তাদের অবিচল লড়াই by মো. আল আমিন

সুজন, টিআইবি, সিপিডি, সিজিএস, মায়ের ডাকসহ নানা সংগঠন গণতন্ত্র, সুশাসন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিল উচ্চকণ্ঠ। এসব করতে গিয়ে তারা হয়েছেন নির্যাতিত। তারপরও হাল ছাড়েননি। চালিয়ে গেছেন লড়াই। বিশেষ করে গত ১৬ বছর তাদের লড়াই ছিল জনতার পক্ষে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে গেছেন-

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন): দেশের সচেতন নাগরিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সুজন। আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে হুমকি, হামলা এবং চাপের  মুখেও নাগরিক ইস্যুতে সরব ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি। শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের নানাচিত্র প্রতিনিয়ত তুলে ধরেছে নাগরিকের সামনে। এতে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়েছে সংগঠনটির। সুজনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হলেন উন্নয়নকর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন, উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে তিনি দেশের সুশীল সমাজের অন্যতম সরব কণ্ঠ। নাগরিক ইস্যুতে কথা বলার কারণে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে হুমকি দেয়া, এনজিও ব্যুরো থেকে হয়রানি করা, তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা সুজন বন্ধ করে দেয়া, সংস্থার অনুদান বন্ধ করে দেয়া এবং ওয়েবসাইট হ্যাক করা, স্বজনদের হয়রানিসহ অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাকে। কিন্তু এসব উপেক্ষা করেই সমাজের প্রয়োজনে কাজ করে গেছেন তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার।

ওদিকে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে তথ্য প্রকাশ করার ফলে সরকারের রোষানলে পড়তে হয় সংস্থাটির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রকাশিত টিআইবি’র প্রতিবেদনকে একপেশে, সরকারবিরোধী, অযৌক্তিক ও গোঁজামিলে ভরা বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বলেন, বিএনপি’র ভাষায় কথা বলে টিআইবি। বিএনপি’র ওকালতি করতেই এই রিপোর্ট। এ ছাড়া টিআইবি’র অন্য প্রতিবেদন নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেছে সরকার। তবে সরকারের চাপের মধ্যেও নিরপেক্ষ তথ্য প্রকাশ করে গেছে সংস্থাটি। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সংস্থাটি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে টিআইবি। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়ারও আহ্বান জানায় তারা। এদিকে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডিবিতে আটক ছয় সমন্বয়কসহ অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি। তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিটির প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
: ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি গবেষণা ও পলিসি ডায়ালগের মাধ্যমে দেশের নীতিনির্ধারণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। বিগত ১৬ বছর শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে নিরপেক্ষ চরিত্র ধরে রেখেছে বেসরকারি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের নেয়া ভুল পদক্ষেপগুলো নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনা থেমে ছিল না। এতে সরকারের রোষানলে পড়তে হয় তাদের। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সিপিডি’র প্রতিবেদনকে নির্জলা মিথ্যাচার বলে আখ্যা দেন। সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও সিপিডি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনতে জরিপ করে সিপিডি। এ ছাড়া খোদ শেখ হাসিনা সিপিডি’র নাম না করে তাদের প্রতিক্রিয়াকে ‘ভালো না লাগা’ পার্টি বলে আখ্যা দেন। বেসরকারি এই গবেষণা সংস্থাটির সম্মাননীয় ফেলো হলেন- বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে গত ২৮শে আগস্ট একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমানও। এ ছাড়া সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, জ্যেষ্ঠ গবেষক ও অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম এবং গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অর্থনীতি নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে সবসময় সমালোচনা করে এসেছে সংস্থাটির এই গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ২০১৪ সালে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তবে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন কোটা সংস্কার ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই নেটওয়ার্কটি সবার দৃষ্টি কাড়ে। চব্বিশের জুলাইতে দ্বিতীয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই প্ল্যাটফরমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৪ই জুলাই একটি সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে হাসিনার অবমাননাকর মন্তব্যের পরে আন্দোলনটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরের দিন, ছাত্রলীগের ও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্মমভাবে হামলা চালায়, ফলে সারা দেশে ছয়জন শিক্ষার্থী নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায়, ছাত্রলীগের সদস্যদের ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়, যার জেরে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়। ১৬ই জুলাই রাতের মধ্যে, ছাত্রাবাসগুলো জোরপূর্বক খালি করা হয়েছিল। ১৭ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ঢাবিতে শিক্ষকদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। হত্যাকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নিন্দা জানিয়ে শত শত অধ্যাপক এতে যোগ দেন। এই প্রতিবাদ ছাত্র আন্দোলনকে আরও জোরদার ও নিপীড়ন মোকাবিলায় সহায়তা করে। বৈঠকের পর সংগঠনটির অধ্যাপকরা স্থানীয় থানা থেকে আটক ছাত্রদের উদ্ধার করেন এবং চিকিৎসা চলাকালীন শীর্ষ ছাত্র নেতাদের দ্বিতীয়বার আটক করার পরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে ২৭শে জুলাই গোয়েন্দা অফিসে যান। ৩১শে জুলাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংগঠনের সদস্যরা একটি সমাবেশে ছাত্রদের গ্রেপ্তার করার জন্য সাদা পোশাকের পুলিশদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়, যার জেরে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২রা আগস্ট দ্রোহযাত্রায় (বিদ্রোহীদের  কুচকাওয়াজ) অংশ নেন ইউটিএন’র  সদস্যরা। যেখানে সিনিয়র সদস্য আনু মুহাম্মদ কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেন এবং হাসিনাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে সরব ছিল।

মায়ের ডাক হলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের প্ল্যাটফরম। গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে প্ল্যাটফরমটি। মায়ের ডাকের অন্যতম সমন্বয়ক হলেন সানজিদা ইসলাম তুলি। যিনি প্ল্যাটফরমটির প্রতিষ্ঠাতা। তার ভাই বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ২০১৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস): বাংলাদেশভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংগঠনটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সংলাপের আয়োজন করে আলোচনায় আসে সিজিএস। বিশ্বের ৭০টি দেশের গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সমরবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। চ্যানেল আই-এর টক শো তৃতীয় মাত্রার জনপ্রিয় সঞ্চালক জিল্লুর রহমান এই সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে সিজিএসের উদ্যোগে বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নিয়ে মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠান করেন জিল্লুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানে আসা জাপানি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেন, আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির কথা আমিও শুনেছি। এতে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যায় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপরই নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় জিল্লুর রহমান ও সিজিএসের কর্মকর্তাদের। তথ্য সংগ্রহের নামে জিল্লুর রহমানের পৈতৃক বাড়িতে যায় পুলিশ। এ ছাড়া জিল্লুর রহমানসহ সিজিএস সাবেক ও বর্তমান তিন কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেখানে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় বিদেশ থেকে অর্থসহায়তা আসে কিনা, টাকা কীভাবে খরচ হয়। অন্যদিকে জিল্লুর রহমানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। এ সময় সিজিএসের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়। তারপরও সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে সিজিএসের গবেষণা থেমে থাকেনি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রদানকারী একটি বেসরকারি সংগঠন। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কর্মকৌশল দিয়ে আসছে। এই কর্মকৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, সালিশ ও মামলার মাধ্যমে আইনি সহায়তা প্রদান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মানবাধিকার গবেষণা, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলার সাহায্যে আইন ও নীতি সংস্কারের প্রয়াস এবং গণমাধ্যম ও নিজস্ব প্রকাশনার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রদান। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী শাসনামলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, বিচারের অপেক্ষায় কারাবাস, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন, বস্তি উচ্ছেদ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বিগত সরকারের নেয়া প্রহসনমূলক আইনগুলোর সমালোচনা করেছে তারা। এতে এনজিও ব্যুরো থেকে হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বন্ধ করে দেয়া হয় বিদেশি অনুদানের অর্থছাড়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট জেড আই খান পান্না।

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস): বাংলাদেশ অধ্যয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাডেমিক, বিশ্লেষক এবং গবেষকদের প্ল্যাটফরম। এই ফোরাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত সমসাময়িক বিষয়ের ওপর গবেষণা, মতামত এবং নীতি-নির্ধারণমূলক আলোচনার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। এফবিএস গঠিত হয় ২০২২ সালে। এরপর থেকেই সুশাসন, অর্থনীতি, দুর্নীতি, মানবাধিকার, নির্বাচন ও সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিনিয়ত ওয়েবিনারের আয়োজন করে আসছে প্ল্যাটফরমটি। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবিনারের আলোচক হিসেবে নিয়মিত মুখ হলেন-আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনির হায়দার, টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, উন্নয়ন ও অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক এবং জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের একাডেমিক, বিশ্লেষক এবং গবেষকরা অংশ নেন প্ল্যাটফরমটির ওয়েবিনারে।   
অধিকার বাংলাদেশভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থা। আদিলুর রহমান খান এবং সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা ১৯৯৪ সালের ১০ই অক্টোবর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে হওয়া গুম-খুনের সঠিক তথ্য প্রকাশ করে হয়রানির শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটির মানবাধিকার কর্মীরা। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজত সারা দেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল। সরকারের বার বার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে অধিকার তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে। যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি। অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে গ্রেপ্তার করা হয় অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে। সংগঠনটির পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালে তাদের বিচার শুরু হয়। ৯ বছর পর ২০২৩ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই দুইজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়। এদিকে মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করার জন্য ২০২২ সালে অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করে দেয় সরকার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা): বাংলাদেশের অন্যতম একটি বেসরকারি আইনজীবী সংগঠন, যা পরিবেশ সংরক্ষণে আইনি সহায়তার প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে বেলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সংস্থাটির হয়ে তিনি পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতায় প্রাণহানির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। অংশ নেন বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও মানববন্ধনে। বর্তমানে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.