স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল পদ্ধতি -এর কোনো বিকল্প নেই

স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল-ব্যবস্থা নতুন করে মেনে চলার প্রথম দিনে যানজটের খবর প্রকাশিত হয়েছে পত্রপত্রিকায়। নগরবাসীদের যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে তাদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বিশ্বের সব আধুনিক শহরেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল-ব্যবস্থা থাকার পরও ঘোষণা দিয়ে তা কার্যকর করতে হয় এবং তার কী প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণেই বাস্তব পরিস্থিতি আজ এখানে এসে ঠেকেছে। শুরুতে অভিজ্ঞতা যা-ই হোক, আমরা মহানগর পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
যানজটের কারণে নগরবাসীকে কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিদিনই অসহায়ভাবে যানজট সহ্য করে যেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঢাকা শহরের আয়তন ও লোকসংখ্যা অনুযায়ী যে পরিমাণ রাস্তা থাকা উচিত, তার অভাব ও গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিকে যানজটের স্বাভাবিক কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এটা বাস্তব, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির বিষয়টিও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল-ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেনি ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু কেন? আইন ও নিয়ম মানতে যদি নাগরিকদের বাধ্য করা না যায়, তা ট্রাফিক পুলিশ বা সামগ্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবেই মানতে হবে।
ঢাকা শহরের যানবাহনের সংখ্যা, কোন মোড়ে মিনিটে কী পরিমাণ গাড়ি অতিক্রম করে—এ ধরনের নানা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্যাপক আয়োজন করে ঢাকায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর আমরা দেখলাম, একই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ও ট্রাফিক পুলিশের হাত—দুটোই চলছে। সবুজ বাতি জ্বলে আছে, এর পরও গাড়ি থেমে আছে বা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছেন। আবার লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় পুলিশ গাড়ি যেতে ইশারা করছে। কোনো সভ্য দেশ বা আধুনিক নগরের লক্ষণ এটা নয়। মহানগর পুলিশের কমিশনার শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে এর কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বয়ংক্রিয় বাতির মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কেন কার্যকর করা যায়নি, সে ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, পিক ও অফ পিক আওয়ারে যানবাহনের চাপ একেক দিকে একেক রকম থাকায় সিগন্যাল অমান্য করে ট্রাফিক পুলিশকে যান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। আমাদের বক্তব্য, এটা যদি সমস্যা হয়ে থাকে, তবে সিগন্যাল-ব্যবস্থা সমন্বয় করতে সমস্যা কোথায়? এ সমস্যা খুঁজে বের করতে এত সময় লেগে গেল! যা-ই হোক, এখন সমস্যার একটি দিক যখন চিহ্নিত করা গেছে তখন দ্রুত এর সুরাহা করা হবে, সে আশা আমরা করতে পারি। আর আগে যানবাহনের যে সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন রাস্তায় সিগন্যালের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে, কারণ যানবাহনের সংখ্যা ও চাপ আগের তুলনায় বেড়েছে। অনেক মোড়ে সিগন্যাল বাতি অকার্যকর রয়েছে, সেগুলো ঠিক করতে হবে।
একই সঙ্গে আরও কিছু দিক বিবেচনায় রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করছি। সিগন্যাল অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এমনকি বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া যদি কোনো ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল অমান্য করে নিজেদের মতো যান নিয়ন্ত্রণ করে, তবে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এ জন্য তদারকির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করা গেলে যানজটের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমানো যাবে। এ ক্ষেত্রে উল্টো রাস্তায় যানবাহন, বিশেষ করে রিকশা চালানো সম্পূর্ণ বন্ধ করা জরুরি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সামনে উল্টো পথে গাড়ি চলতে দেখা যায়। অনেকে ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালান—এটা চলতে পারে না। ফুটপাতগুলো যাতে হাঁটার উপযোগী থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা মনে করি, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল-ব্যবস্থার মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই। এখন যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী সমস্যাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.