পশ্চিমবঙ্গে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

ভারতের মাওবাদী প্রভাবিত সাতটি রাজ্যে মাওবাদীদের ডাকে গতকাল সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ্ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় যৌথ বাহিনীর অত্যাচার এবং সরকারের ঘোষিত অপারেশন গ্রিন হান্টের প্রতিবাদেই মাওবাদীদের এই বনেধর আহ্বান। এই সাতটি রাজ্য হলো ঝাড়খণ্ড, বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, অন্ধ্র প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র। তবে মহারাষ্ট্রে তারা মাও প্রভাবিত মাত্র তিনটি জেলায় বন্ধ্ ডেকেছে।
এদিকে বন্ধ্ শুরুর প্রথম দিনেই মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী-অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভালুককোনিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেললাইন উড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে সকাল থেকে আদ্রা-মেদিনীপুর লাইনে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। এ ছাড়া মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহালের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। এতে ওই সব এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যানবাহন চলাচল। পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোথাও মাওবাদীদের এই ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ্ তেমন কোনো সাড়া না ফেললেও জঙ্গলমহালে এর সাড়া পড়েছে। জঙ্গলমহালের বিভিন্ন হাটবাজার বন্ধ রয়েছে।
মাওবাদী দমনে ‘সেন্দ্রি’ কমিটি
পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহালের যে আদিবাসীরা মাওবাদী আন্দোলনে মাওবাদীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, এবার সেই আদিবাসীরাই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে মাওবাদীদের ওপর। মাওবাদীরা বিশেষ করে নিরীহ গ্রামবাসীকে পুলিশের চর হিসেবে আখ্যায়িত করে যেভাবে হত্যা করছে, সেই হত্যাকে মেনে নিতে পারছে না আদিবাসী। তাই এসব হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। এবার সেই আদিবাসীদের একাংশ এসে দাঁড়িয়েছে যৌথ বাহিনীর পাশে। তারা ইতিমধ্যে গড়েছে ‘সেন্দ্রি’ কমিটি। ইতিমধ্যে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি, ঝালদার ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত গ্রামগুলোতে এই কমিটি গড়া হয়েছে। মাওবাদীরা যাতে ওই সব গ্রামে ঢুকতে না পারে, সে জন্য সেন্দ্রি কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন গ্রামে তীর, ধনুক, টাঙ্গি ও বল্লম নিয়ে রাত জাগছে।
সাঁওতালি ভাষায় সেন্দ্রির অর্থ শিকার। এই সেন্দ্রি কমিটির সদস্যদের মূল কাজ হচ্ছে পুলিশকে গহিন জঙ্গলের পথ দেখানো।
জঙ্গলমহালে শিগগিরই শুরু হচ্ছে অপারেশন গ্রিন হান্ট। এই গ্রিন হান্টে অংশগ্রহণকারী যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সাহায্য করাই হবে সেন্দ্রি কমিটির মূল লক্ষ্য। নিমডির সেন্দ্রি কমিটির সম্পাদক মনোরঞ্জন সিং মুড়া বলেছেন, মাওবাদীরা জঙ্গলমহালে যখন এল, তখন অধিকাংশ আদিবাসীই তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। তখন তাদের মুখে ছিল উন্নয়নের বুলি। এখন ওই সব কথা থেকে সরে এসেছে মাওবাদীরা। তারাই এখন জঙ্গলমহালের অধিকার কায়েম করছে।
ফলে আদিবাসীরা বুঝতে পারছে যে মাওবাদীদের তোপের মুখে পড়ে তারা তাদের অধিকার হারাতে চলেছে। এর পরই এই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে গ্রামবাসী। গড়ে তুলেছে সেন্দ্রি কমিটি।

No comments

Powered by Blogger.