সংসদীয় কমিটিতে তলব বিতর্ক

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাহী বিভাগকে আইনসভার মাধ্যমে জবাবদিহি করার একটি অন্যতম মাধ্যম হলো সংসদীয় কমিটি-ব্যবস্থা। সংসদীয় কমিটি আইনসভায় উত্থাপিত আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে এবং তাদের সুপারিশ পেশ করে। যেহেতু আইনসভা একটি বড় ফোরাম, তাই এর কাজকে সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি-ব্যবস্থার এমন ভূমিকার জন্য কমিটিকে ‘মিনি পার্লামেন্ট’ বা ছোট আকারের সংসদ বলা হয়। সংসদীয় কমিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের দুর্নীতি ও অনিয়মসংক্রান্ত তদন্ত করা। এ তদন্তের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কমিটিতে তলব করতে পারে। এ ধরনের বিধান গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি বর্তমান আছে। সেখানে কোনো মন্ত্রী সিনেটের সদস্য না হলে তিনি সিনেটের অধিবেশনে যোগদান করতে পারেন না। এ অবস্থায় নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভার মধ্যকার সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে সংসদীয় কমিটিগুলো। কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী উপস্থিত থাকেন। সেখানে যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি মন্ত্রীকেও তলব করার ক্ষমতা কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। তাই শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের কাজের সমন্বয়সাধনে কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ব্রিটেন-ভারতসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও সংসদীয় কমিটি নির্বাহী বিভাগকে জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবিধানেও সংসদীয় কমিটি-ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়।
কিন্তু আমরা সব সময় দেখে এসেছি, নির্বাহী বিভাগের ব্যাপক ক্ষমতার কারণে সংসদীয় কমিটি যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে না। তা ছাড়া তাদের বিশেষ কোনো ক্ষমতাও দেওয়া হয়নি। বর্তমান সংসদে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন কমিটি এ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক দুজন উপদেষ্টা, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানসহ কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা, সাবেক স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপ এবং ঢাকার মেয়রকে কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য তলব করেছে। কিন্তু বেশির ভাগই কমিটির সামনে উপস্থিত হননি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকেই তলব করা ব্যক্তির সংসদীয় কমিটিতে উপস্থিত হওয়ার বাধ্যবাধকতাসংক্রান্ত্র বিধান করার কথা বলেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইন প্রণয়ন অবশ্যই প্রয়োজন, তবে কমিটিকে যেন পুলিশি ও বিচারিক ক্ষমতা না দেওয়া হয়। সামান্য কিছু নীতিগত মতানৈক্য থাকলেও এ ব্যাপারে সবাই একমত যে সংবিধানে বর্ণিত বিধানটি কার্যকর করার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা অবশ্যই প্রয়োজন। এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন করা হলে শক্তিশালী কমিটি-ব্যবস্থা প্রবর্তনে তা হবে একটি মাইলফলক, যা বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করবে।
খাদেমুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.