মোবাইল ফোনের সফটওয়্যার নির্মাণ কর্মসংস্থানের বড় উৎস by ফখরুল ইসলাম

ফোরাম নকিয়ার এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেভেলপার সম্পর্ক বিভাগের প্রধান কেনি ম্যাথারস বলেছেন, ‘মোবাইলে ব্যবহারোপযোগী নতুন নতুন সফটওয়্যার কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ তৈরি করতে পারে। মোবাইল ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ যেহেতু একটি বড় বাজার, সুতরাং এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগও অন্য দেশের তুলনায় বেশি।’
গত সোমবার সিঙ্গাপুরের আলেকজান্ডার টেক পার্কের নকিয়া কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে কেনি ম্যাথারস সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় ফোরাম নকিয়া এশিয়ার ডেভেলপার রিলেশনস ম্যানেজার সুমিরে ফুরুইয়া, মিডিয়া অ্যান্ড ওভি সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার নেলসন উই, নকিয়া ইমার্জিং এশিয়ার কমিউনিকেশন ম্যানেজার মৌটুসি কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে গত সেপ্টেম্বরে দেশব্যাপী সফটওয়্যার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে নকিয়া। শর্ত দেওয়া হয়, একেকটি দলে দুজন করে সদস্য থাকবে এবং প্রতি দলকে তিনটি করে ধারণা দিতে হবে। সে অনুযায়ী ৪০০ দল এতে অংশ নেয়। তবে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় ৩০ দলকে। এ থেকে নির্বাচন করা হয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের দুই ছাত্রের গড়া বাটারফ্লাই এবং বিজেআইটি লিমিটেড নামক দুই প্রতিষ্ঠানকে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্প্রতি প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গাপুরের নকিয়া কার্যালয়ে।
দুটি দলই উইজেটের মাধ্যমে তাদের সফটওয়্যার তৈরি করে। বাটারফ্লাই দলের সদস্য আশরাফুল আবেদীন ও মাহমুদুর রহমান। আর বিজেআইটির এ কে এম আহমেদুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল করিম। বাটারফ্লাই তৈরি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওপর একটি সফটওয়্যার। এতে তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির শেয়ারমূল্যের ওঠানামা স্বল্প ব্যয়ে জানা যাবে। একবার ঢুকলে গ্রামীণফোনে খরচ পড়বে মাত্র ৪১ পয়সা। শুধু মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্যই এ সফটওয়্যার।
মোবাইলের সেটিং অপশনে মিসড কল, ইনকামিং ও আউটগোয়িংয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বর সংরক্ষণ করা থাকে। এর আগের কলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। বিজেআইটি তৈরি করেছে এমন একটি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে কল হওয়া বা কল আসা অনেক পুরোনো নম্বর ও ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) খুঁজে পাওয়া যাবে। উইজেটের মাধ্যমে তৈরি বলে এতেও খরচ অনেক কম।
নকিয়ার কেনি ম্যাথারস বলেন, ‘বাংলাদেশের উপযোগী বিভিন্ন ডিভাইস তৈরি করে ডেভেলপাররা যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারেন, সে জন্যই এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।’ বিজেআইটি ও বাটারফ্লাইয়ের সাফল্যে তিনি খুশি এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের আরও সফটওয়্যার পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী। এসব ব্যাপারে ফোরাম নকিয়ার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
কেনি ম্যাথারস জানান, বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটিরও বেশি গ্রাহক নকিয়া ডিভাইস ব্যবহার করছে। একার পক্ষে ক্রমবর্ধমান গ্রাহক চাহিদা পূরণ সম্ভব নয় বলে নকিয়া তৃতীয় পক্ষের ডেভেলপারদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। এ ডেভেলপাররা গ্রাহকদের সন্তুষ্টির জন্য সৃজনশীল অ্যাপ্লিকেশন ও সেবাসুবিধা সরবরাহ করে থাকে।
তিনি জানান, গ্রাহকদের কাছে নকিয়া ডিভাইসকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তথ্য দিয়ে ডেভেলপারদের সহযোগিতা করে ফোরাম নকিয়া। সম্প্রতি ফোরাম নকিয়া ৪০ লাখ নিবন্ধিত ডেভেলপারের কাছে তথ্য সরবরাহ করেছে এবং ১৫ লাখেরও বেশি দর্শক যোগাযোগ করেছে ফোরাম নকিয়া ডটকম (forum.nokia.com) ওয়েবসাইটে।
সাংবাদিকদের আরও জানানো হয়, ডেভেলপারদের স্বীকৃতির জন্য ‘নকিয়া চ্যাম্পিয়নস’ নামে প্রতিবছরই বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেয় নকিয়া। প্রতিবছর দুজন করে নতুন চ্যাম্পিয়ন বাছাই করা হয়। উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন ও ব্যতিক্রমী মোবাইল সফটওয়ার তৈরির জন্য ফোরাম নকিয়া পিআরও আকসেলারেটর নামক আরেকটি কর্মসূচি রয়েছে নকিয়ার। এর সদস্যরা বাড়তি প্রযুক্তি, বিপণন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে সেবাসুবিধা পেয়ে থাকেন। এটি ডেভেলপারদের জন্য নকিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবাসুবিধা।
নেইলসন উই জানান, নকিয়ার সর্বশেষ সংযোজন হলো অভি স্টোর নামক একটি ওয়েবভিত্তিক শক্তিশালী মাধ্যম। এতে বিপুল তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। মোবাইল ফোনসেট হারানো বা চুরি গেলে ওভি স্টোরের মাধ্যমে সহজেই সব নম্বর ফিরে পাওয়া সম্ভব। নানা ধরনের ফানি গেইমস এবং এক্স-রে অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে ওভি স্টোরে।

No comments

Powered by Blogger.