কোচদের হাসি কেন বিদায় বেলায় বিষাদে রূপ নেয়! by ইশতিয়াক পারভেজ

প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ফিল সিমন্স প্রবেশ করলেন, মুখে চওড়া হাসি। সবাইকে জানালেন অভিনন্দনও। চোখে-মুখে বাংলাদেশ দল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। ৫ মাসের চুক্তি তার সঙ্গে, সফল হলে হয়তো মেয়াদ বাড়তে পারে। প্রশ্নটা এখানেই কতটা সফল হবেন তিনি! নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটে আগের ১৬ কোচের মতোই হবে তার পরিণতি। যে চওড়া হাসি নিয়ে এসেছেন বিদায় বেলা তা রূপ নেবে বিষাদে! তবে টাইগার ক্রিকেটে কোচদের পরিণতি সিমন্সের ভালোভাবেই জানা। তাই নিজের শুরুর আগেই জানিয়ে দিলেন বাইরে নজর দিতে চান না। তার সব মনোযোগ থাকবে ক্রিকেট ঘিরেই। কিন্তু এমন কথা তো বলেছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, স্টিভ রোডসও। কিন্তু কারো বিদায় সুখকর হয়নি। সবশেষ হাথুরুর পরিণতি তো আরো ভয়ঙ্কর! দুই দফা বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন আর দুইবারই বিদায় নিয়েছেন অপমানিত হয়ে। এবার তো লঙ্কান কোচ আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে। শুধু কি তাই! কতটা ক্ষোভ আর অভিমান বিদায় নেয়া কোচদের মধ্যে জমা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে যুক্তরাষ্ট্র। ২৫ বছর আগে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে বড় চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশও। কিন্তু এর পর বাংলাদেশের অর্জনটা খুব ভালো হয়নি। টাইগারদের সাবেক আর যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান কোচ স্টুয়ার্ট ল বলেই ফেললেন, দুই যুগেও  নাকি টাইগাররা এগোয়নি। কেন শেষটা শুরুর মতো হয় না কোচদের সঙ্গে! এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নয়া পরিচালক ও দেশের অভিজ্ঞ কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘আমি তো বিসিবির ভেতরে খুব বেশি ছিলাম না। তাই আসল কারণগুলো হয়তো সেইভাবে বলতে পারবো না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে ভালো কোচ বলতে আমরা বুঝি যারা জয় এনে দেবে। রেজাল্ট আসবে, আর সেটি না হলেই দূরত্ব বাড়ে।’

১৯৯০-এ জাতীয় দলের প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন মুদাসসর নজর। মাঝে কেটে গেছে ৩৪ বছর। এর মধ্যে দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে আরো ১৫ জন দায়িত্ব নেন। যেখানে হাথুরুসিংহে দুই দফায় ছিলেন দায়িত্বে। শেষ পর্যন্ত কেউ এখনো কোচ হিসেবে হাসিমুখে বিদায় নিতে পারেননি। আর বিসিবি’রও শেষ হয়নি ভালো কোচ খোঁজা। আসলে কেমন কোচ চায় বিসিবি! তার চেয়ে বড় প্রশ্ন ভালো কোচের ব্যাখ্যাটাই বা কী! শুধু তাই নয়, কোচ এসেছেন কোচ গেছেন কিন্তু টাইগার ক্রিকেটের কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে স্টুয়ার্ট ল বলছেন, গত ২৫ বছরে কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘হয়তো এখন বসে ভাবার সময় যে, আমরা যেভাবে করছি, তা কাজে লাগছে না। আমরা এগোইনি, হয়তো ভিন্ন কিছু করা দরকার। এসব আলোচনা বর্তমান বোর্ড করে না, কিন্তু তাদের খেলাটির সবদিকেই চোখ রাখতে হবে।’ অন্যদিকে ভালো কোচ কেমন হবে আর কেন কোনো কোচই সফলতা পাচ্ছেন না তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘ভালো বলতে আমরা বুঝি যে রেজাল্ট দেবে। আমার মনে হয় তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে প্রতিযোগিতা দেখে আসেন সেটি আমরা দেশে দিতে পারিনি। আমাদের ক্রিকেটে কোন প্রতিযোগিতা নেই, সেটির অভাবটা বেশ বড় হয় কোচদের কাছে যে কারণে তাদের কাছেও একটি শূন্যতা তৈরি হয়। যে কারণে এখনো আমরা পিছিয়ে।’
শুধু কি তাই! কোচদের বিষাদের বিদায় কি সফলতা না পাওয়ার ক্ষেত্রেই তৈরি হয়! এ নিয়ে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের বাংলাদেশের প্রতিনিধি আতিফ আজম বলেন, ‘দেখেন যে কোচ আসে সবার কাছেই আমাদের বড় প্রত্যাশা থাকে। যতো দিন যায়  প্রত্যাশা ততো বড় হতে থাকে। যখন সেটি হয় না তখনই তৈরি হয় জটিলতা। আরেকটি বিষয় হলো কোচরা সফল হয় না কারণ তাদের কাজের সুযোগটাও এক সময় কমে আসে। আপনি যদি স্টিভ রোডসের কথা বলেন, সে কিন্তু একটা পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিল। তাকে সেটি করতে না দিয়ে বের করে দেয়া হয়। এখানে আমাদের তো ভুল আছেই।’
কোচদের নিয়ে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তার কারণে এখন বিদেশি ভালো কোচ পাওয়াও কষ্টের। বড় মানের কোচরা তো আসতেই চান না। ফিল সিমন্স হয়তো সব জেনেই এসেছেন যে কারণে প্রথম দিনই বলে দিলেন বাইরে নয়, ক্রিকেটেই তার মনোযোগ। তিনি বলেন, ‘বাইরে কী হচ্ছে তা নিয়ে মাথা না ঘামানো এবং ক্রিকেটে মনোযোগ রাখা আমাদের দায়িত্ব। আমি সেটাই নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, যা আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তা হলো প্রস্তুতি। সোমবার শুরু হতে যাওয়া ম্যাচেই আমাদের সব মনোযোগ।’

mzamin

No comments

Powered by Blogger.