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা ছাড়া তাঁর ব্যাট কথা বলেছে অন্য সব ম্যাচেই। রসিকতা করে কেউ কেউ বলছেন, এটা নাকি খারাপ লক্ষণ! রান-টান করে প্রস্তুতি ম্যাচেই কোটা পূরণ করে ফেলেছেন আশরাফুল। যদিও আশরাফুল নিজে মনে করছেন, এটা তাঁর স্বকীয় ব্যাটিংয়ে ফিরে যাওয়ারই সুফল, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্র্যাকটিস ম্যাচ, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ... এর পর এখানে এসে পরপর তিনটা ইনিংসে তিনটা ফিফটি করলাম। প্রতিটি ইনিংসেই আগের স্টাইলের ব্যাটিংটা আমার উপকার করেছে। গত সাত-আট মাস আমি চেষ্টা করেছি স্ট্রোক খেলা কমিয়ে দিতে, তাতে লাভ হয়নি। গত দুইটা ইনিংস রান না করলেও আমার ব্যাটিং এখন ভালো হচ্ছে।’
মাঠে ফর্ম ফিরে পাওয়ার আগে মনের জোর ফিরে পাওয়াটাই বেশি জরুরি। প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স সেটা আশরাফুলকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ব্যাটিং নিয়ে এত দিন নানা মুনির নানা মতে বিভ্রান্ত থাকলেও এখন নিজের সিদ্ধান্তটা নিচ্ছেন নিজেই, ‘আমি আমার স্টাইলেই থাকার চেষ্টা করব। মূল কথা হলো সাফল্য পাওয়া। আগে ১০ ম্যাচে খারাপ খেলে এক ম্যাচে ভালো খেলতাম। কিন্তু ব্যাটিং বদলে দেখা গেছে গত সাত-আট মাসে ওই এক ম্যাচেও ভালো খেলতে পারছি না!’
নিজেকে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ আগামীকাল লর্ডসেই শুরু হয়ে যাচ্ছে। তবে চ্যালেঞ্জটা শুধু আশরাফুলেরই নয়, ইংলিশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই পুরো বাংলাদেশ দলেরই। আর ইংলিশ কন্ডিশন মানে উইকেট-আবহাওয়ার সঙ্গে এখানকার মিডিয়াও। মাঠে একটু পা হড়কালে ক্রিকেট-তীর্থ লর্ডস থেকেই যে বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা দেওয়ার বিরুদ্ধে আবার জিকির উঠে যেতে পারে, সেটা আশরাফুলেরও জানা। তবে এবার এই ব্যাপারেও আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী তিনি, ‘এ রকম হতেই পারে। কারণ আমাদের জেতার হার খুবই কম। গতবারও এটা হয়েছিল। টেস্টে খারাপ খেলার পর আমাদের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলো। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতার পর ওই মিডিয়াই আমাদের প্রশংসা করেছে। কাজেই ভালো খেললে প্রশংসা করতেই হবে। তবে ইংল্যান্ড শুধু বাংলাদেশ না, সবার জন্যই কঠিন। অস্ট্রেলিয়াও এখানে গত দুটি অ্যাশেজ হেরেছে।’
২০০৫ সালে বাংলাদেশ দলের সবার জন্যই লর্ডসে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল প্রথম। আর এবার আশরাফুলসহ দলের তিন ক্রিকেটারের কাছে লর্ডস পুরোনো মাঠ। ২০২০ সালের আগে ইংল্যান্ডে আর টেস্ট খেলার সুযোগ নেই বলে দলের অন্যদের মধ্যেও আছে ভালো কিছু করে যাওয়ার তাড়না। সঙ্গে আছে ইংলিশ আবহাওয়ার ক্রিকেটীয় চেহারায় ফেরা। দুই টেস্টের সিরিজে ভালো কিছুর আশা করার এসবও কারণ আশরাফুলের কাছে, ‘২০০৫-এ লর্ডসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে আমরা ভালো খেলতে পারিনি। তা ছাড়া সেবার আবহাওয়া ছিল খুব ঠান্ডা, মানিয়ে নিতে পারেনি কেউ। এতগুলো প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলারও সুযোগ পাইনি। এবার টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে তিনটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে আমরা কন্ডিশনের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি। আশা করছি, ভালো খেলবে সবাই।’ এর বাইরে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক অতীতটাকেও তিনি নিয়ে আসছেন সামনে, ‘এক-দেড় বছর ধরেই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচই জেতার মতো ছিল। আমাদের গত ৫-৬টি টেস্ট ম্যাচ যদি দেখেন প্রতিটি ম্যাচই পাঁচ দিনে বা পাঁচ দিনের কাছাকাছি গেছে। কিছু ম্যাচে তো আরেকটু ভালো ব্যাটিং করলে জিতেই যাই!’
খেলাধুলায় আত্মবিশ্বাস বড় একটা ভিটামিন। নিজের ওপর আস্থা চলে আসা মানে সবকিছুই পানির মতো সহজ। আশরাফুলের কাছে যেমন সহজ লাগছে ইংলিশ মিডিয়া, ইংলিশ কন্ডিশন, সর্বোপরি নিজের ব্যাটিংটা। সবকিছুর যোগফলে একটু চাপ আছে, তবে সেটা মাঠে নামার আগ পর্যন্ত। ফর্ম ভালো থাকলে ব্যাটের আঘাতে বাউন্ডারি খুঁজে পায় ‘চাপ’ও।
‘টেন্ডুলকারকেও একবার চাপ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। টেন্ডুলকার স্বীকার করেছিলেন, তাঁর মতো ব্যাটসম্যানও চাপে ভোগেন, মাঠে নামার আগে তিনিও চাপে থাকেন। কিন্তু মাঠে নামার পর আস্তে আস্তে মানিয়ে নেন, চাপটা তখন আর থাকে না’—চাপ নিয়ে বলছিলেন আশরাফুল।

No comments

Powered by Blogger.