কে হচ্ছেন হামাসের পরবর্তী প্রধান?

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর পর কে তার উত্তরসূরী নির্বাচিত হবেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি নিহত হওয়ার পর স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য খালেদ মেশালের কথা উঠেছিল। বর্তমানে তিনিই সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানা গেছে। তবে হামাসের দুই কর্মকর্তা বিবিসি’কে জানিয়েছে সিওয়ারের উত্তরসূরি বাছাই করতে দ্রুতই আলোচনা শুরু করবে তারা। এক্ষেত্রে তারা হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তার নাম জানিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, সিনওয়ারের উত্তরসূরী হিসেবে সম্ভাব্য তালিকার শীর্ষে রয়েছেন তার ডেপুুটি খলিল আল-হাইয়া। তিনি গাজার বাইরে দায়িত্বরত হামাসের একজন শীর্ষ নেতা।

আল-হাইয়া বর্তমানে কাতারে রয়েছেন। তিনি হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় একজন প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে সংগঠনটির প্রতিনিধিত্ব করছেন। গাজা পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও যোগাযোগ রয়েছে সিনওয়ারের এই সম্ভাব্য উত্তরসূরীর।
তেহরানে হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করার মাত্র দুই মাস পর আবারও উত্তরসূরী নির্বাচন করতে যাচ্ছে হামাস। কেননা গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকেও হত্যা করেছে ইসরাইল। সিনওয়ার ইসরাইলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার ছিলেন।

হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, সিনওয়ারের নিয়োগ ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি সাহসী বার্তা ছিল। গত জুলাই থেকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, সিনওয়ারের নেতৃত্ব যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা ছিল।

সিনওয়ারকে হত্যা করা সত্ত্বেও, হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি গ্রহণ এবং ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য আন্দোলনের শর্ত এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। হামাস গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, দীর্ঘ শত্রুতার অবসান, মানবিক সাহায্য হস্তান্তর এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলের পুনর্গঠনের দাবি অব্যাহত রেখেছে। যে শর্তগুলো ইসরাইল স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের জোরালো দাবি হচ্ছে হামাসকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

হামাসকে অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণের ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যে আহ্বান রয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে আন্দোলনের কর্মকর্তা তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘হামাসের পক্ষে আত্মসমর্পণ করা অসম্ভব।’ তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। আমরা কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ মেনে নেব না। শেষ বুলেট এবং শেষ সৈনিক বেঁচে থাকা পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আমাদের নেতা সিনওয়ারও এমনটি করেছিলেন।

সিনওয়ারের হত্যাকাণ্ড কয়েক দশকের মধ্যে সংগঠনের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির একটি। তবে হামাসের জন্য নেতৃত্ব হারানো এটিই প্রথম নয়। ১৯৯০ এর দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে হামাসের নেতৃত্ব হারানোর ইতিহাস রয়েছে। যদিও ইসরাইল হামাসের বেশিরভাগ নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা করতে সফল হয়েছে, কিন্তু আন্দোলনটি নতুন নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে বেশি সময় নেয়নি।

এই সংকটের মধ্যে, গাজায় বন্দী থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের ভাগ্য এবং তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য কে দায়ী হবে সে সম্পর্কে প্রশ্নগুলো আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি হামাসের অবশিষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং গাজা আন্দোলনের ভবিষ্যত গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মনে করা হয়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.