ঢাবি’র হলে গণবিবাহের আয়োজন এবং...
জুলাই বিপ্লবের পরে স্বাধীনতা উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা ভোজ ও গণবিবাহের আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ২০শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই বিয়ের সকল খরচ বহন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা। গত ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২ গ্রুপে দেয়া এক পোস্টে এমন কথা জানানো হয়।
তবে নামে গণবিবাহ হলেও পাত্রের ক্ষেত্রে এখানে মানদণ্ড বেঁধে দেয়া হয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, গণবিয়েতে পাত্রী যেকোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও পাত্রকে অবশ্যই জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী হতে হবে। গণবিয়েতে বর-কনেকে কোনো খরচ বহন করতে হবে না।
এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গণবিবাহকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পাত্র-পাত্রী সন্ধানের হিড়িক পড়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের সিভি পোস্ট করছেন। নিজের গুণাগুণ তুলে ধরে কেমন পাত্র বা পাত্রী চান, চাহিদামতো পোস্ট দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই এতে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পরিবারের সম্মতি নিয়ে অনেকে তুলে ধরছেন নিজেদের বায়োডাটা।
জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ নিয়ে চলছে উৎসবের আমেজ। নাম প্রকাশ না করা শর্তে হলটির ২০১৫-১৬ সেশনের এক শিক্ষার্থী মানবজমিনকে বলেন, পড়াশোনা শেষ হয়েছে। বয়স বাড়ছে, বিয়ের জন্য পরিবার থেকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তবে সঠিক পাত্রী খোঁজা, বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবতীয় আয়োজন- এসব বেশ ঝামেলার কাজ। হলের ছোট ভাইদের এই উদ্যোগ সবকিছুর সমাধান করতে পারে। আমি পাত্রী চেয়ে সিভি দিবো। অনেক নারীও ইতিমধ্যে সিভি পোস্ট করেছেন। পছন্দের কাউকে পেলেই শুভ কাজটা সেরে ফেলতে চাই।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক হলে একাধিক বিয়েই সেদিন হতে যাচ্ছে। সাড়া ফেলে দেয়া এমন উদ্যোগ নেয়ার পেছনের কারণও জানিয়েছেন আয়োজকরা। গণবিবাহ আয়োজনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আল আমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নরত এই ছাত্র জানান, বিয়েটা আমাদের সমাজে একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে। এখানে পাত্র চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল বিয়ে করার উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আছে নানা মানদণ্ড। আমরা এসব প্রচলিত প্রথা ভেঙে ফেলতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, দুই পক্ষ রাজি হলে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকলে এবং পরিবারের সম্মতি ও সহযোগিতা থাকলে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বিয়ে করে সুখী হওয়া যায়।
ক্যাম্পাসে আলোচনার তুঙ্গে থাকলেও এ আয়োজন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি হল প্রশাসন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক ড. ফারুক শাহ এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, আপনারা জানেন- ২২ তারিখ থেকে বিশ্বাবিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সামপ্রতিক সময়ে একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। ক্লাস শুরুর আগে মানসিকভাবে তাদের একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার। সেই চিন্তা থেকেই মূলত ক্লাসের জন্য তাদের প্রস্তুত করতে স্বাধীনতা ভোজের ব্যবস্থা করছি। এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজনও থাকবে। দিনটিতে নবীন শিক্ষার্থীদের হলে বরণ করে নেয়া হবে। তাছাড়া সিনিয়র শিক্ষার্থী যারা হল থেকে বিদায় নেবে তাদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের মতোই। তিনি বলেন, তবে এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের গণবিবাহের উদ্যোগ আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে এখনো কেউ অনুমতি চায়নি। অনুমতি চাইলে হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা সঠিক যুক্তি তুলে ধরতে পারলে প্রশাসন বিবেচনা করবে বলেও তিনি জানান।
তবে অনুমতির ব্যাপারে আশাবাদী আয়োজকরা। এ বিষয়ে আল আমিন বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে হল প্রশাসনের কাছে এখনো আবেদন করিনি। সঠিকভাবে এই আয়োজনের উদ্দেশ্য তুলে ধরলে হল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
No comments