গণহত্যার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান: জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান দলের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন টিমের আমন্ত্রণে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার কার্যালয় এশিয়া-প্যাসিফিক সেকশনের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেন। প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক সেকশনের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা লিভিয়া কসেনজা এবং আলেকজান্ডার জেমস আমির এই জুঙদি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ছাত্র-জনতার মহাবিল্পবকে ব্যর্থ করার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেটাও তাদের অবহিত করেছি। সে সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয় সাধারণ ছাত্র-জনতার উপর। মনে হয়েছিল, বিদেশীদের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজ জনগণের উপর এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। সেখানে দেড় বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আমরা এটাকে বলেছি, জেনোসাইড বা গণহত্যা। এটাকে জেনোসাইড হিসেবে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, বিচারের জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কতিপয় আইন সংশোধনের মাধ্যমে ক্রাইম এগেইনিস্ট হিউম্যানিটি এই নামে ট্রাইব্যুনাল করে তদন্ত ও সঠিকভাবে এর বিচার নিশ্চিত হতে পারে, সেভাবে বাংলাদেশকে তারা যেন সহযোগিতা করে সেই বিষয়ে আমরা অনুরোধ করে আসছি।
ডা. তাহের বলেন, তারা এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে। বলেছে, এই সব বিষয়ে জানার জন্য তারা এসেছেন। এসব নিয়ে তারা বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে। ফ্যাক্টসগুলো নিয়ে তারা রিপোর্ট দিবে। এরপর বিচারে সহযোগিতা, আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞরা আসবেন। তারা বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোচ্চভাবে সহযোগিতা করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী মাসে মূল টিমটি আসবে। টেকনিক্যাল বিষয়ে তারা সরকারের সঙ্গে মতবিনিময় করবে, তদন্ত শুরু হবে। তারা মূলত আসবে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা তাদের বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব বিচারকার্য শুরু করা দরকার। বিচার যেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়। প্রয়োজনে বর্তমান আইন সংশোধন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে হবে।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশে ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানুষ নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই গণবিপ্লবের সময় সরকার যে হত্যা, জুলুম, নির্যাতন করেছিল, সেবিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম বাংলাদেশ সফর করছে। তারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে, গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে। তারা আগামী শনিবার চলে যাবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকেও তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এসময় কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা মূলত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম। এরপর মূল টিম আসবে।
তিনি বলেন, আমরা মূলত বিগত স্বৈরাচারী সরকারের এ দেশের জনগণের উপর নানাবিধ অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড করেছে, এসব বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিল, আমরা তাদের তথ্য দিয়েছি। তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার ১৯৭২-৭৫ সালে ক্ষমতায় ছিল। তখন তারা ৩০ হাজারের মতো মানুষ হত্যা করেছিল। এবার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিডিআরের ঘটনায় ৫৭ সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও স্বৈরাচারী জনবিচ্ছিন্ন সরকার জড়িত ছিল। রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে যে গণহত্যা করেছিল, আমরা সেটার কথাও তাদের বলেছি।
No comments