ব্যবসায়ীদের ওপর সব ভার ছেড়ে দেওয়া যাবে না -শিয়ালের কাছে মুরগি জমা!

এক শ্রেণীর অসত্ ব্যবসায়ীর বেপরোয়া তত্পরতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে তারা দফায় দফায় পেঁয়াজ, মসুরের ডাল, ছোলা, ডিম, কাঁচামরিচ এবং সর্বশেষ চিনির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই স্ব-উদ্যোগে বাজার তদারকির দায়িত্ব নিলে অবস্থা আরও খারাপ হয়। এ পর্যন্ত ব্যবসায়ী নেতারা পাঁচবার ঢাকঢোল পিটিয়ে বাজার তদারকিতে গেছেন এবং প্রতিবারই পরিদর্শন শেষে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অবশেষে তদারকিতে ইস্তফা দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করলেন যে ব্যবসায়ী দিয়ে ব্যবসায়ীদের মুনাফাবাজি বন্ধ করা যায় না।
শিয়ালের কাছে মুরগি জমা রাখা আর ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের সব দায়িত্ব তুলে দেওয়া একই কথা। বাজার-অর্থনীতিতে সরকারের হাতেও কিছু উপায় থাকে, যা ব্যবহার করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শুধু ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর না করে সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি, পেঁয়াজ, মসুরের ডাল আমদানি করে তা বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান এসব বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ক্রেতাসাধারণকে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ২০ এলাকায় ৪২ টাকা দরে চিনি বিক্রির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে ব্যবস্থা আরও আগে করা হলে মানুষকে ৭০ টাকায় চিনি কিনতে হতো না।
ডাল, চিনি, ডিমসহ অন্যান্য জিনিসের দাম এত বেশি হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না; এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। সরকারের উচিত এখনই দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। শনিবার সাড়ে ২৭ হাজার টন চিনির চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। চলতি মাসেই এক লাখ সাড়ে চার হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আসবে। সামনের মাসে আসছে আরও এক লাখ ১৫ হাজার টন। এসব খবরই তো চিনির বাজার ঠান্ডা করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বাজারে চিনির সরবরাহ কম—এ রকম গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের দুই ডিলারের কারসাজিতে এক দিনের ব্যবধানে চিনির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকার তাহলে কী করছে? গুজব রটনাকারী ও অভিযুক্ত ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন?
মূল্যবৃদ্ধিতে চাঁদাবাজির অবদানও কম নয়। এক ট্রাক পণ্য বেনাপোল থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসতে ২২টি স্থানে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়, এমন অভিযোগের সচিত্র প্রতিবেদন একটি টিভি চ্যানেলে শনিবার রাত ১০টার সংবাদে প্রচার করা হয়েছে। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগ কয়েক দিন আগে খাদ্যমন্ত্রী নিজেই করেছেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে কোনো তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার খবর আজও পাওয়া যায়নি। সরকারের এ ধরনের নিষ্ক্রিয়তা মূল্যবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
ঢালাও অভিযান নয়, যারা কারসাজি করে দাম বাড়ায়, তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করা দরকার। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এ রকম উদ্যোগ প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.