সেদিন যে রিপোর্ট প্রকাশ করা যায়নি -মানবজমিন
বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার পলাতক ভাইদেরকে কেন্দ্র করে
সরকারের ভেতরে ব্যাপক রাজনৈতিক ও আর্থিক দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি
করা হয়েছে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের তৈরি একটি বিস্ফোরক
তথ্যচিত্রে। এসবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকারও দাবি করা হয়েছে।
১
ফেব্রুয়ারি প্রচারিত তথ্যচিত্রে দেখা যায়, হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া
ভাই হারিস আহমেদকে সাজা এড়াতে সাহায্য করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান
জেনারেল আজিজ আহমেদ। এজন্য তিনি নথিপত্র জাল করা ও ভুয়া পরিচয় তৈরি করে
দিয়েছেন। জাল নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে ভুয়া জন্মসনদ, শিক্ষা ও বৈবাহিক
সনদপত্র। এর ফলে পুলিশের “মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল”দের তালিকায় থাকা হারিস
বিনা বাধায় “মোহাম্মদ হাসান” নামে ভুয়া পাসপোর্টে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করতে
পারছেন। পাশাপাশি, হাঙ্গেরি ও ফ্রান্সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন।
তথ্যচিত্রে
দেখা যায় সেনাপ্রধান তার আরেক পলাতক ভাই আনিস আহমেদের সাথেও ঘনিষ্ঠ
যোগাযোগ রেখে চলেন। হারিসের মতো তিনিও ওই হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে
পলাতক আছেন। আনিস বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন।
২০১৯ সালে এই
তিন ভাইকেই একত্রে মালয়েশিয়ায় আনিসের বাসায় দেখা গেছে। এছাড়া
কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনেও এক সন্ধ্যায় ছিলেন তারা। এর ফলে
এই দুই পলাতক ভাইকে গোপন রাখার ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনও কতটা
জড়িত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী দলের করা গোপন
ভিডিওতে আরও দেখা যায় বেশ কয়েকটি অসাধু আর্থিক চুক্তিতে জড়িত রয়েছেন হারিস
আহমেদ। তিনি নিজের সেনাপ্রধান ভাইয়ের অবস্থানকে ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীর
বিভিন্ন লোভনীয় চুক্তি হাতিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
বিনিয়োগেও মধ্যস্থতাকারী হয়ে উঠার সুযোগ খুঁজছিলেন। তথ্যচিত্রে আহমেদ
ভাইদেরকে “ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অপরাধী পরিবার” হিসেবে আখ্যা দেয়
আল জাজিরা। একজন বিশেষজ্ঞ এই পরিবারের কর্মকাণ্ডকে “সংঘবদ্ধ অপরাধ
সিন্ডিকেটের” সঙ্গে তুলনা করেন।
অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে হারিসকে আল
জাজিরা “পালিয়ে বেড়ানো এক খুনি” হিসেবে বর্ণনা করে। অপর একজন ব্যক্তি তাকে
“ঠাণ্ডা মাথার অপরাধী… সাইকোপ্যাথ” হিসেবে উল্লেখ করেন। হারিস নিজেই দাবি
করেন যে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার কর্মকাণ্ডে সমর্থন রয়েছে খোদ দেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গোপনে ধারণকৃত ভিডিওতে তিনি বলেন, “এমনকি
প্রধানমন্ত্রীও বইলা দিছে যে, ‘যদি হারিস সেখানে কিছু করতে চায়, করুক। আমরা
তাকে সাহায্য করমু।’”
গোপন ভিডিওতে দেখা যায় বাংলাদেশে নিজেদেরকে কতটা
ক্ষমতাধর মনে করেন আহমেদ ভাইরা। হারিসকে যখন একজন জিজ্ঞেস করেন যে তিনি কবে
মন্ত্রী হবেন, হারিস জবাবে বলেন, “মন্ত্রী অইয়া কী করমু? মন্ত্রীগো তো
নাচাই আমরা।”
তথ্যচিত্রে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয় যে আহমেদ পরিবারের সাথে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক শুরু আশির দশকের শেষ দিক থেকে। তখনকার
বিরোধী দলীয় নেত্রী হাসিনাকে তারা নিরাপত্তা দিতেন। হারিস নিজে ছিলেন
হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী।
হাসিনার সঙ্গে আজিজ ও তার ভাইদের সম্পর্ক
কড়া আনুগত্যের। আজিজ নিজেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিজিবি প্রধান ও সেনাপ্রধান
হিসেবে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নির্বাচন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বিনিময়ে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে আজিজের আরেক ভাই জোসেফের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করান
প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, তার অপর পলাতক ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে চুপ থাকেন
তিনি।
ফিরে দেখা: আহমেদ পরিবার ও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সম্পর্ক
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার তৎকালীন দেহরক্ষী হারিস আহমেদ। ছবিটি প্রায় ২৫ বছর আগের।
আশি
ও নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে জেনারেল আজিজ আহমেদের তিন ভাই, অর্থাৎ হারিস,
জোসেফ ও আনিস ছিলেন মোহাম্মদপুরের একটি অপরাধী চক্রের অংশ। চাঁদাবাজি ও
রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দেওয়াই ছিল তাদের আয়ের উৎস। আশির দশকে সামরিক
শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা জোট
বাধেন আওয়ামী লীগের সাথে। তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে তারা নিরাপত্তা
দিতেন। হারিস আহমেদ হয়ে উঠেন শেখ হাসিনার দেহরক্ষী। হাসিনা নিজেই পরে
প্রধানমন্ত্রী হন।
গোপনে ধারণকৃত এক ফোনালাপে জেনারেল আজিজ আহমেদ এক
সহকর্মীকে ব্যাখ্যা করেন যে তার ভাইয়েরা শেখ হাসিনা ও তার দলের জন্য কী
করেছেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন হইলো জাতীয় পার্টির সময়ে সবচেয়ে খারাপ
সময় যাচ্ছিল, যখন তারা তাদের কেন্দ্রীয় অফিসে বসতে পারতো না, তখন কিন্তু
[আমার ভাইয়েরা ছিল দলের প্রধান শক্তি]। কেন্দ্রীয় নেতারা আইসা আমার ছোট
ভাইয়ের অফিসে বইসা তারা পার্টির প্রোগ্রাম ঘোষণা করতো। তারা অন্য যায়গায়
নিরাপদ মনে করতো না।”
ফোনালাপে আজিজ বলেন, তার ভাইদের অবদানের কথা
হাসিনা খুব ভালোভাবেই অবগত। দলের অন্য নেতাদের চেয়েও তাদেরকে সুনজরে দেখেন
প্রধানমন্ত্রী। আজিজ ওই ফোনালাপে দলীয় নেতাদের সাথে হাসিনার একটি কথোপকথনকে
তুলে ধরেন: “দেখো, ওর ভাইরা কে, আমার থেকে বেশি তোমরা জান না। কোথায় ছিলা
যখন আমার বাড়িতে গ্রেনেড হামলা করে? আমার বাড়িতে এরকম করে, কোথায় ছিলা
তোমরা? এই চীফের ভাইরা আমার আশেপাশে ছিল। তারা ছিল আমার মেইন চালিকাশক্তি।
তোমরা কোথায় ছিলা তখন?”
১৯৯৬ সালের হত্যাকাণ্ড
১৯৯৬
সালের মে মাসে নির্বাচনের এক মাস আগে মোহাম্মদপুরে মোস্তাফিজুর রহমান
মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি খুন হন। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে
মোস্তফা একজন মেজিস্ট্রেটকে স্বাক্ষ্য দেন যে, আজিজের ৩ ভাই অর্থাৎ জোসেফ,
হারিস ও আনিস তাকে গুলি করে। এরপরই ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ
২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে গেলে ২০০৪ সালে এই হত্যাকাণ্ডের রায় আসে। ওই
বিচারে তিনজনই দোষী সাব্যস্ত হয়। জোসেফ মৃত্যুদণ্ড পান। হারিস ও আনিস পান
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আনিস প্রথমে জামিন পেলেও পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে
ব্যর্থ হন। এরপর থেকে তিনি পলাতক। হারিস কখনই আটক হননি। তিনি শুরু থেকেই
পলাতক।
হারিসের ভুয়া পরিচয়
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : ভুয়া নামে হারিস আহমেদের পাসপোর্ট।
২০১৪
সালে আজিজ আহমেদ ছিলেন বিজিবি প্রধান। তখন তিনি হাঙ্গেরিতে বসবাসরত এক
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর শরণাপন্ন হন। “সামি” নামে ওই ব্যবসায়ীর কাছে তিনি
ভারতে বসবাসরত নিজের ভাইয়ের জন্য হাঙ্গেরিতে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে
দেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর সামির কাছে “মোহাম্মদ হাসান” নামে এক ব্যক্তির
জন্মসনদ, শিক্ষা ও বৈবাহিক সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্টের অনুলিপি
পাঠানো হয়।
এই নথিপত্র পাঠানো হয় আজিজের সরকারি কার্যালয় থেকে। এগুলোর
মধ্যে কিছু নথিতে স্বাক্ষর রয়েছে মেজর সুজাউল হক ও ব্রিগেডিয়ার হাসনাত নামে
দুই সেনা কর্মকর্তার। এই দুইজনই আজিজ আহমেদের অধীনে বিজিবিতে কাজ করেছেন।
আরেক বিজিবি কর্মকর্তা মেজর সামি রশিদও আজিজের পক্ষে ইমেইল পাঠান। ওই
ইমেইলের কপিতে সংযুক্ত ছিলেন আজিজ আহমেদও। তথ্যচিত্রে প্রমাণ করা হয় যে, এই
সবক’টি নথিই ভুয়া। এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে, আজিজই নিজের অধস্থন
কর্মকর্তাদের এই অপরাধে সম্পৃক্ত করেছেন।
হাঙ্গেরি ও ফ্রান্সে হারিসের ব্যবসা
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : হাঙ্গেরিতে ভাই হারিস আহমেদের দোকান ঘুরে দেখেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
মোহাম্মদ
হাসান নাম ধারণ করে হারিস আহমেদ ২০১৫ সালে হাঙ্গেরিতে পৌঁছান। সেখানে তিনি
একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। “বে অব বেঙ্গল” নামে প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি,
তার স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের জামাই পরিচালক হন। এই “বে অব বেঙ্গলে”র ছিল
একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এদের একটি নিভেয়ু ফ্যাশন নামে একটি কাপড়ের
দোকান। তথ্যচিত্রে দেখানো হয় ২০১৬ সালে আজিজ নিজেই সেখানে ঘুরতে যান। এরপর
টেইলরভিল ক্যাটারিং নামে আরেকটি কোম্পানি কিনে “বে অব বেঙ্গল”। বেঙ্গল
হোস্টেল নামে একটি হোটেল ও গুলাশ রেস্ট্যুরেন্ট নামে একটি রেস্তোরাঁও কিনে
কোম্পানিটি। হারিস তখন একটি অনিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাও শুরু করেন।
এরপর
ফ্রান্সেও একাধিক বিনিয়োগ করেন হারিস। নিজের ভুয়া নামে তিনি পিএইচপিবি
হোল্ডিং নামে একটি কোম্পানি কিনেন, যেখানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১৮
সালে একটি আইটি কোম্পানিতে শেয়ার কিনেন তিনি। এছাড়া মোবাইল ফোন বিক্রি ও
আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের একটি প্রতিষ্ঠানও কিনেন তিনি। মাত্র সাত মাসের
ব্যবধানে চারটি কোম্পানিতে শেয়ার কিনেন হারিস। এর মধ্যে রিয়েছে স্নিগ্ধা
নামে একটি ফাস্টফুডের দোকান, টিপিটিওয়াই নামে খুচরা পণ্যের দোকান, ও ইনফো
বে অব বেঙ্গল নামে একটি কোম্পানি। এছাড়া বে অব বেঙ্গলের নামে নিউ মুমতাজ
নামে একটি রেস্তোরাঁও ছিল।
এসব কোম্পানির বিষয়ে গ্রাহাম ব্যারো নামে
একজন আর্থিক অপরাধ বিশ্লেষক বলেন, “অপরাধের চিন্তা নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান
দাঁড় করানো হয়েছে বলে যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তারা আসলে এমন সব ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছে যেখানে নগদ লেনদেন হয় অনেক বেশি, যেমন,
হোটেল-রেঁস্তোরা। একে বলা হয় “কো-মিংলিং’ অর্থাৎ নোংরা টাকাকে ভালো টাকার
সাথে মেশানো, যেন আপনি বলতে না পারেন কোনটা কী।”
ব্যারো বলেন,
ঘটনাপ্রবাহ ও ব্যবসার ধরণ থেকে ইঙ্গিত মিলে যে, অর্থপাচারের সঙ্গে এটি
অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি আরও বলেন, “কোম্পানিগুলোর গঠন, ধরণ, বিচরণক্ষেত্র,
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও যেই ধরণের কাজে এই ব্যক্তি (হারিস) সম্পৃক্ত, তা থেকে
ইঙ্গিত মিলে যে, এখানে তার উদ্দেশ্য হলো সিস্টেমের ভেতর কালো টাকা ঢুকিয়ে
সাদা টাকা হিসেবে বের করে আনা।”
তথ্যচিত্রে আরও দেখানো হ্য যে, হারিস
ফ্রান্সের প্যারিসের উপকণ্ঠে তিনটি বাড়ির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এদের একটির
আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ লাখ ডলার বা ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ব্যারো বলেন, এই
ধরণের বাড়ি মূলত কালো টাকা জমা করার জায়গা।
নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে আজিজের পরিকল্পনা
তথ্যচিত্রে
জেনারেল আজিজ দাবি করেন যে, তিনি নিজেও ব্যবসায়িক সুযোগ খুঁজছেন। পাশাপাশি
নিজেও বাংলাদেশ থেকে অর্থ এনে “বে অব বেঙ্গল” কোম্পানিতে যুক্ত হবেন। একটি
ইমেইলে তিনি সামিকে বলছেন, “আপনি ছোট বিনিয়োগের জন্য আমাকে প্রস্তাব
পাঠাতে পারেন, আমি বিবেচনা করবো। তবে অবসরের আগ পর্যন্ত আমি সম্ভবত বে অব
বেঙ্গলের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবো না। আমার ইচ্ছা বে অব বেঙ্গলের পরিচালক
হওয়ার।”
এরপর পৃথক এক ইমেইলে তিনি বলেন, “আসলে আমার চিন্তা হচ্ছে যে,
অবসরের পর আমি বিশ্বের যেকোনো জায়গায় যখন ইচ্ছা ঘুরে বেড়াতে পারবো, বিশেষ
করে ইউরোপে।”
আজিজের হুমকি
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক: হুমকি দিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদের ইমেইল।
“হাসান”কে
সাহায্য করার পর শিগগিরই সামি বুঝতে পারলেন যে হাসানের আসল নাম হলো হারিস
আহমেদ, যিনি কিনা একজন পলাতক খুনি। সামি বলেন, “আমার মনে হলো আমি এই লোককে
একটি নিরাপদ দেশে আনার কাজে ব্যবহৃত হয়েছি। আমার সহায়তায় এই লোক এখানে
ব্যবসা-বাণিজ্য দাঁড় করেছে। আমার মনে হলো যে, হারিস ও জেনারেল আজিজ আমাকে
ব্যবহার করেছে। ভাবলাম পুলিশকে জানাই, কিন্তু আমি নিজের জীবন নিয়েও চিন্তিত
ছিলাম।”
এরপর আজিজ আহমেদ তাকে বেশ কয়েকটি হুমকি দিয়ে ইমেইল পাঠান।
একটিতে বলা হয়, “আমার ভাইকে যদি ফেরত আসতে হয়, তার জন্য যারা দায়ী, তাদেরকে
আফসোস করতে হবে। নিজের জীবনকে তারা অভিশাপ দেবে, আমি কথা দিলাম।”
এই ঘটনার পরই সামি গোপনে আল জাজিরাকে সহায়তা করতে লাগলেন।
দুর্নীতির বিষয়ে আলোচনা
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : গোপন ভিডিওতে হারিস আহমেদ।
এদিকে
হাঙ্গেরিতে অনেক ব্যবসাই ধসে পড়লো। সামি জানান, হারিস আসলে ব্যবসায়ী নন।
তিনি তার অর্থ অন্যভাবে আয় করেন। দালাল হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন চুক্তি
(বিশেষ করে সরকারি দরপত্র) পাইয়ে দেওয়ার কাজ করেন তিনি।
সামির করা গোপন
ভিডিওতে হারিসকে দেখা যায় বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। যেমন, বাংলাদেশ
সেনাবাহিনীকে হাঙ্গেরির তৈরি বুলেট সরবরাহে সামির সহায়তা চান তিনি। তিনি
বলেন, “আমি তো প্রোপার ওয়েতে যাইতে পারি না। আমি তো হের [আজিজের] ভাই…আমি
যেহেতু ওনার ভাই, আমি কোনো জায়গায় শো অমু না। আপনে শো ওইবেন। আমি কে পরিচয়
দিবেন না। দেহেন না, ক্যামনে পয়সা দিই আমনেরে। আমনে খাইবেন, আমি খামু, এইটা
তো অটোমেটিকই। অন্য কিছু না। ডাইরেক্ট চইলা যাইবো পয়সা।”
এরপর
হাঙ্গেরিতে একটি ব্যবসায়িক চুক্তির বিষয়ে জানতে পারেন হারিস, যেটি তিনি আগে
জানতেন না। তিনি তখন বলেন, “আমি যদি আটকায়ে না দিতে পারছি, আমগো কাছে যদি
না আইছে দৌড়াইয়া, তাইলে আমার নাম হারিস না। আমি আর্মির লগে কথা কইতাছি।”
এরপর
তিনি বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএফআইতে কর্মরত একজনকে কল দেন
এবং তাকে বলেন, “আপনেরে বলছিলাম না যে ইউরোপে কিছু হইলে, বা হাঙ্গেরি? আরে
একটু ভিড়াইয়া দেন। বাকিটা আমি দেহি।”
ওই ফোনালাপের পর সামিকে আরও তথ্য
দেন হারিস, “আমি তো জানি, হাঙ্গেরিতে কিছু হইলে, যদি আমার টাচে না আসে, ওই
ব্যাডা কোনো কিছুই করতে পারবো না। এই পর্যন্ত নেয়ই নাই। যদি কোনো এক ব্যাডা
নিয়া থাকে, আমারে যদি প্রমাণ দেখাইতারেন, কানডা কাইট্টা এক্কারে কুত্তারে
খাওয়াইলামু, কুত্তার গলায় দিয়া দিমু।”
হারিস আরও স্বীকার করেন যে, তিনি
পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্যের একটি চক্রে জড়িত। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
“পুলিশ বদলির জন্য কত টাকার হাতবদল হয়?” তিনি জবাবে বলেন, “এয়ারপোর্ট থানার
ওসি মিনিমাম ৫-১০ কোটি টাকা। ট্রান্সফারের টাকাটা খায় হইলো হোম মিনিস্টার,
আইজি, পুলিশ কমিশনার। এই তিনজন। মনে করেন ৫ কোটি টাকার কনট্রাক্ট করলেন, ৩
কোটি দিয়া ২ কোটি টাকা আমার। এটাই কমন। বুঝছেন? এই হইলো কাহিনী।”
হারিসের অর্থের উৎস
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : হারিসের হিসাবরক্ষক ইউসুফ আলী।
তথ্যচিত্রে
ইউসুফ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন সামি, যা গোপনে রেকর্ড করা হয়।
ইউসুফ হলেন হারিসের হিসাবরক্ষক। তিনি হাঙ্গেরিতে হারিসের মানি-এক্সচেঞ্জের
ব্যবসা চালান। হারিস কীভাবে অর্থবিত্তের মালিক হলেন সেই বিষয়ে ইউসুফ আরও
তথ্য দেন। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় হারিসের ব্যবসার বিষয়ে, তিনি বলেন,
“এগুলা মিনিস্ট্রি-লেভেলের কাজ বা সরকারি লেভেলের কোনো ধান্ধা। আপনার তো
মামু লাগবে নয়তো মামুর জোর লাগবে।”
হারিসের কোম্পানি বে অব বেঙ্গল ২০১৫
সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিজিবি প্রধানকে সরাসরি একটি প্রস্তাব পাঠায়। আর
তখন বিজিবি প্রধান ছিলেন খোদ আজিজ। সেখানে সামরিক বাহিনীর বিছানাপত্র
পাঠানোর একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ ছিল। চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল “মোহাম্মদ
হাসান” অর্থাৎ হারিসের।
তার হিসাবরক্ষক ইউসুফ আরও বলেন, ২০১৮ সালের
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেতে অনেকেই হারিসকে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব
দেন। “গত ইলেকশনে তো আমার সামনে দেখছি কতজনে ধান্দার জন্য ওনারে বলছে, ‘ভাই
আমারে একটা নমিনেশন দিয়া দেন, আমি ৫ কোটি টাকা দেব।’” তিনি আরও বলেন,
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অর্থের বিনিময়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন চুক্তি পাইয়ে দেন
মানুষকে। “হাসান… আমি ক্লিয়ারলি বলতে পারবো না, তবে মিনিমাম ৩০-৪০ কোটি
টাকা কামাই নিছে গত কয়েক দিনে।”
হোটেল বিনিয়োগের জন্য মধ্যস্থতাকারীর কাজ
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : “আর সেনাপ্রধান ওনার ভাই”।
আল
জাজিরা এরপর নিজেই ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীর ছদ্মাবরণে হারিসের কাছে লোক
পাঠায়। এই বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে একটি হোটেলে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
করতে চান। দুই পক্ষের মধ্যে একটি ভিডিও মিটিং হয়। হারিসের সাথে তখন
মোহাম্মদ রহমান নামে কানাডা-ভিত্তিক এক ব্যবসায়ী যোগ দেন। আলোচনার এক
পর্যায়ে রহমান বলেন, হারিস “উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ
রাখেন। সরকারের সাথে সম্পৃক্ত, বিশেষ করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর সাথেও।” হারিস
এরপর বলেন, বাংলাদেশে ওই হোটেল প্রকল্পে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা যা বিনিয়োগ
করবেন, তার “২০% কমিশন” তিনি চান। তার পক্ষে মোহাম্মদ রহমান বিষয়টি
ব্যাখ্যা করেন, “হারিস তার বড় ভাইয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠাবেন। আমরা এরপর
আপনাদের কাছে যাব। প্রয়োজনে লন্ডনে অবস্থিত আমাদের হাইকমিশনকেও আমরা
জানাবো। হাইকমিশনের লোকজনও আসবে যেন একে দেখতে আসল কিছু মনে হয়। এরপর তিনি
ওই প্রস্তাব আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের কাছে নিয়ে যাবেন। এতে করে
বিষয়টি আরও পাকাপোক্ত দেখাবে। এরপর তার [হারিস] কোম্পানি বাংলাদেশে আপনার
পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে।”
রহমান আরও বলেন, “মূলত, তার বড় ভাই এখন দেশ
চালাচ্ছে, কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশ চালানোর কাজ সেনাপ্রধানকে দিয়ে
রেখেছেন। আর সেনাপ্রধান ওনার [হারিস] ভাই।”
হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ভাইদের ক্ষমা
তথ্যচিত্রে
জেনারেল আজিজের টেলিফোন আলাপের আরও কিছু অংশ শোনানো হয়। তিনি সেখানে
জানান, সেনাপ্রধান হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে জানান যে, তার
ভাইয়ের (জোসেফ) মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। আজিজকে বলতে শোনা
যায়, “আমাকে মহামান্য [প্রধানমন্ত্রী] নিজে বলেছে যে, আমি চিন্তা করছি যে,
[আর কোনো বিকল্প নাই] এটা ছাড়া। এই যে আমাদের ভাইকে বিভিন্ন জিনিস করছে,
এটা কিন্তু ওনার পরিকল্পনা অনুযায়ী যে, তার [সেনাপ্রধান] হওয়ার আগে [তার
ভাইদের[ এগুলো ক্লিয়ার করতে হবে। উনি নিজে [প্রধানমন্ত্রী] এগুলো আমার সাথে
আলোচনা কইরা গ্যাছে গা।”
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি জোসেফকে ক্ষমা মঞ্জুর করেন।
র্যাব ও পুলিশকে ব্যবহার করেন হারিস
ওরা প্রধান মন্ত্রীর লোক : বেনজীর আহমেদের সাথে তোফায়েল আহমেদ জোসেফ।
গোপন
ক্যামেরায় হারিস স্বীকার করেন যে তিনি র্যাব ও পুলিশকে নিজের ব্যক্তিগত
সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করেন। পুলিশের প্রধান ও র্যাবের সাবেক প্রধান বেনজির
আহমেদের কথাও তিনি এক্ষেত্রে উল্লেখ করেন।
“বেনজির আছে, র্যাব আছে, সব
আছে। ওগো দিয়াই তো কাম করাইতেছি। আমার গুন্ডা অইলো র্যাব অহন। আমার আর
গুন্ডা লাগে না তো, আমার তো এইডিই [র্যাব] গুন্ডা। কাউরে উডাই লইয়া আও,
কাউরে ধরো…ওরাও খায়, আমিও খাই। ডাইরেক্ট কথা!”
পুলিশের বিষয়ে হারিস
বলেন, “পুলিশই তো আমগো এহন গুন্ডা। গুন্ডা আর লাগে না তো। যার পুলিশ লাইন
আছে, যার প্রশাসন আছে, সেই এহন গুন্ডা।”
প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম প্রধানকে
র্যাব দিয়ে আটক করানোর গল্পও তিনি জানান। তিনি বলেন, “ওর একটা গার্লফ্রেন্ড
আছিল। গার্লফ্রেন্ডরে ফিট করছি। গার্লফ্রেন্ডই ইনফরমেশন দিছে। মোবাইল
ট্র্যাকিং করাইছি।”
হারিস গোপন ক্যামেরার সামনে আরও বলেন, “ওরে [সেলিম
প্রধান] আমি প্লেনের থেকে নামাইয়া ধরাইছি। ওরে আমি ব্যাংককে ফোন করছি ওর
নাম্বার পাইয়া। আমি কই *, তোরে পাইলে মাইরালামু। কিন্তু তোরে মারমুনা
কিল্লাইগা জানস, মাইরা লাইলে তো তুই বুঝবি না কষ্টডা।”
র্যাব ও হাবিবুর রহমান মিজানের গ্রেপ্তার
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : ৱ্যাবের হাতে আটক হাবিবুর রহমান মিজান।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ২০১৯ সালে মোহাম্মদপুরের স্থানীয় রাজনীতিক হাবিবুর রহমান মিজানকে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল মূলত হারিস ও তার ভাই সেনাপ্রধান আজিজের কারণে। সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মিজান মূলত মোস্তফার ভাই। ১৯৯৬ সালে এই মোস্তফাকে খুন করার দায়েই আজিজের তিন ভাই দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। তথ্যচিত্রে মিজানের ভাতুষ্পুত্র বলেন, তাদের পরিবারকে সাজা দিতে আজিজ র্যাবকে ব্যবহার করছেন। তার বক্তব্য, জ্যেষ্ঠ র্যাব কর্মকর্তারা মূলত সামরিক বাহিনী থেকে আসা। আর তাদের ওপর সেনাপ্রধানের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে তার যেকোনো কথাই তারা শুনে।
আহমেদ পরিবার ও রাষ্ট্রপতি
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সাথে বিয়ের অনুষ্ঠানে জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পলাতক খুনী হারিস আহমেদ।
২০২০
সালের শুরুর দিকে জেনারেল আজিজের বড় ছেলে বিয়ে করেন। তখন বেশ বড়সড় করে
বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বিয়ের ভিডিওতে দেখা যায় যে সেখানে আজিজের ৩
ভাইই উপস্থিত। অথচ, তারা আইনের চোখে পলাতক।
শুধু তা-ই নয়, জোসেফের সাজা যেই রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছিলেন, সেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও একই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।
ইসরায়েলি নজরদারি যন্ত্র ক্রয়
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক : ইসরায়েলি কোম্পানির নজরদারির যন্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
তথ্যচিত্রে
দেখানো হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইরিশ এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে
ইসরায়েলি নজরদারির যন্ত্র কিনছে। অথচ, ইসরায়েলকে বাংলাদেশ স্বীকৃতিই দেয়
না। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে কাজ করা খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান প্রাইভেসি
ইন্টারন্যাশনালের এলিয়ট বেন্ডিনেলি ওই তথ্যচিত্রে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে
ব্যাখ্যা করে জানান যে, ইসরায়েলি ওই যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০-৩০০ মোবাইল ফোনে
নজরদারি করা যাবে। তার ভাষ্য, “আপনি আপনার ফোনে যা করছেন, অর্থাৎ টেক্সট
মেসেজ বা ফোনকল বা যেসব ওয়েবসাইটে আপনি যাচ্ছেন, তার তথ্য এই যন্ত্র দিয়ে
পাওয়া সম্ভব…এই বিশেষ মডেলটি মানুষের যোগাযোগ পালটে দিতেও সক্ষম। অর্থাৎ এর
মাধ্যমে আপনার এসএমএস বার্তা পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে। মানুষের পরিচয়
পর্যন্ত নকল করা যাবে।”
এই চুক্তির অধীনে পিকসিক্স নামক ইসরায়েলি ওই
কোম্পানি ও বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী একটি “নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট”
বা তথ্য প্রকাশ না করার বাধ্যতামূলক চুক্তিতে সই করে।
প্রতিক্রিয়া
আল
জাজিরার তথ্যচিত্রটি প্রকাশ প্রচারিত হওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। বিবৃতিতে প্রতিবেদনকে “মিথ্যা ও
মানহানিকর” উল্লেখ করে বলা হয়, “এই প্রতিবেদন একগুচ্ছ বিভ্রান্তিকর শ্লেষ
আর বক্রোক্তি ছাড়া কিছুই নয়, যা আসলে চরমপন্থী গোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামীর
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু কুখ্যাত ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।”
এছাড়া আন্তবাহিনী জনযোগাযোগ পরিদপ্তর
(আইএসপিআর) থেকে জারি হওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, “দেশের উচ্চপদস্থ
সামরিক কর্মকর্তাগণের বিভিন্ন দাপ্তরিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কার্যক্রমের
ভিডিও ক্লিপ ও ছবি চাতূর্যের সাথে সম্পাদনা এবং অডিও সংযোজন করে এই
প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে৷” এতে বলা আরও বলা হয়, “প্রতিবেদনে মন্তব্যকারীরা
হলেন ডেভিড বার্গম্যান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একজন অভিযুক্ত;
প্রতিবেদনে সামি নামে চিত্রায়িত জুলকারনাইন সায়ের খান সাবেক ক্যাডেট,
মাদকাসক্তির জন্য যিনি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে বহিষ্কৃত এবং
কুখ্যাত নেত্র নিউজের চিফ এডিটর তাসনিম খলিল। অসৎ উদ্দেশ্য এবং কায়েমী
স্বার্থের এসব ব্যক্তিদের যোগসূত্র তাদের অতীত কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্পষ্ট
হয়েছে।” ইসরায়েল থেকে ইন্টারনেট বা মোবাইল নজরদারির সরঞ্জাম ক্রয়ের
অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে আইএসপিআর জানিয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে
ব্যবহারের জন্য হাঙ্গেরি থেকে ওই যন্ত্র কেনা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে
অভিযুক্তদের মধ্যে একমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
সরাসরি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে বলেন, “প্রতিবেদনটি তথ্যভিত্তিক নয়। এটা হলুদ সাংবাদিকতা…
এগুলো সাংবাদিকতার নর্মসের ভেতরে পড়ে না” এবং এতে “দেশবিরোধী একটি
ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি এই
প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ না করলেও, ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে বলেন,
“দেশে-বিদেশে নানাভাবে নানা অপপ্রচার চালানোর প্রচেষ্টা চলছে।” এছাড়া
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল
কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এই
তথ্যচিত্রটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
No comments