বিশ্বে ১.১ বিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধায় দিনে মৃত্যু ২১ হাজার -জাতিসংঘের রিপোর্ট

বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি শিশু। অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই)-এর সাথে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি হাইলাইট করেছে যে যুদ্ধরত দেশগুলোতে দারিদ্র্যের হার তিনগুণ বেশি ছিল, যেহেতু ২০২৩ সালটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংঘাত দেখেছিল।

ওপিএইচআই ও ইউএনডিপি ২০১০ সাল থেকে তাদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক প্রকাশ করেছে, সেখানে ১১২টি দেশের ৬.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। পর্যাপ্ত আবাসন, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, রান্নার জ্বালানি, পুষ্টি ও স্কুলে উপস্থিতির অভাবের মতো সূচকগুলোকে মাথায় রেখে  এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ভারত রয়েছে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকের দেশ হিসেবে, যার ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার ২৩৪ মিলিয়নকে প্রভাবিত করেছে। এর পরে রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। পাঁচটি দেশ মিলিয়ে ১.১ বিলিয়ন দরিদ্র মানুষের প্রায় অর্ধেক।

ইউএনডিপি কর্মকর্তা আচিম স্টেইনার বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংঘাত তীব্র হয়েছে এবং বহুগুণ বেড়েছে। হতাহতের সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা জীবন ও জীবিকায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সূচকটি দেখিয়েছে, প্রায় ৫৮৪ মিলিয়ন শিশু, অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী শিশুদের ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের (১৩ দশমিক ৫ শতাংশ) তুলনায় দ্বিগুণ। যুদ্ধরত দেশগুলোতে শিশু মৃত্যুহার ৮ শতাংশ, যেখানে শান্তিতে থাকা দেশগুলোতে এ হার ১ দশমিক ১ শতাংশ। এই রিপোর্টে সংঘর্ষপূর্ণ অঞ্চলের দারিদ্র নিয়ে সমীক্ষার উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ, বিপর্যয় ও আরও কিছু কারণে ১১.৭০ কোটি মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছেন।’

ইউএনডিপি দফতরের ডিরেক্টর পেড্রো কনসেইসাও বলেন, ‘সামরিক সংঘর্ষের নিরিখে এমপিআই সূচক এই প্রথম তৈরি করা হয়েছে। যা বলছে, সংঘর্ষের সঙ্গে সমান তালে দারিদ্র কীভাবে বেড়েছে।’

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ক্ষুধায় প্রতিদিন ৭ থেকে ২১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।

খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা অক্সফামের এমিলি ফার বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর দ্বারা অনাহার একটি প্রাণঘাতী অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। খাদ্য সংকট মূলত তৈরি করা হয়। গাজার প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ - যেখানে বর্তমানে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার ৮৩ শতাংশ তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সুদানে এক মিলিয়নের তিন-চতুর্থাংশ অনাহারে রয়েছে কারণ খাদ্যের উপর যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব প্রজন্মের জন্য অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে।’

অক্সফাম সতর্ক করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘শূন্য ক্ষুধা’ এর বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে।

সূত্র:আলজাজিরা

mzamin

No comments

Powered by Blogger.