লিবিয়া থেকে নাইজেরীয় দূত প্রত্যাহার

লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মার আল গাদ্দাফির একটি মন্তব্যের বিরোধিতা করে সে দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে এনেছে নাইজেরিয়া। চলতি সপ্তাহে গাদ্দাফি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়াতে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে নাইজেরিয়াকে ভাগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ কারণে ত্রিপোলি থেকে আবুজা তাদের দূত সরিয়ে আনে। খবর এএফপির।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্যকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রলাপ’ বলে আখ্যায়িত করে। এতে বলা হয়, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাদ্দাফির এ মন্তব্য তাঁর নিজের ঘোষিত আফ্রিকার ঐক্য ও সংহতি প্রচেষ্টার সঙ্গে তামাশার শামিল। এর আগে সে দেশের সিনেট সভাপতি ডেভিড মার্ক ওই মন্তব্যের জন্য গাদ্দাফিকে সরাসরি ‘পাগল’ বলে বিদ্রূপ করেন।
গত সপ্তাহে নাইজেরিয়ায় মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েক শ লোক নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গাদ্দাফি দেশটিকে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলেন।
চলতি সপ্তাহে আফ্রিকার ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে গাদ্দাফি বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের নেতা মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব অনুসারে হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান ও ভারত নামে আলাদা দুটি রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে নাইজেরিয়াকে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে দুই ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। গাদ্দাফি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত। তাদের জন্য সেখানে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে লাগোসকে সে রাষ্ট্রের রাজধানী করা যেতে পারে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা মুসলমান-অধ্যুষিত। সেখানে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আবুজাকে রাজধানী করা যেতে পারে। এতে সাম্প্রদায়িক হানাহানি থেকে এ অঞ্চলের মানুষ মুক্তি পাবে।
গাদ্দাফির এ মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাইজেরিয়া সরকার। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওজো নবু বলেছেন, গাদ্দাফি আফ্রিকার অখণ্ডতা রক্ষার কথা বলেন, অথচ তিনিই নাইজেরিয়াকে ভেঙে দেওয়ার মতো উসকানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা তাঁদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছেন। তবে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নাইজেরিয়া যে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে, তা বোঝানোর জন্যই রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে গাদ্দাফি তাঁর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
এদিকে নাইজেরিয়ার পার্লামেন্ট থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতি গাদ্দাফিকে ঐক্যবিরোধী বক্তব্য দেওয়া থেকে নিবৃত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে গাদ্দাফির ‘আসল উদ্দেশ্য’ অনুসন্ধানের জন্য আফ্রিকান ইউনিয়নকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে নাইজেরিয়া।

No comments

Powered by Blogger.