আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই দ্বিতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন। কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আবদুল সালাম আজিমি তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানে ৪০টিরও বেশি দেশের অতিথি উপস্থিত ছিলেন। খবর এএফপির।
নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি এবং সরকারের ভেতরে চরম দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েই কারজাই দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন। শপথ শেষে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেন এবং জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে তাঁর সরকারের সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান।
কারজাইয়ের নেতৃত্বে নতুন সরকারের সামনে তালেবানের ক্রমবর্ধমান হামলা মোকাবিলাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া আফগান যুদ্ধে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পশ্চিমাদের আস্থা ধরে রাখা এবং ক্ষুণ্ন হওয়া সুনাম ধরে রাখার চেষ্টারও উদ্যোগ নিতে হবে কারজাই সরকারকে।
শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাজধানী কাবুলজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাংবাদিকদের শপথ অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সতর্কতাস্বরূপ সরকার গতকাল সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড এবং ভারত, ফ্রান্স ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শপথ গ্রহণ শেষে হামিদ কারজাই বলেন, ‘আফগানিস্তানে দুর্নীতি একটি মারাত্মক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে নতুন এবং কার্যকর উপায় খুঁজতে আমরা শিগগিরই কাবুলে আলোচনায় বসব।’ তিনি প্রধান বিরোধী নেতা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকে সরকারে এসে কাজ করার আহ্বান জানান। মাদক ব্যবসা দমন এবং কর্মসংস্থান বাড়াতেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
হামিদ কারজাই বলেন, ‘আমি পবিত্র ইসলাম ধর্ম মেনে চলা ও রক্ষা করা, আফগানিস্তানের সংবিধান ও অন্যান্য আইন মেনে চলা ও রক্ষা এবং তা বাস্তবায়নের দেখভালের শপথ নিচ্ছি।’
আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী টুপি এবং পোশাক পরে ৫১ বছরের কারজাই বলেন, ‘অতীতের ভুল এবং গত আট বছরের যুদ্ধের ব্যর্থতা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, তালেবানের বিরুদ্ধে আট বছরের যুদ্ধের পর পশ্চিমা বিশ্ব এখন কারজাই সরকারের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছে।
হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ‘আফগানিস্তান সংকটপূর্ণ মুহূর্ত পার করছে। এ সংকটপূর্ণ মুহূর্ত পার করতে আফগান নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হামিদ কারজাই ও তাঁর সরকারের সামনে বিশাল সুযোগ এসেছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারির এটাই প্রথম আফগানিস্তান সফর।
হিলারি আরও বলেন, ওয়াশিংটন আফগানিস্তানের নতুন সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তবে তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সরকারের কার্যকর ফল দেখতে চান। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন আফগানিস্তানে জবাবদিহিতামূলক ও স্বচ্ছ সরকারব্যবস্থা আশা করে। দুর্নীতি দমনের ব্যাপারে আফগান সরকার কিছু কাজ করেছে, কিন্তু দুর্নীতি দমনে সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণে এটাই যথেষ্ট নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.