সীমান্তে শান্তি বজায় থাকুক

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেকোনো পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত সমস্যাটি আলোচিত হয়ে থাকে এবং যথারীতি নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, বিএসএফ ভবিষ্যতে সংযত আচরণ করবে। হয়তো ভারতের নীতিনির্ধারকেরা বিএসএফকে সে কথা বলেও থাকেন। কিন্তু বাস্তবে বিএসএফের আচরণে তার কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যায় না। এ প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার নয়াদিল্লিতে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) আয়োজিত যৌথ সংলাপে দেওয়া ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাইর আশ্বাসবাণী বাংলাদেশি নাগরিকদের কতটা আশ্বস্ত করবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তিনি অন্তত সমস্যাটির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। ভারত একতরফাভাবে এক বছরের জন্য সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলেও স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন।
কেবল বাংলাদেশ-ভারত নয়, যেকোনো দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান জরুরি। সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ বন্ধ রাখার দায়িত্ব সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। এ ক্ষেত্রে বিএসএফ কতটা সফল হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাদের হাতে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ বন্ধ হোক, তা সবাই চায়। তাই বলে এসব অপরাধ দমনের নামে মানুষ মারার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না।
ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, দুই দেশের মোট চার হাজার ৯৫ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার অমীমাংসিত রয়েছে। সমাধান হয়নি ছিটমহল সমস্যারও। গত ৩৯ বছরেও এ সমস্যার সমাধান না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এ জন্য কোন পক্ষ বেশি বা কম দায়ী, সে বিতর্কে না গিয়ে যে কথাটি জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন তা হলো, অবিলম্বে অচিহ্নিত সীমান্ত চিহ্নিত করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে। স্বরাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করার কথা বলেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশি ভিসাপ্রার্থীদের ভারতীয় ভিসার জন্য বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে পারস্পরিক অবিশ্বাস-অনাস্থাও। ভারত ও বাংলাদেশে যেকোনো সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে যোগ দিতে গেলে আমন্ত্রণকারী দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হয়। দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের নাগরিকদের জন্য এ ধরনের বিধিনিষেধ কাম্য নয়।
জি কে পিল্লাই স্বীকার করেছেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সহযোগিতা সন্তোষজনক। স্বভাবত বাংলাদেশও ভারতের কাছে অনুরূপ সহযোগিতা আশা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে শুভ সূচনা ঘটেছে, তাকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হলে সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা তথা বিএসএফের গোলাগুলি বন্ধের বিকল্প নেই। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের আশ্বাসের বাস্তবায়নই দেখতে চাইছে বাংলাদেশের মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.