ব্যাংকগুলোর তারল্য বৃদ্ধি সাময়িক - সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেছেন, দেশের ব্যাংকগুলোয় তারল্য বাড়লেও এটা সাময়িক। কারণ, দেশে বর্তমানে বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে, একই সঙ্গে প্রবাসী-আয় বেড়েছে। আর এতেই ব্যাংকগুলোয় তারল্য বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সবার কাছে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতি আয়োজিত ‘হালকা প্রকৌশলশিল্পের উন্নয়নে নীতি ও কাঠামোগত বাধাসমূহ দূরীকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মশিউর রহমান বলেন, ‘ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শিল্প খাতকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে এতে দুষ্টচক্রের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া নিজের বিনিয়োগের চেয়ে অধিক পরিমাণে ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করে ব্যবসা ভালো করতে না পারলে তখন ঋণ মওকুফ ও অবলোপনের চিন্তা করতে হয়।’ তাই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিশেষ সুবিধা না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত এ সেমিনারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বুয়েটের অধ্যাপক এম কামালউদ্দিন।
মুক্ত আলোচনায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আকতারুজ্জামান মঞ্জু, এসএমই ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন আহমেদ, মাইডাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মশিউর রহমান বলেন, ‘কম বিনিয়োগের ছোট ছোট শিল্পে কর্মসংস্থান তুলনামূলক বেশি হয় এবং মুনাফার পরিমাণ বেশি। এ জন্য এ খাতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’
উপদেষ্টা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যে নীতির ওপর ভিত্তি করে ভ্যাট নির্ধারণের কথা বলা হয়েছিল আর বর্তমানে যেভাবে আদায় করা হচ্ছে, এতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।’ অনেক সময় রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য অধিক হারে ভ্যাট আদায় করা হয় বলে তিনি জানান।
হালকা প্রকৌশল শিল্পে ভ্যাট আদায়ে কিছুটা অসংগতি রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে সংশোধনের আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মঈনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো বড় উদ্যোক্তাদের ঋণ দিলেও ছোট উদ্যোক্তাদের দেয় না। অথচ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও চলতি মূলধন হিসেবে ঋণের প্রয়োজন হলেও ছোট শিল্পগুলো তা পায় না। তিনি ছোট উদ্যোক্তাদের এককভাবে ঋণ না দিয়ে পাঁচজনকে একসঙ্গে দলভিত্তিক ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্প ভালো হলে হালকা প্রকৌশলশিল্প ও এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০ শতাংশের কম সুদে ঋণ দেবে।’
মূল প্রবন্ধে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে ৪০ হাজারের বেশি হালকা প্রকৌশল শিল্প রয়েছে। এ খাতে উদ্যোক্তারা দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান দুই শতাংশ। সরাসরি ছয় লাখ ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখ লোক এ খাতের ওপর নির্ভরশীল।’ এ খাতের বিকাশে সরকারের নীতিসহায়তাসহ অসংগতিগুলো দূর করার দাবি জানান।
মুক্ত আলোচনায় উদ্যোক্তারা বলেন, দেশের প্রকৌশলশিল্পের উদ্যোক্তাদের মেধা ও দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু চলতি মূলধনের অভাব ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছেন না। দেশের প্রকৌশলশিল্পসহ অন্যান্য এসএমই খাতের বিকাশের স্বার্থে তারা সহজ শর্তে চলতি মূলধনের জোগান ও আলাদা পল্লী স্থাপনের জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.