যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ by ইব্রাহীম চৌধুরী

ইরাক অভিযানের সপ্তম বার্ষিকী ছিল গত শনিবার। এ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক জড়ো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধনীতির সমালোচনা করে এবং বিদেশে মোতায়েন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শহরে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে যুদ্ধবিরোধী সংগঠনের জোট অ্যাক্ট নাউ টু স্টপ ওয়ার অ্যান্ড এন্ড রেসিজম বা অ্যানসার।
সমাবেশে ক্ষুব্ধ জনতা বলে, ক্ষমতা থেকে জর্জ বুশের প্রস্থান ঘটেছে। লাখো কোটি জনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল যুদ্ধের অবসান ঘটবে। কিন্তু গত এক বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে যুদ্ধ যেন এক অন্তহীন উপাখ্যান হয়ে উঠেছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভে সর্বত্র যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বিচারের দাবি জানিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
ওয়াশিংটন ডিসিসহ সর্বত্র বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। নাগরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের কর্মী সিনডি শিহানসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ছয় বছরের তুলনায় এবারের যুদ্ধবিরোধী সমাবেশে লোকসমাগম কমেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ইরাক-আফগান যুদ্ধে ক্লান্ত মার্কিন জনগণ এখন ক্ষুব্ধ ওবামা প্রশাসনের ওপর। জর্জ বুশের যুদ্ধনীতি অনুসরণ করার কারণে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতিও প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভ প্রকাশ্য হয়ে ওঠে সমাবেশগুলোতে।
ওয়াশিংটন ডিসির লাফায়েত স্কয়ার এলাকায় প্রায় ১০ হাজার লোক সমবেত হয়। তারা অবিলম্বে ইরাক ও আফগান রণাঙ্গন থেকে, মার্কিন সেনাসদস্যদের ফিরিয়ে আনার জন্য স্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা প্রতীকী কফিন বহন করে হোয়াইট হাউসসংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে উদ্দেশ করে চিত্কার করে বলতে থাকে, এই যুদ্ধাপরাধীকেও গ্রেপ্তার করা হোক।
সমাবেশে নাগরিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর পূর্বসূরি জর্জ বুশকেই অনুসরণ করছেন। গুয়ানতানামো বন্দিশিবির বন্ধ করা হয়নি। লোকজনকে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা হচ্ছে। জর্জ বুশের সঙ্গে বারাক ওবামার পার্থক্য হচ্ছে, ওবামা ভালো বক্তৃতা করেন। বিক্ষোভকারীরা ইরাক যুদ্ধ শুরু করার জন্য দায়ী বুশ প্রশাসনের লোকজনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানায়।
নিউইয়র্ক নগরের টাইম স্কয়ারে একদল যুদ্ধবিরোধী দাদি-নাতি বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। তাঁরা বলেন, দেশ ভেঙে পড়ছে। যুদ্ধ এখন প্রহসন। বিক্ষোভকারীদের একজন লিজ একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে লিখা ছিল, ‘বোমা নয়, রুটি চাই।’
এ ছাড়া লস অ্যাঞ্জেলেস, ফ্লোরিডাসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান নগরে ছোট-বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। ২০০৩ সালে ইরাক অভিযানের পর এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মার্কিনরা তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। আয়োজক সংগঠক অ্যানসারের সংগঠক কোরাজন এসগুয়েরা বলেন, ‘আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনার প্রত্যাহার চাই।’
আইক্যাজুয়ালটিস ডটঅর্গ নামের ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী, ইরাক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে চার হাজার ৩৮৫ জন মার্কিন সেনা মারা গেছে। আর কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আফগানিস্তানের রণাঙ্গনে মারা গেছে আরও এক হাজার ২৪ জন মার্কিন সেনা। পাশাপাশি এসব যুদ্ধে দুই দেশেই অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.