স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম

আটলান্টিকের এপারে বিশ্বের তাবত্ বাংলাদেশির মতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় শোনার জন্য। মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা চলছিল। আজ ছিল শীত (নিউইয়র্কে তখন ১৮ নভেম্বর, রাত ১১টা)। ঘড়ির কাঁটা যেন এগোতেই চাইছে না। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাঙালিদের মনেপ্রাণে উত্তেজনা আর উত্সাহের খবর আসতে লাগল মুঠোফোন মারফত। ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলে খ্যাত নিউইয়র্ক শহরের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য শহরের মতোই সমবেত হলো দলমতনির্বিশেষে অসংখ্য বাঙালি। ইতিহাসের কালের সাক্ষী হওয়ার জন্য স্থান-কাল-পাত্রভেদে যার যার সুবিধামতো জড়ো হলো বাঙালি-অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের গ্র্যান্ড সুইটস রেস্টুরেন্ট ও উডসাইডের ঢাকা ক্লাবে।
আমরা বাংলাদেশ সময় থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা পিছিয়ে থাকায় ১৮ তারিখ সন্ধ্যা থেকেই ভিড় বাড়তে লাগল এসব এলাকায়। সময় কাটিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো কোনো স্থানে গান ও কবিতা, আবার কোথাও কেউ কেউ জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে লাগল। সবার মনেই উত্তেজনা। রাত যত বাড়ছে, উত্তেজনা আর উত্সাহ যেন ততই উপচে পড়ছে। একই সঙ্গে ভিড়ও বেড়ে চলল, আর বিভিন্ন স্থান থেকে ফোনে কথা চালাচালি চলছে। যে যা শুনছে, তা-ই তাদের জানা মতে সর্বশেষ খবর হিসেবে অন্য সবাইকে অবহিত করছে। সবার দৃষ্টি টিভির পর্দায়। সময় গড়িয়ে চলছে, রাতও বাড়ছে। কিছুক্ষণ পর রায়ের কথা ভেসে উঠল টিভির পর্দায় (এটিএন বাংলা)। উপস্থিত সবাই ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। তারপর মোনাজাত করে শোকরানা আদায় করল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী সংগঠন সমর্থিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর অগণিত মানুষ দীর্ঘ ৩৪ বছর পর প্রতীক্ষিত রায় শুনে আবেগে আপ্লুত হলো। এই রায়ের ধারাবাহিকতায় দেশে এক এক করে সব হত্যার বিচার হবে—এই আশায় বুক বাঁধল। বিশেষ করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অতিসত্বর সম্পন্ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মধ্যরাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যে যার মতো বুকের ভার লাঘব করে ঘরে ফিরল।
ফাহিম রেজা নূর
নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

No comments

Powered by Blogger.