চিনিকাণ্ডে সিলেটে যে কারণে অসন্তোষ by ওয়েছ খছরু

ধরন পাল্টালেও সিলেটে চিনিকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক কমছে না; বরং একের পর এক ঘটনায় সিলেটে অসন্তোষ বিরাজ করছে। রাত হলেই পাহারায় নামে সন্ত্রাসীরা। দলে দলে বিভক্ত থাকার কারণে মুখোমুখি তারা। অথচ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নীরবে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার চিনি সিলেট থেকে পাচার হয়েছে। তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে চিনি চালান আসা বন্ধ হয়নি। সীমান্তে সক্রিয় বিজিবি। এরপরও বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে নামছে চিনি। সূত্র বলছে, বিজিবি সক্রিয় থাকলেও সিলেটের চিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে আগের মতো পুলিশের সখ্য গড়ে উঠেছে। নতুন ফরম্যাটে চিনি কারবার শুরু করতে গত দুই বছরে বিতর্কিত হয়ে সিলেট থেকে চলে যাওয়া পুলিশের অনেকে ফের আসতে চাচ্ছেন। তারা তদবির, লবিং অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে; এখন যারা মাঠপর্যায়ে রয়েছেন তারাও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।  কোম্পানীগঞ্জের দয়ারাবাজার, মাঝেরগাঁও সীমান্ত রুট চিনির জন্য বিখ্যাত। ওই এলাকার চিনি চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, ৫ই আগস্টের  প্রেক্ষাপটের কারণে কিছুটা স্তিমিত ছিল। গোয়াইনঘাটে বিছনাকান্দি, মাতুরতল, হাজিপুর, খাসিয়াবস্তি, সোনাটিলা এলাকা চিনি চোরাচালানের অন্যতম নিরাপদ রুট। এইসব রুটে সীমান্ত থেকে আসা চিনির চালান নামছে। জৈন্তাপুরের আলুবাগান, ডিবিরহাওর, মোকামপুঞ্জি, লালালাখাল সীমান্ত চিনির নিরাপদ রুট। এ ছাড়া কানাইঘাটের দোনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ চিনি নামছে। এসব চিনি সীমান্ত দিয়ে নিয়ে এসে গোডাউনে রাখা হচ্ছে। চিনি বাণিজ্যের হেডকোয়ার্টার হচ্ছে জৈন্তাপুরের হরিপুর। ওখান থেকে মূলত চিনি পাচার হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

হরিপুরের চিনি নিয়ন্ত্রক চোরাকারবারি আবুলের লোকজন ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন আর প্রকাশ্যে চিনি যাচ্ছে না। এজন্য চোরাকারবারিরা ব্যবহার করছে ভিন্ন পদ্ধতি। প্রতিদিন জাফলং, জৈন্তাপুর, ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর ও বালুবাহী শত শত ট্রাক চলাচল করে। এসব ট্রাকে উপরে বালু ও পাথর দিয়ে চিনি পাচার করা হচ্ছে। পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রড কিংবা লাঠি দিয়ে চেক করে চিনির চালান আটক করতে হয়। কখনো কখনো যাত্রীবাহী পরিবহনের মাধ্যমে চিনির চালান পাচার করা হয়। এদিকে; চিনি সিন্ডিকেটের সদস্যরাও স্বীকার করেছে প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে আগের চেয়ে চিনি পাচার কমেছে। চোরকারবারিরা নিজেরা স্কট দিয়ে এখন চিনি পাচার করে। এ কারণে প্রতিদিন শতাধিক গাড়ি চিনি নিয়ে সিলেট ছাড়ে বলে জানিয়েছেন তারা। তারা জানিয়েছেন, সিলেটে এখন প্রতিদিনই চিনি লুট হচ্ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিলেও পথে পথে অনেকেই চাঁদাবাজি করছে। আর চাঁদা না দিলে জোরপূর্বক গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে সিলেটের শাহপরান, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগরসহ কয়েকটি থানায় মামলাও হয়েছে। চিনি লুটের ঘটনায় বিতর্কিত হচ্ছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। কখনো কখনো তাদের নাম ব্যবহার, আবার কখনো কখনো মাঠপর্যায়ের নেতাদের অতি লোভের কারণে নেতারা বিতর্কিত হচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছেন। তবে; এ ঘটনায় হার্ড লাইনে গেছে সিলেট বিএনপি। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে দলীয়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। চিনিকাণ্ডে সম্প্রতি সময়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নাম আলোচনায় আসায় বিব্রত নেতারাও। বিএনপি’র ভেতরে গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিতর্ক বা গ্রেপ্তারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। সিলেট বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন; বিএনপি’র নামে অবৈধ কর্মকাণ্ডে  কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, আগামীতে হবেও। এজন্য তারা প্রশাসনকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। চিনিকাণ্ডে বিএনপি’র ভেতরে অস্বস্তির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা ও ওসমানীনগরের মাঠপর্যায়ে নেতারা সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।


No comments

Powered by Blogger.