সাংবাদিকতা কার স্বার্থে by মাহমুদুল হক আনসারী

সংবাদ ও সাংবাদিকতা অবশ্যই জনস্বার্থে। সংবাদ যারা সংগ্রহ করেন, তারা সাংবাদিক। আর যে পত্রে সংবাদ প্রচার করা হয় সেটি সংবাদপত্র। সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সংবাদপত্র সমাজের আয়না। রাষ্ট্রের ভালোমন্দ দিক তুলে আনেন সাংবাদিকেরা। সাংবিধানিকভাবে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সংবাদপত্রের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও দুর্নীতি দুটোই জনসমক্ষে প্রকাশ পায়। দেশ-বিদেশে ঝুঁঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে হলেও সাংবাদিকেরা এ পেশাকে জাতির স্বার্থে অব্যাহত রেখেছেন। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বহু সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হচ্ছেন। বর্তমান বিশ্বে আধুনিকতার চরম উৎকর্ষের পরিবেশেও এ নির্যাতন কমছে না। সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হচ্ছেন কখনো রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে, কখনো রাজনৈতিক ক্যাডারদের কবলে পড়ে, আবার কখনো মাস্তান, ভূমিদস্যু, জলদস্যু, মাদক ও চোরাকারবারিদের হাতে। ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্নীতির প্রতিবেদন অথবা বস্তুনিষ্ট সংবাদ তাদের ব্যথিত করলে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে নেমে আসে মামলা-হামলা, হুমকি ও নির্যাতন। তথ্যপ্রযুক্তির এ সমাজে কোনো তথ্য গোপন করে রাখার উপায় নেই। অর্থাৎ যেকোনোভাবেই তথ্য বেরিয়ে আসবেই। সঠিকভাবে তথ্য-উপাত্ত পেলে সে ক্ষেত্রে সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি অথবা প্রচার করতে দোষের কী? সাংবাদিক ও মিডিয়া সংবাদ প্রচার করলে অনেক সময়ে কারো না কারো গায়ে তো লাগবেই। তবুও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা থেমে থাকতে পারে না। সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ঘটনার অভিযোগ বিভিন্ন সেক্টরের বিরুদ্ধে ওঠে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, বরিশালে ডিবিসি ক্যামেরাপারসন সুমন হাসানকে স্থানীয় গোয়েন্দা পুলিশ অমানষিকভাবে নির্যাতন করেছে। তিনি তার একজন নিকটাত্মীয়ের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। পুলিশের সাথে তার কিছু কথাকাটাকাটি হয়। এতে পুলিশ দলবদ্ধভাবে তার ওপর চরম নির্যাতন চালায়। চট্টগ্রামে তরুণ সাংবাদিক আফসার উদ্দিন লিটন সাপ্তাহিক চাটগাঁ সংবাদের প্রতিবেদকরূপে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারি কিছু কর্মকর্তার হাতে হেনস্তা হন বলে জানা গেছে। নগরীর কিছু ভূমিদস্যুর অব্যাহতভাবে পাহাড় কেটে সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণে কয়েকজন সাংবাদিককে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। এসব ভূমিদস্যু প্রশাসনের ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এভাবে পাহাড় ও পরিবেশকে ধ্বংস করছে। সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়ায়? কার কাছে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের নিরাপত্তা থাকবে? মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার, জনগণের অধিকার কে দেখবে? সমাজের তৃণমূলের চিত্র সাংবাদিক সমাজ তুলে না আনলে এ দায়িত্ব কারা পালন করবেন? জাতির বিবেক ও সমাজের আয়না হিসেবে দেখা হয় সংবাদপত্রকে। তাহলে কেনই বা বারবার সাংবাদিককে হয়রানি করা হবে? অবশ্যই এ ধরনের সংবিধান বিরোধী অপরাধ বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সংবাদ ও সাংবাদিকবান্ধব বক্তব্য, আর ক্ষমতায় থাকলে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রকে দমন নিপীড়ন আর নির্যাতন নীতিহীনতার নির্লজ্জতা মাত্র। রাষ্ট্রের কর্তাদের কথা ও কাজে মিল চায় সাংবাদিক সমাজ। স্বাধীনভাবে এ পেশার দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে কেন? যেকোনো পরিস্থিতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সংবাদকর্মীকে অবশ্যই প্রশাসনকে সাহায্য করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনের সব ধারার আশু বাস্তবায়ন চাই। সাংবাদিক নির্যাতন, মামলা-হামলা এবং এ ধরনের অপরাধের সাথে যারা সম্পৃক্ত অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি চায় জনগণ। তবেই দেশে আইনের শাসন অব্যাহত থাকবে। মনে রাখতে হবে, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক নির্যাতন করে কখনো কোনো শাসক বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক
mh.hoqueansari@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.