যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা বিল পাস হতে পারে কাল by ইব্রাহীম চৌধুরী

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিল পাস নিয়ে ওয়াশিংটনে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। এ কারণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দ্বিতীয় দফা তাঁর বিদেশ সফর বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। সব মতবিরোধ সামাল দিয়ে রোববারই স্বাস্থ্যসেবা আইন প্রণয়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। উদ্যোগটিকে শেষ মুহূর্তে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকেও পূর্ণ প্রস্তুতি চলছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই বারাক ওবামা সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলে মনে করা হয়। এ স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও এ খাতের সংস্কার করতে ব্যর্থ হন।
প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি ছিল স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সংস্কার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া।
স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার নিয়ে মার্কিন সমাজের বিভক্তি গত এক বছরে আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। ব্যয়বহুল এ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে শুধু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে নয়, সব নাগরিকের মধ্যে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা বলছে, স্বাস্থ্যবিমার নামে ভর্তুকি দিতে গিয়ে জনগণের করের বোঝা বাড়বে, স্বাস্থ্যসেবার মান নেমে যাবে এবং একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মবিমুখতা বাড়বে। এসবের মধ্যে সরকারি অর্থে গর্ভপাতের পক্ষে-বিপক্ষেও বিতর্ক শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিজ দল ডেমোক্রেটিক দলও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। টি-পার্টি নামে রক্ষণশীলদের একটি নাগরিক আন্দোলন শুরু হয় দেশজুড়ে। করের বোঝা বৃদ্ধি এবং সরকারি ব্যয় বাহুল্যের বিরুদ্ধে জমজমাট প্রচারণা চলে গত এক বছর। এর মধ্যে বছরের শেষ প্রান্তে মার্কিন কংগ্রেসে দুই দফা স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে প্রথম দফা একটি সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রথম দফার এ সংস্কার প্রস্তাবে উদারনৈতিক মহলের ধারণাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। গত বড়দিনের প্রাক্কালে সব রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার বিরোধিতার মুখে সিনেটে দ্বিতীয় দফা সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সংস্কার প্রস্তাবটির সঙ্গে পূর্ববর্তী প্রস্তাবের সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ম্যাসাচুসেটস উপনির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল সিনেটে আসন হারালে দলে উত্কণ্ঠা দেখা দেয়। নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়ায় রাজ্য গভর্নর পদেও ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটে। এর মধ্যে প্রচণ্ড রাজনৈতিক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট ওবামা ব্যক্তিগতভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে ডেমোক্রেটিক দলের অনেক আইনপ্রণেতাও এখন আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলে, কংগ্রেসের রোববারের অধিবেশনে স্বাস্থ্যসেবা আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ২১৬ ভোট পক্ষে আনা সম্ভব হবে। হোয়াইট হাউস থেকেও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা আইন প্রণয়নের কারণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বৃহস্পতিবার আকস্মিকভাবে তাঁর ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া সফর জুন পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেন। আগামীকাল তাঁর ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি রবার্ট গিবস বলেন, ‘সফর স্থগিত করার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু এখন বিদেশ সফরের চেয়ে আমরা স্বাস্থ্যবিমা বিল পাস হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি।’ তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা এ যুদ্ধের অবসান দেখতে চান। ওবামা এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ার জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি এ বছরই ইন্দোনেশিয়া সফর করব।’
১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেয়ার আইন প্রণীত হয়েছিল। এ আইনের ফলে অতিদরিদ্র, শিশু ও অক্ষমদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সীমিত চিকিৎসা-সুবিধা নিশ্চিত রয়েছে। নতুন স্বাস্থ্য-সংস্কার আইন প্রণীত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিককে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিমার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কর্মক্ষেত্র থেকে স্বাস্থ্যবিমা প্রদান করা হবে। বিমা গ্রহণ না করলে নাগরিকদের বছরে ৬৯৫ ডলারের জরিমানা দিতে হবে। কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের লোকজন স্বাস্থ্যবিমা গ্রহণের জন্য সরকারি ভর্তুকি পাবে।
মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলের নেতা জন বয়েনার বলেছেন, দেশের জনগণ স্বাস্থ্যসেবা বিল পাস নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যয়বহুল এ প্রস্তাব যাতে কোনোভাবেই কংগ্রেসে পাস না হয়, তার জন্য রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.