কমে যাচ্ছে দেশের রপ্তানি আয় -গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নীতি-সহায়তা অপরিহার্য

দেশের রপ্তানি আয়ের সার্বিক চিত্রটি এখন সুখকর নয়। বিশেষ করে প্রধান রপ্তানিমুখী পণ্য তৈরি পোশাকের। সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সামগ্রিক রপ্তানি যেখানে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ কমে গেছে, এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি কমেছে গড়ে ৭ শতাংশ। আবার প্রথম আলোর আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রেও রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। এটাকে গুরুত্বপূর্ণ এই বাজার হাতছাড়া হওয়ার আলামত হিসেবে বিবেচনা করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি আয়ের প্রবণতা এখন একটি আশঙ্কাজনক দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করা যায়। আর তাই এদিকে বিশেষভাবে এখনই নজর দেওয়া প্রয়োজন।
বস্তুত বিশ্বমন্দার ধাক্কা রপ্তানিমুখী বিভিন্ন পণ্যের ওপর যে পড়েছে, তা অনেক দিন আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। তবে এই মন্দা মোকাবিলার জন্য দেশের রপ্তানিকারক ও শিল্পোদ্যোক্তারা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তা প্রয়োজনীয় হলেও পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। আর এখন প্রকট হয়ে উঠেছে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। গ্যাসের চাপ কম থাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলে পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলো পূর্ণমাত্রায় উত্পাদন করতে পারছে না। ঘন ঘন বিদু্যুত্-বিভ্রাটে এসব কারখানায় যন্ত্রপাতি ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না। এভাবে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। বাড়ছে অপচয়। পিছিয়ে যাচ্ছে উত্পাদন। এই বিপদ সামাল দিতে কোনো কোনো রপ্তানিকারক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠিয়ে বাজার ধরে রাখার জন্য বিমান ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা সার্বিক ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সুতরাং, বাইরে থেকে মন্দার ধাক্কা তৈরি পোশাকশিল্পে যতটা না নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে অভ্যন্তরীণ সমস্যা। রপ্তানিকারকদের নানা তত্পরতায় গত বছরের শেষভাগ থেকে নতুন নতুন বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। আসছে নতুন নতুন কাজ। যেমন: বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) জাপান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাজার ধরার চেষ্টা চালিয়েছে। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এসব বাজার থেকেও কার্যাদেশ পাওয়া যাবে, যা সনাতন বাজার-নির্ভরতার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে। কিন্তু দেশে যদি গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট থাকে, উত্পাদকদের যদি অনেক বেশি ব্যয় করে রপ্তানি বজায় রাখতে হয়, তাহলে তা বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। বরং অনেক প্রতিষ্ঠানই বসে যেতে পারে। এর আর্থসামাজিক ফলাফল হবে ভয়াবহ। সরকারকে এই কঠিন সত্য উপলব্ধি করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট নিরসনে অর্থবহ ব্যবস্থা নিতে হবে। তৈরি পোশাক খাতকে দিতে হবে যথাযথ সহযোগিতা।

No comments

Powered by Blogger.