‘র’-এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদব যেভাবে পান্নুনকে হত্যা পরিকল্পনা সাজান

যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতা গুরপাতওয়ান্ট সিং পান্নুন হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রে জড়িত বিকাশ যাদব ভারত সরকারের কোনো কর্মকর্তা নন। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে তিনি ভারত সরকারের রিসার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) সাবেক একজন কর্মকর্তা। দিল্লিতে একটি অপহরণ ও হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকায় গত বছর তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা খালিস্তানপন্থি পান্নুনকে হত্যাচেষ্টায় সরাসরি জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন বিকাশ যাদবকে। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ওয়ান্টেড লিস্টে তার নাম আছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, দিল্লির উত্তর-পশ্চিমের রোহিনী থেকে একজন ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিকাশ যাদবকে গত বছর ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল। তারপর এ বছর মার্চে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। একমাস পরে জামিনে মুক্তি পান বিকাশ। পশ্চিম এশিয়ার অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে ওই ব্যবসায়ীর।

তিনি পুলিশকে বলেছেন, মুক্তি পাওয়ার পর গত বছর নভেম্বরে বিকাশ যাদবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি এ সময় ওই ব্যবসায়ীকে জানান যে, তিনি ভারত সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে তারা শিগগিরই তাদের মোবাইল নম্বর শেয়ার করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, মাঝে মাঝেই কাজ ও বন্ধুদের সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইতেন বিকাশ। তিনি ওই ব্যবসায়ীকে আরও বলেন, তিনি সরকারের ছদ্মবেশী একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তার কাজ এবং অফিসের বিষয়ে কোনো তথ্য কখনো শেয়ার করেননি। ১১ই ডিসেম্বর বিকাশ যাদব তাকে ফোন করেন এবং বলেন, কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে চান। এ জন্য তিনি লোধি রোডে যেতে বলেন ব্যবসায়ীকে। বিকাশ যাদব সঙ্গে আরও একজন ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। ওই ব্যবসায়ী বলেন, এরপর তারা জোরপূর্বক তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ডিফেন্স কলোনিতে। এ সময় তাকে বিকাশ বলেন যে, তাকে হত্যা করার জন্য গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে তিনি চুক্তি করেছেন। এ সময় বিকাশের সহযোগী ওই ব্যবসায়ীর মাথায় আঘাত করে এবং তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণের চেইন ও আংটি নিয়ে নেয়। তারা ওই ব্যবসায়ীর ক্যাফেতে যায় এবং সেখান থেকে সব টাকাপয়সা নিয়ে নেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা তাকে রাস্তার পাশে ফেলে যায়।

এ বিষয়ে কারো কাছে অভিযোগ করলে করুণ পরিণতি ভোগ করার হুমকি দেয়। দ্রুতই ওই ব্যবসায়ী পুলিশে যান। সেখানে এফআইআর করেন। ১৮ই ডিসেম্বর বিকাশ ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বিকাশের সহযোগী পুলিশকে জানায়, বিকাশ যাদবের ষড়যন্ত্রে তিনি যুক্ত হয়েছেন। কারণ, পুরনো যানবাহনের ব্যবসায় তিনি বড় রকম লোকসান খেয়েছেন। বিকাশ যাদব তাকে বলেছেন, তার পিতা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সে (বিএসএফ) চাকরি করতেন। অন্যদিকে বিকাশ যাদব বলেন, ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সাক্ষাতের দিনেই পুরো অপরাধের পরিকল্পনা করে ফেলেন। মার্চে দিল্লি পুলিশ মামলা করে। এপ্রিলে জামিন পান বিকাশ। যদিও বিকাশ ২২শে মার্চ অন্তর্বর্তী জামিন পায়, কিন্তু এপ্রিলে নিয়মিত জামিন পেয়ে যায়।

তিনটি চার্জের মুখোমুখি বিকাশ যাদব। তা হলো- একজন হিটম্যান ভাড়া করা ষড়যন্ত্র, হত্যার জন্য ভাড়া করার ষড়যন্ত্র এবং অর্থ পাচার। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক কোর্টে ফেডারেল সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট তার ও তার সহযোগী নিখিল গুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ করা হয়। এই অভিযোগ অনুযায়ী, পান্নুনকে হত্যা মিশনের মাস্টারমাইন্ড বিকাশ যাদব। তিনি অর্থের বিনিময়ে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করতে নিখিল গুপ্তকে নিয়োগ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ছদ্মবেশী এজেন্টের জালে চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেপ্তার করা হয় নিখিল গুপ্তকে। জুনে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হয়। এর আগে নিখিল গুপ্তের বিরুদ্ধে একই রকম বর্ণনা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ডকুমেন্টে। কিন্তু প্রথমবারের মতো বিকাশ গুপ্তের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছর ৬ই মে পান্নুনকে হত্যা পরিকল্পনা শুরু হয়। ওই সময় একটি এনক্রিপ্টেড অ্যাপে নিখিল গুপ্তকে একটি বার্তা পাঠান বিকাশ যাদব। তাতে তিনি লিখেছেন- আমি বিকাশ। আমার নাম আমান হিসেবে সেভ করে রাখুন।

২০২৩ সালের জুনে তারা একজন হিটম্যান ভাড়া করেন। চুক্তি হয় পান্নুনকে হত্যা করলে এক লাখ ডলার দেয়া হবে। তবে কোর্টের ডকুমেন্টে পান্নুনের নাম বলা হয়নি। এই চুক্তিতে বিকাশ যাদবের একজন সহযোগীর মাধ্যমে ১৫ হাজার ডলার আগাম দেয়ার মাধ্যমে বিকাশ যাদব ও নিখিল গুপ্ত সব আয়োজন করেন। কিন্তু তারা যে হিটম্যানকে ভাড়া করেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ছদ্মবেশী এজেন্ট। তার জালে ধরা পড়ে যান তারা। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.