বাংলাদেশ ব্যাংক: অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে by এমএম মাসুদ

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তার একটি তালিকা নবনিযুক্ত গভর্নর আহসান এইচ মুনসুরের দপ্তরে দেয়া হয়েছে। অনৈতিক কাজে জড়িত এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত করে শাস্তি চাওয়া হয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢাকা, চট্টগ্রাম শাখা ও খুলনা শাখাসহ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ একটি প্রতিবেদনে দুর্নীতিবাজ এসব কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের লুটপাটের ফিরিস্তি উঠে এসেছে। সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারে ছত্রছায়ায় লুটপাটের সিন্ডিকেট গড়েন এসব কর্মকর্তা। এছাড়া দেশের বাইরের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য পাচারসহ নানা কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গত দেড় দশকে সৎ, বিশ্বস্ত এবং হাইলি টেকনিক্যাল কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা হয়েছিল এবং শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক হারায় নিজস্ব ঐতিহ্য।
এ বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতকে সাজানোকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

প্রতিবেদনে দুর্নীতিবাজ কর্মকতাদের আমলনামা। তালিকায় আছেন যারা:

নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক: বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। নগদের সকল অনিয়ম ও মানিলন্ডারিংয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয় ও আইসিটি মন্ত্রী পলকের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট- ‘বিনিময়’, আইডিটিপি’সহ বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়েছেন, যা কোনো কাজে না আসলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং বিদেশ ট্যুর পেয়েছেন। এফএসএসএসপিডি’র পরিচালক থাকাবস্থায় বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের অনুকূলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ ছাড়করণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। ওই অর্থে ৪ কোটি টাকায় ধানমণ্ডি লেক-এর পাশে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন।

নির্বাহী পরিচালক মো. আনারুল ইসলাম: দুর্নীতিবাজ সাবেক ডিজি এস কে সুর চৌধুরী ও ব্যাংক খেকো পিকে হালদার-এর প্রত্যক্ষ সহযোগী। গ্রামীণ ব্যাংকের কথিত দুর্নীতি তদন্তের আদিষ্ট প্রতিবেদন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ২০২১-২০২৩ সাল পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট অব অফ সাইট সুপারভিশনের দায়িত্বে থাকাকালে এস আলম গ্রুপের সকল ঋণ জালিয়াতিতে সহযোগিতা করেছেন এবং বৃহৎ ঋণ অনুমোদন করেছেন। এস আলম ভেজিটেবল অয়েল মিলসসহ গ্রুপভুক্ত ৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণের এনওসি প্রদান করেছেন। এ ছাড়া অবৈধ অর্জিত অর্থে তিনি গাজীপুরে রিসোর্ট ও বাংলো বাড়ি করেছেন।

নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়: বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে ক্ষতিকর ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি দেবদুলাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য তিনিই দেশের বাইরে পাচার করতেন। তিনি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দার এজেন্ট হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি অপর নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক’কে সঙ্গে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় ও আইসিটি মন্ত্রী পলকের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট ‘বিনিময়’ হাতিয়ে নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসাইন চৌধুরী: বিএফআইউ’র পরিচালক থাকাকালে তিনি এস আলম, সাদ মুসা-সহ সকল শীর্ষ অপরাধীর অনিয়ম-সম্বলিত অসংখ্য মামলা গায়েব করেছেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রধান শাখায় কুলিয়ারচর সি ফুড-এর বিপুল পরিমাণ রপ্তানি প্রণোদনা জালিয়াতির মামলাও তিনি গায়েব করেছেন।

নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম: এস আলম কর্তৃক ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের বোর্ড দখলের নেপথ্যের কারিগর তিনি।

খুলনা অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক এস এম হাসান রেজা: ডিএফইআই’র পরিচালক থাকাকালে গ্রুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য জালিয়াতি গোপন করেছেন। খুলনা অফিসের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি তার আদেশে হতো। শেখ হেলালের ক্ষমতার দাপটে তিনি অত্যন্ত ক্ষমতাবান।

পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান: এস আলম গ্রুপের আশির্বাদ নিয়ে চট্টগ্রাম অফিসে আগমন এবং পরিচালক (সুপারভিশন) হিসেবে পদায়ন লাভ করেন। পরিদর্শন প্রতিবেদন তার মনমতো না হলে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তা পরিবর্তন করতে পরিদর্শন দলকে বাধ্য করেছেন। এ কাজে তিনি সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত পরিচালকদেরকে (বিশেষ করে শোয়াইব চৌধুরী, শংকর কান্তি ঘোষ) ব্যবহার করেন। ফরেন এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন কেস (বিশেষ করে রি-ফাইন্যান্স, ডিসকাউন্টিং) অনুমোদন করাতে তিনি নির্মলেন্দু পারিয়াল ও মো. সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরীকে ব্যবহার করতেন।

অতিরিক্ত পরিচালক মো. শোয়াইব চৌধুরী: পরিদর্শন প্রতিবেদনে গুরুতর অনিয়ম উল্লেখ করলেও কখনো ক্লাসিফিকেশন ও প্রভিশনিং করেননি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি প্রদান, বদলি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম অফিসের পোস্টিংও নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্টেশন সিনিয়রিটি অনুযায়ী তার পোস্টিং চট্টগ্রাম অফিসের বাইরে হওয়ার কথা থাকলেও তাকে শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে এস আলম গ্রুপের জন্য চট্টগ্রাম অফিসেই রাখা হয়। চট্টগ্রাম অফিসের সাবেক অফিসার বোরহান উদ্দিন সঞ্চয়পত্রের সূত্রে নগদ ১৩ লক্ষাধিক টাকা ঘুষসহ ধরা পড়লেও সে সময় নির্বাহী পরিচালক জহুরুল হুদার মাধ্যমে ছেড়ে দিতে ভূমিকা রাখেন তিনি।

অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুল আহাদ: চট্টগ্রাম অফিসে নির্বাহী পরিচালকের পিএ হিসেবে বহাল থাকায় এস আলমের খাস দালাল হিসেবে কাজ করে সুবিধা নিতো। কোনো পরিদর্শন প্রতিবেদন এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকের বিরুদ্ধে গেলে তিনি সেটার ছবি তুলে এস আলম গ্রুপের লোক (আকিজ, মিফতা) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা এস আলমের অন্যান্য দালালদের নিকট প্রেরণ করতেন। নিজের স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়দের এস আলম গ্রুপের ব্যাংকে চাকরি দিয়েছেন। এজেন্ট হিসেবে এস আলম গ্রুপের লোকদের সঙ্গে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

অতিরিক্ত পরিচালক নির্মলেন্দু পারিয়াল, যুগ্ম পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী ও সৈয়দ সাইফুর রহমান: তারা বিভিন্ন ধরনের উপহার ও সুবিধাদি প্রাপ্তি ও প্রেস্টিজিয়াস পোস্টিং পাওয়ার জন্য আব্দুল আহাদ ও শোয়াইব চৌধুরীসহ নির্বাহী পরিচালকদের ফরমায়েশ মোতাবেক ফরেন এক্সচেঞ্জ বিষয়ক মামলাগুলো অনুমোদন দিয়েছেন (বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের রি-ফাইন্যান্স, ডিসকাউন্টিং)। কোনো কর্মকর্তা বিধি বহির্ভূত কাজ না করতে চাইলে তাকে পিএমএস এর ভয় দেখিয়ে কাজ করতে বাধ্য করতেন। এদের মধ্যে সৈয়দ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের অন্যতম দুর্নীতিবাজ ডিজিএম মোহা. সোহরাব হোসাইনের (অবসরের পরে বর্তমানে এস আলম গ্রুপের দালালির পুরস্কার হিসেবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত) ডানহাত ছিলেন এবং এস আলমের জামাতা বেলালের কোম্পানি ইউনিটেক্স গ্রুপের সিএফও আরিফের সঙ্গে যুগ্ম পরিচালক রেজাউল করিমের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে দেন।

যুগ্ম পরিচালক রেজাউল করিম: রেজাউল অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল আহাদের আত্মীয়। তার শ্বশুর চট্টগ্রাম অফিসের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক কাশেমসহ তার স্ত্রী, ভায়রা এবং শ্যালিকাসহ অনেক নিকটাত্মীয় এস আলমের দালালি করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। এস আলমের জামাতা বেলালের কোম্পানি ইউনিটেক্স গ্রুপের সিএফও আরিফ এবং এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসে বিভিন্ন লবিং চালাতেন। এরই সূত্র ধরে এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের নামে ক্রয়সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র উদঘাটিত হওয়ার পরেও তিনি বিধি লংঘন করে কোনো সুদ কর্তন না করে পূর্ণ টাকা প্রদান করেন।

সহকারী পরিচালক শান্তনু শাওন: শাওন সহকারী পরিচালক হলেও চট্টগ্রাম অফিসে ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন নির্বাহী পরিচালকের পিএ-এর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুল আহাদের অন্যতম আশীর্বাদপুষ্ট, যার মাধ্যমে আহাদ আইবিবি’র কার্যক্রম ইচ্ছেমাফিক তার নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয়া ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করেন।

পরিচালক চৌধুরী লিয়াকত আলী: সাবেক ডিজি মনিরুজ্জামানের সকল অপকর্মের মূল দোসর লিয়াকত। তিনি অসংখ্য বৃহৎ জালিয়াতির মামলা গোপন করে ফেলেছেন।

পরিচালক আবু হেনা হুমায়ূন কবীর: সকল বৃহৎ শিল্প গ্রুপের বেনিফিসিয়ারি কবীর। তাদের সকল অভিযোগ থেকে সহজ নিষ্পত্তি দিতে তাকে এফআইসিএসডি’তে পদায়ন করা হয়েছে।

পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ও মোহাম্মদ মহসিন হোসাইনি: এই দুইজন বসুন্ধরা, প্রাণ-আরএফএল, সিটি ইত্যাদি গ্রুপকে বিপুল পরিমাণ ওভারসিজ ইনভেস্টমেন্ট করার সুযোগ প্রদান করেছেন। এস আলম, সাদ মুসা, থার্মেক্স, সামিট পাওয়ার, ওরিয়ন’সহ সকল শীর্ষ অর্থপাচারকারীর সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া মহসিন এস আলমের ছেলের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছেন। ওই বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য তিনি বিএফআইইউ’র নামে চট্টগ্রামে ট্রেনিং প্রোগ্রাম প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের খরচে ভ্রমণ করেছেন।

পরিচালক ইসতেকুমাল হোসাইন: সাবেক গভর্নরের আমলে ৪২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকে বিতরণের অন্যতম শীর্ষ কুশীলব তিনি। এ ছাড়া ঋণ ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট হতে এস আলমের ব্যাংকগুলোতে লিকিউডিটি সাপোর্ট তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দেয়া হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য পাচার করতেন। ২০১৪ সালে এডি নিয়োগে প্যানেলভুক্তদের তথ্য প্রকাশ করে চাকরিচ্যুতির পর্যায়ে গিয়েছিলেন। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে তখন রক্ষা পান।

অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম নুরুন্নবী: বিএফআইইউ’তে থাকা অবস্থায় সাবেক ডিজি মাসুদ বিশ্বাস এবং রাজী হাসানের ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে তাদের আস্থাভাজন ছিলেন। বর্তমানে এফআইসিএসডি’তে বিভিন্ন ব্যাংকের দুর্নীতি আড়াল করার কাজে লিপ্ত রয়েছেন।

অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম মহিউদ্দিন: অত্যন্ত ক্ষমতাবান এই কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকে সকল নষ্ট চক্রের কমন বেনিফিসিয়ারি। তিনি প্রতিবাদী এবং সৎ কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলি করে থাকেন। পরিদর্শনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ফোন করে তিনি পরিদর্শনকে প্রভাবিত করতেন। সিনিয়ররাও ভয়ে থাকতো।

অতিরিক্ত পরিচালক মো. সদরুল মুক্তাদির: তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অসংখ্য কর্মকর্তার পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে ম্যানেজমেন্ট বরাবর উপস্থাপন করে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করেছেন।

যুগ্ম পরিচালক মো. রোকন উজ জামান: দেশের চাঞ্চল্যকর সব মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তে সাবেক দুই ডিজি’র আমলে এই রোকনকে নিয়োজিত করা হতো। তারপর তিনি ‘উপরের নির্দেশে’ অধিকাংশ মামলা গায়েব করে দিতেন এবং অবশিষ্ট সকল মামলায় মূল দোষীকে আড়াল করেছেন।

অতিরিক্ত পরিচালক শওকত আলী ও অতিরিক্ত পরিচালক শংকর কান্তি ঘোষ, যুগ্ম পরিচালক মেহেদী হাসান ও সুনির্বান বড়ুয়া, মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও প্রিটুল বড়ুয়া: তারা ডিবিআই-৪ এ কর্মকালীন সময়ে বিভিন্ন সময়ে এস আলম গ্রুপভুক্ত ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করে বেনামি ঋণ সৃষ্টিতে প্রশ্রয় দিয়েছেন, অনিয়ম লুকিয়েছেন, বিনিময় গ্রহণ করেছেন ও সৎ কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিয়েছেন। তারা নিয়ম মেনে ঋণ ক্লাসিফাই করতে দেননি। তারা সিন্ডিকেটের ফরমায়েশি পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে মেহেদী হাসান পুরস্কার হিসেবে নিজ স্ত্রীর জন্য ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চাকরিও বাগিয়ে নিয়েছেন।

যুগ্ম পরিচালক মো. জিয়া উদ্দিন বাবলু: এস আলম গ্রুপের ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে তিনি আব্দুল আহাদ-শোয়াইব চৌধুরী সিন্ডিকেটের গ্রিন সিগনাল পেলে উপস্থাপন করতেন।

যুগ্ম পরিচালক রুপেশ বড়ুয়া: আব্দুল আহাদ, শোয়াইব চৌধুরী সিন্ডিকেটের অপরিহার্য হওয়ায় তাকে ডিবিআই হতে ডিএবি-তে ট্রান্সফার অর্ডার করার পরেও তা বাতিল করা হয়েছে। এস আলম গ্রুপভুক্ত বাংকের পাশাপাশি ইউসিবিএল খাতুনগঞ্জ শাখার বিগত কুইক সামারি রিপোর্ট আব্দুল আহাদ, শোয়াইব চৌধুরী সিন্ডিকেটের পছন্দসই হওয়ায় তিনি তার স্ত্রীর জন্য একটি চাকরিও বাগিয়ে নিয়েছেন।

যুগ্ম পরিচালক জোবাইদুল ইসলাম: তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আব্দুল আহাদ ও শোয়াইব চৌধুরীকে প্রটেক্ট করেছেন। গত ৫ই আগস্টের পর আব্দুল আহাদ ও শোয়াইব চৌধুরীকে ট্রান্সফারের দাবি উঠলে তিনি তার সর্বোচ্চ সামর্থ ব্যবহারপূর্বক নগ্নভাবে তা ঠেকাতে সচেষ্ট হন এবং দাবি উত্থাপনকারী কর্মকর্তাদের সি/ডি ক্যাটাগরির কর্মচারী দ্বারা পেটানোর হুমকি প্রদান করেছেন।
যুগ্ম পরিচালক আবু হোসাইন মো. জামশেদ উদ্দিন ও অনির্বাণ চাকমা, উপ-পরিচালক রুবেল চৌধুরী ও

খোরশেদুল আলম: এদের মাধ্যমেই এস আলম গ্রুপের ঋণ ও বেনামি ঋণ রয়েছে- এমন শাখাগুলো পরিদর্শন করানো হয়। সবচেয়ে খারাপ ঋণ আছে- এমন ব্যাংক শাখা পরিদর্শনপূর্বক সবচেয়ে ভালো রিপোর্ট দেয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে একটা নীরব প্রতিযোগিতাও বিদ্যমান ছিল। ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার ডিসেম্বর/২০২৩ ভিত্তিক (কুইক সামারি) পরিদর্শন করার প্রতিযোগিতায় আবু হোসাইন মো. জামশেদ উদ্দিন জয়লাভ করে আব্দুল আহাদ ও শোয়াইব চৌধুরী সিন্ডিকেট তথা এস আলম গ্রুপের মনোনীত নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হন।

No comments

Powered by Blogger.