প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়া এ মাসেই মন্ত্রিপরিষদে যাচ্ছে

প্রেক্ষিত পরিকল্পনার (২০১০-২১) খসড়া এ মাসের শেষের দিকেই মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে এই পরিকল্পনা প্রণীত হচ্ছে।
এই পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে, ২০১৭ সালের মধ্যে ৯ শতাংশে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২১ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয় এক হাজার ৮০০ ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে জানান, ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়া ইতিমধ্যে প্রণয়ন হয়ে গেছে। খসড়ার ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেওয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।’
শামসুল আলম আরও জানান, প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে শিক্ষা এবং কারিগরি শিক্ষা। আর তাই ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা পুরোপুরি দূর করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আলোকে প্রণীত ও বাস্তবায়িত হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে ১৯৯৫-২০১০ সময়কালের জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর করা যায়নি বলে জানান শামসুল আলম।
তবে এবারের পরিকল্পনাটিকে দেশের প্রথম অংশীদারিমূলক প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
জাতীয় পর্যায়ে ১০টি ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ২২টি পরামর্শ সভা করা হয়েছে এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নের জন্য। এতে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় সামষ্টিক অর্থনীতির যে সূচক দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যায় জিডিপিতে মোট বিনিয়োগের অংশ ২০২১ সাল নাগাদ ৩৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশে এবং দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রাও ধার্য করা হয়েছে এতে।
কার্যকর রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মাধ্যমে ২০২১ সাল নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার কথা বলা হয়েছে এতে।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়ানোর ওপর কিছুটা জোর দেওয়া হয়েছে। আর তাই জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২০১৫ সালের মধ্যে জিডিপির ৩০ শতাংশ ও ২০২১ সালে জিডিপির ৩৬ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ২০১৫ সালের মধ্যে ৫৪ শতাংশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫২ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়াতে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি ঘটানোর জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাত হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালের মধ্যে আট হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে হবে।
২০২১ সাল নাগাদ দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা দলিলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং কয়লাভিত্তিক উৎপাদন বাড়িয়ে ৫৩ শতাংশে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরমাণু বিদ্যুৎ মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহার জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আর তাই এতে ২০১৩ সালের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ও ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের ৫০ শতাংশ ইউনিয়নে ২০১৫ সালের মধ্যে, ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ ইউনিয়নে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটানোর কথা বলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.