প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করল জাতীয় নাগরিক কমিটি

সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলের পেশ করা আট দফা বাস্তবায়নে সারা দেশে জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু করবেন দলের আহ্বায়করা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রথম অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির আব্দুল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল নই, তবে আমাদের উদ্যোগ রাজনৈতিক। গত জুলাইয়ে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে সেখানে হাজারের কাছাকাছি ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সে জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ।

লিখিত বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিণত হয় সারা দেশের জনগণের মুক্তির আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয় ফ্যাসিস্ট শক্তি। এই আন্দোলনে হাজারের কাছাকাছি মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের এই সাহসী আত্মত্যাগই বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করছি। কিন্তু এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টের যে, এতদিন পরও আমাদের মধ্যে কোনো ইস্যুতেই জাতীয় ঐক্য নেই। সবকিছু নিয়েই আমরা দ্বিধা-বিভক্ত। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো প্রাথমিক রাষ্ট্রীয় কাজও এখানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর সুযোগ নেয় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। এ কারণে স্বাধীনতার এত দিন পরও আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতা হস্তান্তর হবে কী প্রক্রিয়ায় তা নিয়েই এতদিনে কোনো ঐক্যে পৌঁছানো যায়নি। আমাদের এই নাগরিক কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, জনগণসহ সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতীয় ঐক্য তৈরি করা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার এখনো বিলোপ হয়নি। ফ্যাসিবাদ একটি সরকার নয়। এটি একটা ব্যবস্থা, যা বিভিন্ন আইন, প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক চর্চার মাধ্যমে টিকে থাকে। আমরা সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চাই। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরিতে কাজ করবে নাগরিক কমিটি। এমন একটি বন্দোবস্ত আমরা তৈরি করতে চাই, যাতে সামনের দিনে কোনো সরকারপ্রধানকে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যেতে না হয়।

ঘোষিত আট দফা বাস্তবায়নে অচিরেই নাগরিক কমিটি সারা দেশে জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু করবে জানিয়ে আত্মপ্রকাশের আট দফা তুলে ধরে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এগুলো হলো- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা; ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা; রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা; বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা; দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা; জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে নেওয়া; গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। ছবি : সংগৃহীত
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। ছবি : সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.