তারা এখন কী করছেন? by কিরণ শেখ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টোপে পা দিয়েছিলেন বিএনপি’র তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীরপ্রতীক) ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক)। খেতাবপ্রাপ্ত এই দুই মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিক দল ও রাজনৈতিক জোটের বিপরীতে গিয়ে চরম সমালোচিত হয়েছিলেন। নির্বাচন করে এমপি হয়েও খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। নির্বাচনের ঠিক সাত মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের সঙ্গে এই দুই সাবেক এমপিও বেকায়দায় পড়েছেন। রাজনীতির মাঠছাড়া হয়েছেন। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও আছেন শঙ্কায়। সাবেক দুই এমপি’ মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপে এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাদের একজন নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের বাসায় থাকছেন না। অন্যজন ডিওএইচএস এর বাসায় থাকলেও বাইরে বের হচ্ছেন না।

বিএনপি’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত বছরের ২৮শে অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশেও অংশও নেন। সেদিন পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় তাকে আসামিও করা হয়।

গত ৫ই নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের ২৪ দিনের মাথায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর তার ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। পরদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা মনোনয়ন ফরমটির ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। ৩০শে নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার কথা জানান তিনি। জানান, বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান।

শাহজাহান ওমর প্রথম সংসদ সদস্য হন ১৯৭৯ সালে। এরপর বিএনপি থেকেই ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের দুটি নির্বাচন এবং ২০০১ সালে ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ সালে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে যান। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালের ১০ই অক্টোবর থেকে ছয় মাস ভূমি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এরপর হন আইন প্রতিমন্ত্রী। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনসম্মুখে আসেননি শাহজাহান ওমর। তিনি দেশেই আছেন। গ্রেপ্তার এবং জনরোষের ভয়ে তিনি নিজ বাসাতেও থাকেন না। কোথায় আছেন সে বিষয়টি বলতে রাজি হননি তিনি। মানবজমিনকে শাহজাহান ওমর বলেন, এই মুহূর্তে কথা বলা ঠিক হবে না। আর এই সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) ভালো চালাচ্ছে।

ওদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম জোট ১২ দল থেকে বের হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে হাতঘড়ি প্রতীকে বিজয়ী হন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ২০১৮ সালে বিএনপি ভোটে এলে চট্টগ্রামের একটি আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি। তবে জিততে পারেননি।

পরে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়ার পর এই জোটের ১২ শরিক মিলে যে জোট গড়ে তোলে, তাতে যোগ দেয় ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি। এই জোট বিএনপি’র সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘একদফা’ দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়। বিএনপি’র সঙ্গে মিল রেখে যুগপৎ কর্মসূচিও পালন করতে থাকে। চলমান হরতাল ও অবরোধ তাদেরও কর্মসূচি ছিল। গত ১৫ই নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি’র পাশাপাশি তা প্রত্যাখ্যান করে ১২ দলীয় জোটও। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হতে আটদিন বাকি থাকতে চমক দেন ইবরাহিম। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের। সংবাদ সম্মেলনে ছিল বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দুই দল জাতীয় পার্টি (মতিন) ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগও।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছিল, তার একটি ছিল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। সে সময় ‘কিংস পার্টি’ নামে যে কয়টি দল আলোচনায় আসে, তার একটি ছিল এই দল। নবম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে অংশ নিয়ে প্রচারে বেশ মনও দিয়েছিলেন ইবরাহিম। তবে জামানত রক্ষার মতো ভোট পাননি তিনি। এরপর বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে জোটে চলে যায় তার দল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সরকার পতনের পর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও জনসম্মুখে আসেনি। তিনি এখন বাসা থেকেই বের হন না। নেই দলীয় কোনো কার্যক্রমও।

No comments

Powered by Blogger.